শিবিরাজের চক্ষুদান (মিলিন্দপ্রশ্ন)


শিবিরাজের চক্ষুদান

৪০। “ভন্তে নাগসেন! আপনারা বলিয়া থাকেনÍ‘শিবি রাজা যাচককে নিজের চক্ষু যুগলদান করিয়াছিলেন। অন্ধ হইবার পর তাঁহার পুনঃ দিব্যচক্ষু উৎপন্ন হইয়াছিল।’ এই বাক্য সমল,সনিগ্রহ ও সদোষ। পক্ষান্তরে সূত্রে উক্ত হইয়াছেÍ‘হেতু সমূহ বিনষ্ট হইলে, অকারণে দিব্যচক্ষুউৎপন্ন হইতে পারে না।’

ভন্তে! যদি শিবি রাজা যথার্থই যাচককে চক্ষুদান করেন তবে তাঁহার‘পুনঃ দিব্যচক্ষু উৎপন্ন্ হইয়াছিল’ এই যে বাক্য তাহা মিথ্যা। আর যদি প্রকৃতপক্ষে দিব্যচক্ষু উৎপন্ন হইয়া থাকে তবে‘তিনি যাচককে চক্ষুদান করিয়াছি’ এই যে প্রবাদ, তাহা মিথ্যা। ভন্তে! ইহাও উভয়কোটিক প্রশ্ন, ইহা জটিল হইতে জটিলতর, কুটিল হইতে কুটিলতর ও গহন হইতে গহনতর। উহা আপনার সম্মুখে উপস্থাপিত করা হইয়াছে। এই বিষয়ে প্রতিপক্ষের মত খ-নের নিমিত্ত এবং সমস্যার সমধানের নিমিত্ত আপনি ইচ্ছা উৎপাদন করুন।”

“মহরাজ! শিবি রাজা যাচককে চক্ষু যুগল দান করিয়াছেন, তাহাতে কিছু সন্দেহ উৎপাদন করিবেন না। আবার তাঁহার দিব্যচক্ষু উৎপন্ন হইয়াছে, তাহাতেও সন্দেহ জন্মাইবেন না।”

“ভন্তে! হেতু সমূহ বিনষ্ট হইলে, কারণ ব্যতীত দিব্যচক্ষু উৎপন্ন হইতে পারে কি?”

“না, মহারাজ! উৎপন্ন হইতে পারে না।”

“ভন্তে! এক্ষেত্রে কারণ কী, যাহাতে হেতু বিনষ্ট হইলেও কোন কারণ ব্যতিরেকে তাঁহার চক্ষু উৎপন্ন হইল? বেশ এখন আপনি কারণ প্রদর্শন করিয়া  এই বিষয় আমাকে বুঝাইয়া দিন।”

৪১। “মহারাজ! এই জগতে সত্য বলিয়া কি কিছু আছে, যাহার দ্বারা সত্যবাদিগণ সত্যক্রিয়া করিয়া থাকেন?”

“হাঁ, ভন্তে! জগতে সত্য আছে, সত্যবাদিরা সত্যক্রিয়া করিয়া বৃষ্টি বর্ষণ করান, অগ্নি নির্বাপন করান, বিষ নষ্ট করান এবং আরও যাহা করিতে ইচ্ছা করেন তাহা করিতে পারেন।”

“মহারাজ! তাহা হইলে সত্যবলে শিবিরাজের দিব্যচক্ষু লাভ হইয়াছিল, ইহাও যুক্তি-সঙ্গত। সত্য বলে অনাধারেও দিব্যচক্ষু উৎপন্ন হয়। ইহাতে সত্যই উহার প্রধান হেতু বুঝিতে হইবে।

মহারাজ! যেমন বড় বড় সিদ্ধ পুরুষগণ‘বৃষ্টি বর্ষিত হউক’ বলিয়া সত্যের অনুগান করেন, তাঁহাদের সত্যগানের সঙ্গে সঙ্গেই প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হয়। মহারাজ! পূর্ব হইতে আকাশে বর্ষণের হেতু সঞ্চিত থাকে কি? যেই হেতুতে প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হয়?”

“না, ভন্তে! তথায় প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের সত্যয় প্রধান হেতু হয়।”

“মহারাজ! সেইরূপ শিবিরাজের কোন প্রাকৃতিক হেতু ছিলনা, দিব্যচক্ষু লাভের একমাত্র হেতু ছিল সত্য।”

৪২। “মহারাজ! যেমন বড় বড় সিদ্ধ পুরুষগণ‘আগুন নিভিয়া যাউক’ বলিয়া যখন সত্যক্রিয়া করেন সেই গুণে অগ্নি নিবিয়া যায়। মহারাজ! তবে কি পূর্ব হইতে অগ্নি নির্বাপনের হেতু সঞ্চিত থাকে যাহাতে সেই ক্ষণেই অগ্নি নিবিয়া যায়?”

“না, ভন্তে! এখানে কেবল সত্যবলই অগ্নি নির্বাপনের কারণ হয়।”

“মহারাজ! সেইরূপই শিবি রাজার কোন প্রাকৃতিক হেতু ছিল না, তাঁহার সত্য বলই প্রধান করণ ছিল।”

৪৩। “মহারাজ! যে সকল বড় বড় সিদ্ধ পুরুষ আছেন তাঁহারা‘এই হলাহল বিষ ঔষধ হউক’ এই বলিয়া সত্য ক্রিয়া করেন, তাঁহাদের সত্যক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষ ঔষধে পরিণত হয়। এখানে বিষ দমনের জন্য পূর্ব হইতেই কি হেতু সঞ্চিত থাকে?”

“না, ভন্তে! তাঁহাদের সত্যের প্রভাবই এখানে প্রধান কারণ।”

“মহারাজ! এইরূপই শিবি রাজার (চক্ষুঃ প্রদান ও দিব্যচক্ষু উৎপত্তি) কোন প্রাকৃতিক হেতু ছিল না, তাঁহার সত্যের প্রভাবই প্রধান কারণ ছিল।”

৪৪। “মহারাজ! চারি আর্যসত্য জ্ঞাতার্থে অন্য কোন কারণ নাই, এই সত্যের ভিত্তিতেই উহাদেরও উপলব্ধি হইয়া থাকে।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !