নমষ্কার উৎপত্তির ইতিবৃত্ত
বোধিসত্ত্বগণের বুদ্ধত্ব প্রাপ্তি অবিচলত স্থান বুদ্ধগয়া মহাবোধিদ্রুম- মূলে আমাদের শক্যসিংহ সিদ্ধার্থ বুদ্ধত্ত্ব লাভের পর দিবস “সাতগিরি” নামক যক্ষ, অসুরগণের অধিপতি রাহু চারিদিক্পাল মহারাজ, দেবরাজ ইন্দ্র এবং সহস্পতি মহাব্রহ্মা তাঁহার নিকট উপস্থিত হইয়া প্রত্যেকে এক একটি শব্দ উচ্চারণ করিয়া বন্দনা করিয়াছিলেন। এখানে তাহার সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত দেওয়া হইল।
(১) নরকগামী প্রাণিগণকে নরকের পথ হইতে ফিরাইয়া নির্বাণের দিকে অগ্রসর করান, এই অর্থে নরকের ‘ন’ এবং ত্রিলোক বাসীর ভয়হীন মোক্ষপুরে প্রবেশ করাইয়া অমিত সুখের ভাগী করান, এই অর্থে মোক্ষের ‘মো’ এই অক্ষরেদ্বয়ের সংযোগে ‘নমো’ শব্দ উচ্চারণ করিয়া সতাগিরি যক্ষ প্রথমে বুদ্ধকে বন্দনা করেন।
(২) দীপঙ্কর বুদ্ধের পাদমূলে সুমেধ তাপসের বুদ্ধত্ব প্রার্থনার পর হইতে সর্ব্বজ্ঞতা জ্ঞান লাভ অবধি লক্ষাধিক চারি অসংখ্য কল্প যাবৎ তণ্হ [তৃষ্ণা] সমূহ বিনাশ করিতে করিতে আসিয়াছেন, এই অর্থে তণ্হার আদি অক্ষর ‘ত’ এবং অসত্য ত্যাগ করিয়া সত্যপ্রিয়, সত্যবাদী, সারবাদী এবং সারভাষী হেতু, এই অর্থে ‘স্স’ এই অক্ষরদ্বয়ের সংযোগে ‘তস্স’ শব্দ উচ্চারণ করিয়া রাহু বুদ্ধকে বন্দনা করিয়াছিলেন।
(৩) বুদ্ধ কাম, ক্রোধ, মোহ ও তৃষ্ণাদি সর্ববিধ পাপ ভগ্ন করিয়াছেন। এই অর্থে বুদ্ধের সর্বশ্রেষ্ট উপাধি ‘ভগবান’। তদ্ধেতু চারিদিকপাল মহারাজ তথাগতকে ‘ভগবতো’ বলিয়া বন্দনা করিয়াছেন।
(৪) বুদ্ধ লোভ, দ্বেষ, অজ্ঞানতা, অহঙ্কার, ভ্রান্ত ধারণা, সন্দেহ, আলস্য, চঞ্চলতা, পাপে নির্লজ্জতা ও নির্ভয়তা এই দশবিধ অরিকে হত অর্থাৎ বিনাশ করিয়াছেন। এই অর্থে দেবরাজ ইন্দ্র বুদ্ধকে ‘অরহতো’ বলিয়া বন্দনা করিয়াছেন।
(৫) বুদ্ধ নিজেই সকল ধর্ম ও সকল বিষয় সম্যকরূপে অবগত হইয়াছিলেন। এই অর্থে সহস্পতি মহাব্রহ্মা ভগবানকে ‘সম্মাসম্বুদ্দস্স’ বলিয়া বন্দনা করিয়াছিলেন।
নমষ্কারের প্রকারভেদ
নমষ্কার চার প্রকার- উৎকটিক, অঞ্জলী, দণ্ডবৎ ও পঞ্চাঙ্গ নমষ্কার।১। উৎকটিক নমষ্কারঃ দুই পায়ের গোড়ালির উপর পাঁদ রাখিয়া সোজাভাবে বসিয়া মাথা নীচু করত দুই হাত কপালে লাগাইয়া নমষ্কার “উৎকটিক নমষ্কার”।
২। অঞ্জলী নমষ্কারঃ দুইহাত জোড় করিয়া লাগাইয়া, মাথার সমান উচ্চে তুলিয়া বা বুকের কাছে রাখিয়া দাঁড়াইয়া নমষ্কার করাকে “অঞ্জলী নমষ্কার” বলে।
৩। দণ্ডবত নমষ্কারঃ দণ্ডের মত লম্বা হইয়া ভূমিতে উপুড় হইয়া শুইয়া নমষ্কার করার নাম “দণ্ডবত নমষ্কার”।
৪। পঞ্চাঙ্গ নমষ্কারঃ দুই হাত, দুই জানু ও মাথা এই পাঁচ অঙ্গ ভূমিতে লাগাইয়া নমষ্কার “পঞ্চাঙ্গ নমষ্কার”। ইহারই নাম অভিবাদন। ইহাকে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত বা নমষ্কার বলিয়া সাধারণ কথায় বলে। কারণ এই নমষ্কার করিবার সময় দুই পায়ের আগা, দুই জানু, দুই হাত, নাকের ডগা ও কপাল এই অষ্ট অঙ্গ ভূমিতে স্পর্শ করে।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।