পঞ্চম অধ্যায়: সুখ সৃষ্টি করা
#এটাও
কেটে যাবে- ৭৮
সেই অমূল্য শিক্ষাগুলোর একটি, যেটি হতাশা
দূর করতে বেশ কাজের। সেটি আবার অত্যন্ত সহজ শিক্ষাগুলোর একটি। কিন্তু সহজ শিক্ষাগুলোই
ভুল বুঝা হয় বেশি। যখন আমরা হতাশা থেকে মুক্ত, কেবল তখনই আমরা নিচের গল্পটা সত্যিকারভাবে
বুঝেছি বলে দাবি করতে পারি।
নতুন এক কয়েদি খুব শংকিত ও হতাশাগ্রস্ত।
তার রুমের পাথরের দেয়াল শুষে নিয়েছে সব উষ্ণতাকে, কঠিন লোহার শিকগুলো যেন মৈত্রীভাবকে
ব্যঙ্গ করছে। গেট বন্ধ হওয়ার সময় স্টীলের ঝনঝন শব্দ সব আশাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে বন্দী
করে রেখেছে। যতই দিন গেল, ততই তার মন হতাশায় ডুবতে লাগল। দেয়ালে, তার বিছানার মাথার
দিকে, সে দেখল পাথরের উপরে আঁকিবুকি করে লেখা: ‘এটাও কেটে যাবে।’
এই কথাটা তাকে হতাশার সাগর থেকে টেনে
তুলে আনল, যা নিশ্চিত সাহায্য করেছিল আগের বন্দীকেও। যতই কঠিন মনে হোক না কেন, সে এই
খোদাই করা লেখাটার দিকে থাকাতো আর ভাবতো, ‘এটাও কেটে যাবে।’
যখন সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে পুনর্জীবন
লাভ করল, সে কথাটা একটা কাগজে লিখে নিয়ে বিছানার পাশে, তার গাড়িতে এবং কাজের সময় পাশে
রেখে দিত। খুব খারাপ সময়েও সে আর কখনোই হতাশ হয় নি। সে শুধু স্মরণ করত, ‘এটাও কেটে
যাবে।’ আর কাজে মন দিত। সেই খারাপ সময়গুলো খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী
বলে মনে হয় নি। যখন ভালো সময় এসেছে, সেগুলোকে সে উপভোগ করেছে, তবে অতটা বেখেয়ালি হয়ে
নয়। সেখানেও সে স্মরণ করতো, ‘এটাও কেটে যাবে।’ আর কাজে মন দিত। জীবনে সে কোনকিছুকে
চিরস্থায়ী বলে ধরে নেয় নি। ভালো সময়গুলো সবসময়ই অস্বাভাবিক দীর্ঘ সময় ধরে থাকতো বলে
তার মনে হতো।
এমনকি যখন তার ক্যান্সার হয়, ‘এটাও কেটে
যাবে’ কথাটা তাকে আশা যুগিয়েছিল। আশা তাকে শক্তি ও ইতিবাচক মনোভাব
যুগিয়েছিল, যা রোগটাকে হার মানিয়েছিল। একদিন বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করে জানাল যে, ‘তার ক্যান্সারটাও
কেটে গেছে।’
তার জীবনের দিনগুলোর শেষে, বিছানায় শুয়ে
শুয়ে সে তার প্রিয়জনদেরকে ফিসফিস করে শুনিয়েছিল, ‘এটাও কেটে যাবে।’
আর সহজভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। তার কথাগুলো ছিল তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি
সর্বশেষ ভালোবাসার উপহার।
তারা জেনেছিল যে, ‘শোকও একসময় কেটে যাবে।’
হতাশা এমন একটি কারাগার, যা থেকে আমাদের অনেকেই কাটিয়ে উঠেছে।
’এটাও কেটে যাবে’
কথাটা আমাদেরকে উঠে বসতে সহায়তা করে। হতাশার অন্যতম বড় একটা কারণ হচ্ছে সুখের সময়গুলো
চিরদিন থাকবে বলে ধরে নেওয়া। কিন্তু এই কথাটা এমন ধারণাকে পরিহার করতে সাহায্য করে।
#বীরত্বপূর্ণ
আত্মোৎসর্গ- ৮০
যখন আমি একজন স্কুলশিক্ষক ছিলাম, তখন
ক্লাসের একজন ছাত্রের প্রতি আমার মনোযোগ গেল। বার্ষিক পরীক্ষায় তার রোল নম্বর হয়েছিল
ত্রিশ জনের মধ্যে ত্রিশতম। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম তার ফলাফলের কারণে সে বেশ হতাশ। তাই
আমি তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে গেলাম।
আমি তাকে বললাম, ‘ত্রিশজনের একটা ক্লাসে
কাউকে না কাউকে রোল নম্বর ত্রিশ হতেই হয়। এই বছর ঘটনাক্রমে সেটা তুমি হয়েছো। এটাকে
বলা যায় বীরত্বপূর্ণ আত্মোৎসর্গ। তোমার এই আত্মোৎসর্গের ফলে তোমার বন্ধুদেরকে ক্লাসের
সবচেয়ে নিচে থাকার লজ্জ পেতে হচ্ছে না। তুমি আসলেই খুব দয়ালু, অন্যদের প্রতি তোমার
দারুণ সহানুভূতি। তোমাকে একটা পদক দেওয়া দরকার।’
আমরা উভয়েই জানতাম, আমার কথাগুলো রীতিমত
উদ্ভট। কিন্তু সে হাসলো। সে আর এটাকে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার মতো মারাত্মক ঘটনা বলে মনে
করল না। পরের বছর সে অনেক ভালো ফল করলো। তার বদলে অন্য আরেকজনের বীরত্বপূর্ণ আত্মোৎসর্গের
পালা আসলো।
---------চলমান
---------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।