হৃদয়ের দরজা খুলে দিন (পর্ব-৫৪) একাদশ অধ্যায়


একাদশ অধ্যায়: দুঃখ আর যেতে দেওয়া


যেমন, একজন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালক আমাকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এক কবরের কথা বলেছিল যা মাটির তৈরি একটি গর্তে অবস্থিত। তারা কয়েকবার এটা ঘটতে দেখেছে যে সেই কবরে কফিন নামানোর পরপরই ঝমঝম বৃষ্টি নামে, পানি বেয়ে জমা হতে থাকে গর্তের মধ্যে। প্রিস্ট তার প্রার্থনা বলতে বলতেই কফিনটা গর্ত থেকে পুরোপুরি ভেসে ওঠে! পার্থে একজন যাজক ছিল যে তার কাজের প্রথমেই অসাবধানতাবশতঃ ডেস্কের সবগুলো সুইচের উপর ঝুঁকে পড়েছিল। হঠাৎ করে তার বাইবেল পাঠের মাঝখানে পর্দার আড়ালে থাকা কফিনটা নড়তে শুরু করল। মাইক্রোফোনের সংযোগ কেটে গেল আর দ্য লাস্ট পোস্টের বিউগলের সুর পুরো গির্জা জুড়ে প্রতিধ্বনিত হলো। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মৃত ব্যক্তি একজন শান্তিবাদী ছিল।

একজন বিশেষ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পরিচালকের কৌতুক বলার অভ্যাস ছিল। আমরা শববাহী মিছিলের আগে আগে হাঁটতাম কবরস্থানের দিকে। আর সে আমাকে কৌতুক শোনাতো। প্রত্যেকটা কৌতুকের শেষ লাইনে, যেগুলো ছিল খুবই মজার, সে কনুই দিয়ে আমার পাঁজরে খোঁচা মেরে আমাকে হাসানোর চেষ্টা করতো। আমি হাসিতে ফেটে পড়া থেকে নিজেকে কোনমতে সামলে নিতাম। তাই, অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়ার সময় আমি তাকে খুব কড়াভাবে এমন দুষ্টামি করতে মানা করতাম, যাতে আমি অনুষ্ঠানস্থলে সবার সামনে একটু মানানসই করে গম্ভীর মুখে থাকতে পারি। কিন্তু তাতে কেবল আরো কৌতুক বলতে উৎসাহিত হতো সে! শয়তান!

পরের বছরগুলোতে আমি বৌদ্ধ শেষকৃত্য অনুষ্ঠানগুলোতে নিজেকে হালকা মন নিয়ে উপস্থিত থাকতে শিখলাম। কয়েক বছর আগে প্রথমবারের মতো একটা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কৌতুক বলার মতো সাহস সঞ্চয় করলাম। কৌতুকটি শুরু করার পরে, অনুষ্ঠানের পরিচালক শোকার্ত লোকজনের পিছনে দাঁড়িয়ে বুঝে ফেলল আমি কী করতে যাচ্ছি, আর মুখ দিয়ে নানান ভঙ্গি করে আমাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করল। আমি কিন্তু নাছোড়বান্দা। শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পরিচালকের চেহারা তার মড়াগুলোর চেয়েও সাদা হয়ে গেল। কৌতুক শেষে গির্জার শোকার্তরা হাসিতে ফেটে পড়ল আর পরিচালকের উদ্বিগ্ন মুখে স্বস্তির চিহ্ন ফিরে এল। পরিবার ও বন্ধুরা সবাই পরে আমাকে অভিনন্দন জানালো। তারা বললো যে মৃত ব্যক্তি এমন কৌতুক শুনলে দারুণ উপভোগ করতো, আর খুব খুশি হতো যে তার প্রিয় ব্যক্তিরা তাকে হাসিমুখে বিদায় জানিয়েছে। আমি এখন শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে সেই কৌতুকটা প্রায়ই বলে থাকি। কেন নয়?

বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়রা, আপনাদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে আমি যদি একটা কৌতুক বলি,
আপনারা কি তা শুনতে পছন্দ করবেন? এই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করলে প্রত্যেকবার আমি উত্তর পেয়েছি ‘হ্যাঁ!’

তো, কৌতুকটা কী ছিল?

এক বুড়ো দম্পতি দীর্ঘদিন একত্রে সংসার জীবন কাটিয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন মারা যাওয়ার কিছুদিন বাদে অন্যজনও মারা গেল। ফলে তারা দুজনেই একত্রে স্বর্গে গিয়ে হাজির হলো। এক সুন্দর দেবদূত তাদেরকে সাগরপাড়ের মনোমুগ্ধকর এক প্রাসাদে নিয়ে গেল। ইহ জগতে কেবল কোটিপতিরাই এমন অসাধারণ বাড়ির মালিক হতে পারে। দেবদূত ঘোষণা করল যে স্বর্গীয় পুরস্কার হিসেবে এই প্রাসাদটা তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।

স্বামীটি বেশ বাস্তববুদ্ধি সম্পন্ন লোক ছিল। সে তাড়াতাড়ি বলে উঠল, ‘সবকিছুই তো ভালো। কিন্তু আমার মনে হয় না এত বড় সম্পত্তির ট্যাক্স দিতে পারবো প্রতি বছর।

দেবদূত বেশ মিষ্টি করে হেসে বললো যে স্বর্গে সম্পত্তির উপরে কোন সরকারী ট্যাক্স দিতে হয় না। এরপর সে তাদেরকে প্রাসাদের রুমগুলো ঘুরিয়ে দেখাল। প্রত্যেকটা রুম খুব রুচিশীলভাবে সাজানো, আসবাবপত্র সব খুব দামী দামী। ছাদ থেকে বহুমূল্যের ঝাড়বাতি ঝুলছে। প্রত্যেক বাথরুমের ট্যাপগুলোতে সোনার কারুকাজ করা। সেখানে ছিল ডিভিডি সিস্টেমস আর অত্যাধুনিক বড় পর্দার টেলিভিশন। ঘুরিয়ে দেখানো শেষ হলে দেবদূত বললো কোন কিছু তাদের অপছন্দের আছে কিনা। সেরকম থাকলে তাকে বললেই সে মুহুর্তের মধ্যে সেটা পাল্টিয়ে দেবে। সেটাই তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার।
স্বামীটি তখন মনে মনে সবকিছুর দাম হিসেব করছিল। সে বললো, ‘এগুলো সবই খুব মূল্যবান জিনিসপত্র। আমার মনে হয় না আমরা সম্পত্তি বীমার কিস্তিগুলো চালাতে পারবো।

দেবদূত তার কথা শুনে চোখ পাকালো আর নম্রভাবে বললো যে চোরদের স্বর্গে প্রবেশের অনুমতি নেই, তাই সম্পত্তি বীমারও কোন দরকার নেই। এরপরে সে তাদেরকে নিয়ে গেল নিচের তলার বিশাল গ্যারেজে।

সেখানে ছিল নতুন একটি সাভ ফোর-উইল ড্রাইভ। তার পাশেই ছিল রোলস রয়েস ট্যুরিং লিমুজিন। তৃতীয় গাড়িটা ছিল বিশেষ লাল রঙের ফেরারি স্পোর্টস কার, যার ছাদটা ইচ্ছে করলে খোলা বা বন্ধ করা যায়। স্বামীটি ইহ জীবনে একটি শক্তিশালী স্পোর্টস কার চেয়েছিল কিন্তু তা সে কেবল স্বপ্নেই দেখত।

দেবদূত বললো যে, যদি তারা গাড়ির মডেল, রং বদলাতে ইচ্ছে করে, তাকে বললেই হবে। এটা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার।

স্বামীটি মনমরা হয়ে বললো, ‘আমরা তো এই গাড়িগুলোর রেজিস্ট্রেশন ফি-ই দিতে পারবো না। আর যদি পারিও, এই যুগে স্পোর্টস কার কোন কাজে আসবে? স্পীড বেশি করলেই তো জরিমানা গুণতে গুণতে আমি শেষ।

দেবদূত মাথা নেড়ে তাকে ধৈর্য্যসহকারে বললো যে স্বর্গে কোন গাড়ি রেজিস্ট্রেশন ফি নেই। সেখানে কোন স্পীড ক্যামেরাও নেই। সে তার ফেরারি যত স্পীডে চায়, তত চালাতে পারবে। এরপর সে গ্যারেজের দরজা খুলে দিল। রাস্তার ওপাশে ছিল ১৮টি গর্তওয়ালা বিরাট গলফ খেলার মাঠ। দেবদূত বললো যে স্বর্গে তারা আগেই জানে, স্বামী কীরকম গলফ খেলা পছন্দ করে। সেই সাথে আরো বলে দিল এই গলফ মাঠের ডিজাইন করেছে টাইগার উডস নিজে।

কিন্তু স্বামীটির মুখ তখনো বিষন্ন। সে বললো, ‘এটা তো খুব ব্যয়বহুল গলফ ক্লাব বলে মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় না আমি এই ক্লাবের ফি চালাতে পারবো।

দেবদূত ঘোঁত করে উঠল তার কথা শুনে। এরপরে সে দেবদূতসুলভ চেহারা করে স্বামীটিকে বলে দিল যে স্বর্গে কোন ফি নেই। তাছাড়া স্বর্গের গলফ কোর্সগুলোতে টি-অফের জন্য লাইন ধরতে হয় না। বলগুলো খাদে পড়ে যায় না। ঘাসগুলো এমনভাবে বিছানো, যেদিকে খুশি মারলেই হবে, বল সোজা গর্তে গিয়ে পড়বে। এটা তাদের স্বর্গীয় পুরস্কার।

দেবদূত চলে যাওয়ার পরে স্বামীটি তার স্ত্রীকে বকা শুরু করলো। সে তার উপরে এমন খেপে গিয়েছিল যে চিৎকার করে বাড়ি মাথায় তুললো। বেচারী স্ত্রী বুঝতেই পারলো না কেন এত রাগ তার স্বামীর। ‘তুমি আমার উপরে এত রেগে আছো কেন?’ মিনতি ঝরলো তার কণ্ঠে, ‘আমাদের এমন চমৎকার প্রাসাদ হয়েছে, কত সুন্দর আসবাবপত্র। তুমি তোমার ফেরারি গাড়ি পেয়েছো। রাস্তার ওপাশেই গলফ মাঠ। এত রেগে আছো কেন আমার উপর?’

‘কারণ, হে স্ত্রী,’ স্বামীটি তিক্ত সুরে বললো, ‘তুমি যদি আমাকে অমন স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না দিতে, অনেক বছর আগেই আমি এখানে আসতে পারতাম!’

শোক, হারানো এবং জীবনকে উদযাপন করা - ১৮৫
আমরা হারানোর সাথে যা যোগ করি, তাই হচ্ছে শোক। এটা হচ্ছে শেখানো প্রতিক্রিয়া, যা মাত্র কয়েকটা সংস্কৃতিতে দেখা যায়। শোক অনিবার্য নয়।

আমি এটা জেনেছি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে, আট বছরেরও বেশি সময় ধরে খাঁটি এশিয়ান বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে ডুবে থেকে। সেই সময়ে থাইল্যান্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, যেখানকার একটি বৌদ্ধ বনবিহারে আমি ছিলাম, সেখানে পশ্চিমা সংস্কৃতি ছিল সম্পূর্ণ অপরিচিত। আমাদের বিহারটা তখন আশেপাশের গ্রামগুলোর জন্য শব পোড়াবার স্থান হিসেবে কাজ করতো। প্রায় প্রতি সপ্তাহে মৃতদেহ পোড়ানো হতো। সেই ১৯৭০ এর শেষার্ধে, শত শত দাহক্রিয়া দেখেছি আমি, কিন্তু কাউকেই কাঁদতে দেখি নি। পরের দিনগুলোতে মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের সাথে কথা বলেছি, কিন্তু তাদের মাঝে কোন শোকের চিহ্ন দেখি নি। স্বীকার করতেই হবে যে সেখানে কোন শোক নেই। আমি জেনেছিলাম যে সেই সময়কার উত্তর পূর্ব থাইল্যান্ডে, যেখানে বহু শত বছর ধরে বুদ্ধের শিক্ষা বিরাজমান ছিল, সেখানে মৃত্যুকে সবাই এমনভাবে গ্রহণ করতো, যা প্রিয়জন হারানো এবং শোকের পশ্চিমা ধ্যানধারণাগুলোকে অস্বীকার করে।

সেই বছরগুলো আমাকে শিখিয়েছিল যে শোকের বিকল্প কিছু আছে। শোক যে ভুল তা নয়, কিন্তু তার অন্য একটা সম্ভাবনা আছে। প্রিয়জন হারানোকে অন্যভাবেও দেখা যায়, যা দীর্ঘদিন শোকে কাতর হয়ে দুঃখ পাওয়া থেকে মুক্তি দেয়।

আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন যখন আমার বয়স ষোল। তিনি ছিলেন আমার জন্য মহামানব। তিনিই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি তার কথার মাঝে আমাকে ভালোবাসার মানে খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিলেন, ‘তুমি জীবনে যাই করো না কেন, পুত্র, আমার হৃদয়ের দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে। যদিও তার জন্য আমার ভালোবাসা ছিল বিশাল, আমি তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে কাঁদি নি। আমি তার জন্য আর কোনদিন কাঁদি নি। তার অকালমৃত্যুতে কাঁদতে হবে, এমনটাও কখনো বোধ করি নি। তার মৃত্যুকে ঘিরে আমা এই আবেগকে বুঝে উঠতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল। আমি নিচের গল্পের মাধ্যমে সেটা বুঝেছিলাম, যা আমি এখানে আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

তরুণ হিসেবে আমি খুব গান পছন্দ করতাম। রক গান থেকে শুরু করে ক্লাসিক, জ্যাজ হতে ফোক গান, সব। লন্ডন ছিল ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর গোড়ার দিকে এক অবিশ্বাস্য শহর। বিশেষ করে আপনি যদি গান ভালোবাসেন। আমার মনে পড়ে লেড জেপেলিন ব্যান্ডের প্রথম নার্ভাস গানের মহড়ায় আমিও উপস্থিত ছিলাম, যেটি সোহোর একটি ছোট ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অন্য এক সময়ে আমরা কয়েকজন উত্তর লন্ডনের ছোট এক মদের দোকানের উপরের এক রুমে একটা রক গ্রুপের সামনে তখনকার সময়ে অখ্যাত রড স্টুয়ার্টকে দেখেছিলাম গান করতে। সেকালের লন্ডনের গানের জগতের কত মূল্যবান স্মৃতি আমার কাছে এখনো রয়ে গেছে।

বেশিরভাগ কনসার্টের শেষে অন্যান্যদের সাথে আমিও চেঁচিয়ে উঠতাম, ‘আরেকটা! আরেকটা!’ সাধারণত ব্যান্ড দল বা অর্কেস্ট্রা আরো কিছুক্ষণ বাজাতো, যদিও একসময় তারা তাদের যন্ত্রপাতি গুছিয়ে বাড়ি চলে যেতো। আমিও চলে আসতাম। আমার স্মৃতিতে ভাসে যে প্রতি সন্ধ্যায় যখনই আমি ক্লাব, পাব অথবা কনসার্ট হল থেকে ঘরের দিকে হেঁটে ফিরেছি, তখন সবসময়ই বৃষ্টিতে ভিজেছি। লন্ডনের এমন শুকনো টাইপের বৃষ্টির জন্য বিশেষ একটা শব্দ আছে: ড্রিজল্ বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। প্রতিবারই কনসার্ট হল থেকে বেরোনোর সময় আমি খেয়াল করতাম যে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে, চারদিকে ঠান্ডা ও অন্ধকার ভাব।

আমি মনের গভীরে জানতাম যে সম্ভবত আর কখনোই তাদের গান শোনার সুযোগ হবে না আমার। তারা আমার জীবন থেকে চলে গেছে চিরকালের জন্য। কিন্তু তাতে আমি একবারও বিষন্নতা অনুভব করি নি বা কান্না কান্না ভাব বোধ করি নি। লন্ডনের সেই ঠান্ডা, ভেজা আলো আঁধারির রাতে বেরিয়ে এসে আমার মনে তখনো বাজতে থাকতো তাদের গান। কী অসাধারণ গান! কী দারুণ পারফরম্যান্স! আমি কী সৌভাগ্যবান যে এসময় আমি কনসার্টে

উপস্থিত ছিলাম! দারুণ এসব কনসার্টের পর আমার মনে কোন শোক অনুভব করি নি।

আমার বাবার মৃত্যুর পরও আমি ঠিক এমনটাই অনুভব করেছিলাম। মনে হয়েছিল যেন দারুণ এক কনসার্টের সমাপ্তি ঘটেছে। এটা খুব চমৎকার একটা পারফরম্যান্স ছিল। যখন এটি শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছিল, আমি জোরে জোরে চিৎকার করেছিলাম, ‘আরেকটু! আরেকটু!’ আমার প্রিয় বৃদ্ধ বাবা সত্যিই আরেকটু সময় কাটাতে চেয়েছিলেন আমাদের সাথে। কিন্তু একসময় তাকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে বাড়ি চলে যেতে হলো। তার শেষকৃত্যের পরে আমি মর্টলেকের ক্রেমাটোরিয়াম থেকে লন্ডনের ঠান্ডা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে বেরিয়ে আসছিলাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিটা আমার পরিষ্কার মনে আছে। আমি জানতাম, আর কখনোই তার সাথে দেখা হবে না আমার। তিনি আমার জীবন থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছেন। তাই বলে আমি বিষন্ন বোধ করি নি। আমার কান্নাও আসে নি। আমি শুধু মনে মনে অনুভব করেছিলাম, কী অসাধারণ পিতা ছিলেন তিনি! কী দারুণ অনুপ্রেরণাদায়ী জীবন ছিল তার! আমি কী সৌভাগ্যবান যে তার সাথে থাকতে পেরেছি। কী সৌভাগ্য যে আমি এমন পিতার সন্তান হয়েছি।

ভবিষ্যতের দীর্ঘ পথ হাঁটতে গিয়ে আমি যখন মায়ের হাত ধরেছিলাম, ঠিক একই রোমাঞ্চকর অনুভূতি কাজ করছিল আমার মনে, যেমনটা আমার জীবনে ঘটে যাওয়া বিরাট সব কনসার্টের শেষে অনুভব করেছি। আমি এমন অনুভূতি পৃথিবীর বিনিময়েও মিস করতে চাই না। তোমাকে ধন্যবাদ, বাবা।

শোক হচ্ছে আপনার কাছ থেকে কী কেড়ে নেওয়া হয়েছে তা দেখা। জীবনের উদযাপন করা হচ্ছে আমরা যা যা পেয়েছি তা দেখে তার জন্য খুব কৃতজ্ঞতা অনুভব করা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !