গর্ভ- সঞ্চার কি কি ভাবে হতে পারে? (মিলিন্দপ্রশ্ন)

https://3sharan.blogspot.com/

৪৭। “ভন্তে নাগসেন! ভগবান ইহা বলিয়াছেনÍভিক্ষুগণ! তিন বস্তুর সংযোগ হইলে গর্ভের সঞ্চার হয়ঃ (১) মাতা-পিতার মিলন হওয়া, (২) মাতাঋতুমতী হওয়া এবং (৩) গন্ধর্বের (জন্মাঅন্বেষন কারী সত্ত্ব) উপস্থিতি থাকা।  এই তিনের সম্মিলন হইলে গর্ভের সঞ্চার হইয়া থাকে। ইহা অশেষ বচন, নিঃশেষ বচন, নিস্পর্যায় বচন এবং অরহস্য বচনÍতিনি দেব-মনুষ্যগনের মধ্যে বসিয়া ইহা ভাষণ করিয়াছেন। আবার দুইয়ের সম্মিলনে গর্ভের সঞ্চার হয়, ইহাও দেখা যায়। দুকুল নামে তাপস পারিকা তপস্বিনীর ঋতুকালে দক্ষিন হস্তের অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা তাহার নাভী স্পর্শ করিয়া দিলেন। তাহাতে শাম কুমার জন্মিয়াছিলেন। মাতঙ্গ ঋষি দক্ষিন হস্তের অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা এক ঋতুমতী ব্রাহ্মণ কণ্যার নাভী স্পর্শ করিয়াছিলেন। ঐ স্পর্শের ফলে মা-ব্য নামক বালকের জন্ম হইয়াছিল।

ভন্তে! যদি ভগবান তিনের সংযোগে গর্ভসঞ্চারের কথা বলেন, তাহা হইলে শাম ও মা-ব্য কুমারের ঐ উৎপত্তির কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়। আর যদি শাম ও মা-ব্য কুমারের জন্ম কেবল নাভী স্পর্শে হইয়া থাকে তবে তাহার এই বাক্য মিথ্যা হয় যে তিনের সংযোগে গর্ভের সঞ্চার হয়। ভন্তে! ইহাও উভয় কোটিক, গভীর, নিপুন এবং বুদ্ধিমানগণের জ্ঞাতব্য বিষয়। ইহা আপনার সম্মুখে উপস্থিত। আপনি বিপক্ষ মত খন্ডন করুন, উত্তম জ্ঞানের আলোক ধারণ করুন।

 ৪৮। “মহারাজ! ভগবান ইহা ঠিকই বলিয়াছেন।ভিক্ষুগণ! তিন বস্তুর মিলনেই গর্ভ সঞ্চার হয়ঃ মাতা- পিতার মিলন, মাতা ঋতুমতী এবং গর্বের উপস্থিতি; এই তিনের মিলনেই গর্ভ-সঞ্চার হয়। মহারাজ! ইহাও উক্ত হইয়াছে যে, শাম ও মান্ডব্যের জন্ম কেবল নাভী স্পর্শের দ্বারা হইয়াছে।

ভন্তে! যাহাতে এই প্রশ্ন সুমীমাংসিত হয় সেই ভাবে কারণ সহ আমাকে বুঝাইয়া দিন“

মহারাজ! আপনি পূর্বে কখনো শুনিয়াছেন কি, সাংকৃত্য কুমার, ঋষিশৃঙ্গ মুনি এবং স্থবির কুমার কশ্যপের জন্ম কি প্রকারে হইয়াছিল?”

হাঁ, ভন্তে! শুনিয়াছি তাহাদের জন্ম কাহিনী সুপ্রসিদ্ধ। দুই হরিণী ঋতুমতী অবস্থায় দুইজন তাপসের প্রস্রাব স্থানে আসিয়া সশুক্র প্রস্রাব পান করিয়াছিল। তৎপ্রভাবে সাংকৃত্য কুমার ও ঋষিশৃঙ্গ মুনি উৎপন্ন হন।

এক সময় স্থবির উদায়ী ভিক্ষুণীদের আশ্রমে গিয়াছিলেন; তথায় তিনি কামচিত্তে ভিক্ষুণীর যোনি-মার্গ সম্বন্ধে চিন্তা করায় তাঁহার শুক্র পাত হয়। তখন আয়ুষ্মান উদায়ী সেই ভিক্ষুনীকে কহিলেন,‘যাও ভগ্নি জল আনয়ন কর, আমার পরিধেয় বস্ত্রধৌত করিব। ভিক্ষুণী বলিলেন,‘আমাকে দেন, আমি ধুইয়া দিব।

স্থবির চীবর দিলেন। সেই সময় ভিক্ষুণী ঋতুমতী ছিলেন। তিনি সেই শুক্রের একাংশ মুখে গ্রহন করিলেন এবং একাংশ যোনি মার্গে নিক্ষেপ করিলেন। তদ্দারা কুমার কশ্যপের জন্ম হইল। লোকে ইহাই বলে।

মহারাজ! আপনি সেই কথা বিশ্বাস করেন কি?”

হাঁ,ভন্তে! এ বিষয়ে আমরা বলবৎ কারণ পাইয়াছি যে কারণ আমাদিগকে শ্রদ্ধা করিতে হয়।

মহারাজ কারণ কী?”

ভন্তে! সুকর্ষিত কর্দ্দমে নিপতিত বীজ শীঘ্রই অঙ্কুরিত হয় কি?’

হাঁ, মহারাজ!”

ভন্তে! এইরূপই যখন সেই সময় ঋতুমতী ভিক্ষুণীর কলল সংস্থিত হয়, রক্তের বেগ বন্ধ হয় এবং ধাতু স্থির হয়, তখন সেই শুক্র লইয়া তিনি সেই কললে নিক্ষেপ করিলেন। তদ্দারা তাঁহার গর্ভ সঞ্চার হইল। তাঁহাদের উৎপত্তির এই কারণ আমরা স্বীকার করি।

মহারাজ! যোনি প্রবেশের দরুনগর্ভ সম্ভব হয়, ইহা আমি সেইরূপে স্বীকার করি। আপনি কুমার কশ্যপের গর্ভাগমন স্বীকার করেন কি?”

হাঁ, ভন্তে!।

সাধু, মহারাজ! আপনি আমার মত পুনঃ আসিয়া পড়িয়াছেন। এক প্রকার গর্ভ সঞ্চারের বিষয় কথিত হইলেও উহাতে আপনি আমার অনুকূল হইবেন।

আচ্ছা! আপনি বলুন ত, সেই দুই হরিণী যে (ঋষির) প্রস্রাব পান করিয়া গর্ভ ধারণ করিয়াছিল, তাহা আপনি বিশ্বাস করেন কি?”

হাঁ, ভন্তে! যাহা কিছু ভোজন করে, পান করে, খায় ও লেহন করে সেই সমস্ত কললে পৌঁছে এবং স্থান প্রাপ্ত হইয়া বর্ধিত হয়। ভন্তে! যেমন সমস্ত নদী মহাসমুদ্রে অবতরণ করে, এবং যথাস্থানে গিয়া বর্ধিত হয়, সেইরূপ যে কিছু খাদ্য, ভোজ্য, লেহ্য, পেয় সমস্তই কললে গিয়া অবতরণ করে এবং যথাস্থানে গিয়া বর্ধিত হয়। সেই কারণে আমি বিশ্বাস করি যে মুখদিয়া প্রবেশ করিয়াও গর্ভ সঞ্চার হইতে পারে।

সাধু মহারাজ! আমার মতে গভীর ভাবে উপস্থিত হইয়াছেন। মুখ দিয়া পানের দ্বারাও দুইএর মিলন হয়। মহারাজ! সাংকৃত্য কুমার, ঋষিশৃঙ্গ মুনি ও স্থবির কুমার কশ্যপের গর্ভাগমন স্বীকার করেন কি?

হাঁ, ভন্তে! স্বীকার করি।

৪৯। “মহারাজ! শাম কুমার ও মা-ব্য মানবকের ক্ষেত্রেও তিনের সমন্বয় হইয়াছিল। ইহা পূর্বোক্ত প্রণালীর সদৃশ। আমি উহার কারণ বলিতেছি। দুকুল তাপস ও পারিকা তাপসী তাঁহারা উভয়ে পরমার্থের অন্বেষণে ধ্যানাভিলষী হইয়া অরণ্যে বাস করিতে ছিলেন। তাঁহাদের তপঃপ্রভাবে ব্রহ্মলোকও উত্তপ্ত হইয়াছিল। তখন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র প্রাতঃকালে ও সন্ধায়, দুই বেলা তাঁহাদের সেবার জন্য আসিতেন। ইন্দ্র তাঁহাদের প্রতি গৌরবযুক্ত মৈত্রী হেতু চিন্তা করিয়া দেখিলেন যে ভবিষ্যতে তাঁহাদের দুই জনেরই চক্ষু নষ্ট হইবে। ইহা দেখিয়া তাঁহাদিগকে বলিলেন,‘ভদন্তগণ! আমার এক অনুরোধ রক্ষা করুন। সাধু! আপনারা এক পুত্র লাভ করুন। সে আপনাদের সেবা করিবে এবং অবলম্বন হইবে।

হে ইন্দ্র! আমাদের পুত্রের প্রয়োজন নাই। আপনি এরূপ বলিবেন না। তাঁহারা ইন্দ্রের অনুরোধ রক্ষা করিলেন না। তাঁহাদের হিতকামী ইন্দ্র দ্বিতীয় বার ও তৃতীয় বার অনুরোধ করিলেন।

তাঁহারা তৃতীয় বারও বলিলেন,‘ হে ইন্দ্র! আমাদের প্রয়োজন নাই। আপনি আমাদিগকে অনর্থে নিয়োগ করিবেন না। আচ্ছা, এই দেহ কি কখনও নষ্ট হইবে না? এই ভঙ্গুর দেহ এক দিন ভাঙ্গিয়া পড়িবেই। ধরনী ভগ্ন হউক, শৈল শিখর পতিত হউক, আকাশ বিদীর্ণ হউক, চন্দ্র সূর্য মাটিতে পতিত হউক ততাপি আমরা লোকাচারে সম্মিলিত হইব না। আপনি আমাদের সম্মুখে আসিবেন না। আপনি আসার পরে কিছু বিশ্বাস হইয়াছিল কিন্তু এখন মনে হইতেছে আপনি আমাদের অনর্থকারী।

তখন, দেবেন্দ্র তাঁহাদের সম্মতি না পাইয়া সগৌরবে প্রণাম পূর্বক কহিলেন,‘যদি আপনারা আমার পরামর্শে উৎসাহিত না হন তবে এই মাত্র করুন, যখন তাপসী ঋতুমতী ও পুস্পবতী হইবেন তখন ভদন্ত! আপনি দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বারা তাঁহার নাভিদেশ স্পর্শ করিবেন। তাহাতে তিনি গর্ভ লাভ করিবেন।

গর্ভ সঞ্চারের ইহাও এক প্রকার সম্মিলন।

কৌশিক! আপনার এই পরামর্শ কার্যকর করিতে পারি। তাহাতে আমাদের তপস্যা নষ্ট হইবে না।’‘তথাস্তু বলিয়া তাঁহারা সম্মত হইলেন।

সেই সময় দেবলোকে ক্ষীণপুণ্য এক দেবপুত্র ছিলেন। তাঁহার আয়ুও ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে। তিনি যেখানে ইচ্ছাÍএমন কি চক্রবর্তী রাজকূলেও জন্মগ্রহণ করিতে সমর্থ ছিলেন। দেবেন্দ্র সেই দেব পুত্রের নিকট গিয়া বলিলেন :

আসুন, আর্য! আজ আপনার সুপ্রভাত। অর্থসিদ্ধ উপস্থিত। তাই আমি আপনাকে সাহায্য করিতে চাই। রমণীয় স্থানে আপনার বসবাস হইবে, উচ্চকুলে জন্ম হইবে, সুন্দর মাতা ও পিতার সান্নিধ্যে লালিত-পলিত হইবেন। আসুন, আমার পরামর্শ ধরুন। দ্বিতীয়, তৃতীয় বারও ইন্দ্র করজোড়ে এই প্রার্থনা করিলেন।

তখন দেবপুত্র কহিলেন,‘মহাশয়! তাহা কোন কুল, আপনি যাহার পুনঃ পুনঃ প্রশংসা করিতেছেন?’

দুকূল তাপস এবং পারিকা তাপসী।

দেবপুত্র তাঁহার বাক্য শুনিয়া সন্তুষ্ট চিত্তে স্বীকার করিলেন,‘সাধু, মহাশয়! আপনার ইচ্ছা পূর্ণ হউক। আপনার নির্দেশিত কুলে আমি জন্ম গ্রহণ করিব। অ-জ, জরায়ুজ, সংস্বেদজ কিংবা ঔপপাতিক যোনির মধ্যে আমি কোথায় জন্ম লইব?’

মহাশয়! আপনি জরায়ুজ, যোনিতে জন্মগ্রহণ করুন।

তখন, দেবেন্দ্র তাঁহার উৎপত্তির দিন গণনা করিয়া দুকূল তাপসকে অনুরোধ করিলেন,‘অমুক দিনে তাপসী ঋতুমতি ও পুষ্পবতী থাকিবেন, তখন ভন্তে! আপনি দক্ষিণ হস্তাঙ্গুষ্ঠদ্বারা তাঁহার নাভি স্পর্শ করিবেন।

মহারাজ! ঠিক সেইদিন তাপসী ঋতুমতী ও পুষ্পবতী ছিলেন। তাপস দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুষ্ঠদ্বারা তাপসীর নাভি স্পর্শ করিলেন এবং দেবপুত্রও তথায় পুনর্জন্ম গ্রহণের নিমিত্ত তৎপর হইলেন। এই প্রকারেই তিনের সম্মিলন ঘটিয়াছিল। নাভিস্পর্শের দ্বারা তাপসীর কামরাগ উৎপন্ন হইল, সেই রাগ কেবল নাভিস্পর্শের দরুণ। কিন্তু আপনি শুধু মৈথুনক্রিয়াকেই সম্মিলন মনে করিবেন না। (রাগযুক্ত নরনারীর) উচ্চহাস্য, উল্লসিত আলাপ এবং নিবিষ্টভাবে দর্শনÍএই সকলও সম্মিলন। রাগ উৎপত্তির প্রাথমিক অবস্থা বলিয়া পরস্পর স্পর্শ দ্বারা সম্মিলন হয়, সেই সম্মিলন হইতে গর্ভের সঞ্চার হইয়া থাকে।

মহারাজ! কাজেই মৈথুনক্রিয়া ব্যতীত স্পর্শদ্বারা গর্ভসঞ্চার হয়। মহারাজ! যেমন জ্বলন্ত অগ্নি স্পর্শ না করিলেও সমীপস্থ বস্তু গরম হইয়া যায়, সেইরূপ মৈথুনক্রিয়া ব্যতীতও স্পর্শের দ্বারা গর্ভ-সঞ্চার হয়।

৫০। মহারাজ! চারি কারণে সত্ত্বগণের গর্ভধারণ হয়। যথা কর্মবশে, যোনিবশে, কুলবশে এবং প্রার্থনাবশে হয়। মহারাজ! কর্মবশে প্রাণিগণের গর্ভঞ্চার কিরূপে হয়?

মহারাজ! প্রচুর পুণ্যবান ব্যক্তিগণ উচ্চ ক্ষত্রিয়, ব্রাহ্মণ, গৃহপতি কুলে কিংবা দেবতাদের মধ্যে অ-জ, জরায়ু, সংস্বেদজ অথবা ঔপপতিক যোনিতে ইচ্ছানুসারে জন্মগ্রহণ করেন। যেমন, মহারাজ! কোন ধনাঢ্য ব্যক্তি, যাহার নিকট যথেষ্ট ধন, স্বর্ণ-রৌপ্য, বহু সম্পত্তি, আত্মীয়স্বজন ও দাসদাসী থাকে তিনি দাস, দাসী, জমি বাড়ী, গ্রাম, নগর বা জনপদের যাহা কিছু ইচ্ছা করেন তাহা যথেষ্টভাবে, দ্বিগুণ ও ত্রিগুণ মূল্য দিয়া ক্রয় করিতে পারেন; সেইরূপ প্রচুর পুণ্যবান লোকেরা যেখানে ইচ্ছা করেন সে স্থানে জন্মগ্রহণ করিতে পারেন। এই প্রকারে কর্মবশে জীবগণের জন্মলাভ হয়।

৫১। যোনিবশে জীবগণের কিরূপে জন্মগ্রহণ হয়?

মহারাজ! মূরগীদের বায়ুদ্বারা ও বলাকাদের মেঘ গর্জনে গর্ভসঞ্চার হয়। দেবতারা গর্ভাশয়ে জন্মগ্রহণ করেন না, তাহাদের নানা বর্ণে গর্ভসঞ্চার হয়। যেমন, মহারাজ! মানুষেরা নানা পোষাকে পৃথিবীতে বিচরণ করেন; কেহ সম্মুখে ঢাকে, কেহ পশ্চাতে ঢাকে, কেহ নগ্ন থাকে, কেহ মু-িত মস্তকে শ্বেতবস্ত্র পরিধান করে, কেহ উষ্ণীষধারী হয়, কেহ মু-িত শীর্ষে কষায় বসনধারী হয়, কেহ জটাধারী হইয়া বল্কল পরিধান করে, কেহ কেহ চর্মবস্ত্র, কেহ বা রশ্মি পরিধান করেÍএইসকল মানুষেরা নানাবিধ পোষাকে পৃথিবীতে বিচরণ করিয়া থাকে; সেইরূপ, মহারাজ! ইহারা সকলেই প্রাণী, তাহাদের নানাভাবে গর্ভসঞ্চার হয়। এইরূপে যোনি হিসাবে প্রাণীদের গর্ভসঞ্চার হয়।

৫২। কুলবশে জীবগণের জন্মগ্রহণ কিরূপে হয়?

মহারাজ! অ-জ, জরায়ুজ, সংস্বেদজ ও ঔপপাতিক ভেদে চারি প্রকার কুল আছে। গন্ধর্ব যে কোন স্থান হইতে আসিয়া (চ্যুত হইযা) যদি অ-জ কুলে জন্মগ্রহণ করে তবে সে তথায় অ-জ হয়। সেইরূপ যদি জরায়ুজ, সংস্বেদজ ও ঔপপাতিক কুলে কেহ জন্ম গ্রহণ করে, তবে সে জরায়ুজ, সংস্বেদজ ও ঔপপাতিক হয়। তাহারা যেই যেই কুলে জন্মগ্রহণ করে সেই সেই কুলের অন্তর্গত ও অনুরূপ প্রাণী হয়। যেমন যে সকল পশু-পক্ষী হিমালয়ে মেরু নামক পর্বতে গমন করে তাহারা সকলে স্ব স্ব বর্ণ পরিত্যাগ করিয়া স্বর্ণ-বর্ণ হইয়া যায়, মহারাজ! সেইরূপ যে কোন গন্ধর্ব যে কোন স্থান হইতে আসিয়া যদি অ-জ কুলে জন্মগ্রহণ করে, তাহা হইলে ইহা স্বভাববর্ণ পরিত্যাগ করিয়া অ-জই হয়। তদ্রুপ জরায়ু কূলে জরায়ুজ, সংস্বেদজকুলে সংস্বেদজ এবং ঔপপাতিক কুলে ঔপপাতিক হয়। এইরূপে কুলবশে জীবগণের জন্ম হয়।

৫৩। প্রার্থনাবশে জীবগণের জন্মগ্রহণ কিরূপে হয়?

মহারাজ! কোন কোন কুল সন্তানহীন হয়। সেই কুলে বহু সম্পত্তি থাকে। কুলীনেরা শ্রদ্ধাবান, প্রসন্ন, সচ্চরিত্র, কল্যাণ-ধর্মপরায়ণ ও তপস্যানিরত থাকে। সেই সময় কোন দেবপুত্রও স্বীয় পুণ্যফল ক্ষয় হওয়ায় পতনোন্মুখ হয়। তখন দেবেন্দ্র সেই কুলের প্রতি অনুকম্পাবশতঃ উক্ত দেবপুত্রকে প্রার্থনা করেনÍমহাশয়! অমুক কুলের মহিষীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করুন। সেই দেবপুত্র দেবেন্দ্রর প্রার্থনায় ঐ কুলে জন্মগ্রহণ করেন।

মহারাজ! যেমন পুণ্যকামী লোকেরা শ্রদ্ধাভাজন ভিক্ষুকে আহ্বান করিয়া গৃহে আনয়ন করেন এই ভাবিয়া যে তাঁহারা আগমনে সর্ববিধ সুখাবহ কুশল হইবে, সেইরূপ দেবেন্দ্র সেই দেবপুত্রকে প্রার্থনা করিয়া সেই কুলে আনয়ন করেন। এই প্রকারে প্রার্থনাবশে প্রাণিগণের জন্ম হয়।

৫৪। মহারাজ! দেবেন্দ্র শক্রের প্রার্থনানুসারে শাম কুমার তপস্বিনী পারিকার গর্ভে জন্মগ্রহণ করিলেন। মহারাজ! শাম কুমার পুণ্যবান ছিলেন। তাঁহার মাতাপিতা শীলবান কল্যাণধর্ম-পরায়ণ ছিলেন। আর প্রার্থনাকারী ছিলেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র। এই তিনজনের মানসিক প্রার্থনা প্রভাবে শামকুমার উৎপন্ন হইয়াছেন।

মহারাজ! যদি কোন সুদক্ষ লোক সুকর্ষিত, সরস ও উর্বর ক্ষেত্রে বীজ বপন  করে এবং যদি সেই বীজ প্রতিবন্ধকমুক্ত হয় তবে উহার অভিবৃদ্ধির কোন অন্তরায় হইবে কি?”

না, ভন্তে! অবশ্যই সেই বীজ বিনা বাধায় শীঘ্রই সংবর্ধিত হইবে।

মহারাজ! এই প্রকারেই সর্ববিধ অন্তরায়মুক্ত হইয়া তিনজনের চিত্ত-প্রণিধান হেতু শাম কুমার উৎপন্ন হইয়াছেন। মহারাজ! আপনি শুনিয়াছেন কি ঋষিদের অভিশাপ দ্বারা জনবহুল সমৃদ্ধ জনপদও বিনষ্ট হইয়াছে?”

হাঁ, ভন্তে! শুনা যায় যে, মহৎ দ-কারণ্য, মধ্যারণ্য, কলিঙ্গারণ্য ও মাতঙ্গারণ্যÍএই সকল (স্থান) যে অরণ্যে পরিণত হইয়াছে উহারা এক সময় সমৃদ্ধ ও উন্নত জনপদ ছিল, ঋষিদের অভিশাপে এখন বিনষ্ট হইয়াছে।

মহারাজ! যদি ঋষিদের অভিশাপ দ্বারা সুসমৃদ্ধ জনপদও অরণ্যে পরিণত হইয়া যায় তবে তাঁহাদের চিত্তপ্রসন্নতার দ্বারা কিছু শুভ কাজ হইবে না কেন?”

হাঁ ভন্তে! অবশ্যই হইবে।

অতএব, মহারাজ! তাহা হইলে তিনজন শক্তিশালী মহাপুরুষের চিত্ত প্রসন্নতার দ্বারা শাম কুমার উৎপন্ন হইয়াছেন। তিনি ঋষি নির্মিত, দেব নির্মিত এবং পুণ্য নির্মিত ছিলেন। মহারাজ! ইহা এইরূপ অবধারণ করুন।

মহারাজ! তিনজন দেবপুত্র দেবরাজ ইন্দ্রের প্রার্থিত কুলে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। সেই তিনজন কে কে? শাম কুমার, মহাপনাদ ও কুশ রাজা। এই তিনজনই বোধিসত্ত্ব ছিলেন।

ভন্তে নাগসেন! আপনি গর্ভসঞ্চার কথা উত্তম রূপে নির্দ্দেশ করিয়াছেন।

আপনি ইহার কারণ উত্তম রূপে বুঝাইয়াছেন। অন্ধকারে আলো ধরিয়াছেন। জটা

খুলিয়া দিয়াছেন। বিপক্ষবাদ নিস্তব্ধ করিয়াছেন। আপনার কথিত পদ্ধতিতে ইহা

স্বীকার করিতেছি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !