কৃশা গৌতমী থেরী

 

Krisha Goutomi

বুদ্ধের সময়ে কৃশা গৌতমী শ্রাবস্তী নগরের এক গরিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম ছিল গৌতমী। তাঁর দেহ অত্যন্ত কৃশ হওয়ায় তিনি কৃশা গৌতমী নামে অভিহিত হন। তাঁর বিবাহিত জীবনে তিনি সুখ লাভ করতে পারেননি। অনাদর-অবহেলায় কটেছে তাঁর জীবন।

অসময়ে তাঁর স্বামীও মৃত্যুবরণ করেন। লোকে তাঁকে অনাথা বলত। কিন্তু এক পুত্রসন্তান প্রসব করে তিনি সম্মান লাভ করেন। পুত্রটিই ছিল তাঁর একমাত্র আশা-ভরসা। পুত্রটি বড় হয়ে ক্রমে কৈশোরে উত্তীর্ণ হলে হঠাৎ তারও মৃত্যু হয়। পুত্রের মৃত্যুতে তিনি শোকে পাগল হয়ে যান। একমাত্র পুত্রের মৃত্যু তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। সকলের কাছে মৃত সন্তানকে বাঁচানোর জন্য ঔষধ ভিক্ষা চাইলেন। ঔষধ কেউ দিতে পারলেন না। বরং নগরবাসী কেউ কেউ তাঁকে পাগল বলে ভৎসনা করলেন।

কৃশা গৌতমী কারো কথাতেই ভ্রুক্ষেপ করলেন না। সন্তানকে বাঁচানোর আশায় তিনি ছুটে চললেন প্রত্যেকের দুয়ারে দুয়ারে। অবশেষে এক মহৎ ব্যক্তি তাঁকে তথাগত বুদ্ধের কাছে গিয়ে ঔষধ প্রার্থনা করতে বললেন।

অতঃপর কৃশা গৌতমী মৃত সন্তান কোলে নিয়ে বুদ্ধের নিকট উপস্থিত হন। উপস্থিত হয়ে তিনি বুদ্ধকে বললেন, ভগবান আমি শুনেছি আপনি অনাতের নাথ, দয়ার সাগর, করুণার আধার, মৈত্রীতে পরিপূর্ণ। আপনিই একমাত্র পারেন আমার সন্তানের জীবন ফিরে পাওয়ার ঔষধ দিতে।

বুদ্ধ কৃশা গৌতমীর দিকে তাকালেন এবং ধ্যান চেতনায় দেখলেন কৃশা গৌতমীর পূর্বজন্মের অনেক সুকৃতি আছে। কিন্তু জন্মের নানাবিধ কর্ম কর্মফলে তার হৃদয় কষ্টে ভরপুর। বুদ্ধ তার মানসিক অশান্তি দূর করার জন্য তাঁকে বললেন; আমি তোমার সন্তানকে বাঁচাতে পারি কিন্তু এর জন্য একটি ছোট্ট জিনিস প্রয়োজন। যদি আনতে পারো তবে তোমার সন্তানকে বাঁচাতে পারবো। কৃশা আশ্বস্ত হয়ে জিগেস করলেন কি এমন জিনিস। বুদ্ধ বললেন, নগরে গিয়ে এমন একটি ঘর থেকে সরিষাবীজ নিয়ে এসো, যে ঘরে কখনো কোনো মানুষের মৃত্যু হয়নি।

বুদ্ধের কথা শুনে কৃশা গৌতমী কিছুটা শান্ত হন এবং মৃত পুত্রকে বুকে নিয়ে তিনি নগরে প্রবেশ করেন। তিনি প্রতিটি ঘরের দরজায় গিয়ে সরিষাবীজ ভিক্ষা করে জিজ্ঞেস করলেন, ঘরে কোনো মৃত্যু ঘটেছে কি না। সকল ঘরে একই উত্তর পেল, এখানে কত মৃত্যু হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। তিনি বুঝতে পারলেন, কোনো ঘরই মৃত্যুর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত নয়। জন্ম হলেই মৃত্যু অনিবার্য। সর্ব বস্তু অনিত্য। অতঃপর পুত্রের সৎকার করে তিনি বুদ্ধের নিকট ফিরে যান। বুদ্ধ জিজ্ঞাসা করেন, গৌতমী! সরিষাবীজ পেয়েছ কি? কৃশা গৌতমী বললেন, ভগবান! সরিষাবীজের আর প্রয়োজন নেই। আমাকে আপনার ধর্মে দীক্ষা দিন।

তখন বুদ্ধ তাকে বললেন, বন্যার স্রোত যেমন গ্রাম, নগর ভাসিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি ভোগবিলাসে রত মানুষও মৃত্যুর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যায়। বুদ্ধের উপদেশ শুনে কৃশা গৌতমী স্রোতাপত্তি ফল লাভ করে ভিক্ষুণীধর্মে দীক্ষা প্রার্থনা করেন।

দীক্ষিত হওয়ার পর তিনি খুব ভালোভাবে ভিক্ষুণী জীবনের নিয়ম পালন করেন। সকল প্রকার লোভ, হিংসা, মোহ, তৃষ্ণা ক্ষয় করে তিনি অর্হত্বপ্রাপ্ত হন। বুদ্ধ তাঁকে অমসৃণ বস্ত্র পরিধানকারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে ঘোষণা করেন।

স্বীয় সাফল্যে উল্লসিত হয়ে তিনি অনেক গাথা ভাষণ করেছিলেন। তাঁর কিছু উপদেশ নিচে তুলে ধরা হলো:

  • ) সাধু ব্যক্তির সঙ্গে কন্ধুত্ব করা জ্ঞানীগণ প্রশংসা করেন। সাধু ব্যক্তির সঙ্গে কন্ধুত্ব করলে জ্ঞানী হওয়া যায়।
  • ) সৎ মানুষের অনুসরণ করো। এতে জ্ঞান বর্ধিত হয়।
  • ) চতুরার্য সত্য সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করো।
  • ) আমি আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি, নির্বাণ উপলব্ধি করেছি।
  • ) আমি বেদনা মুক্ত, ভার মুক্ত। আমার চিত্ত সম্পূর্ণ মুক্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !