পঞ্চম অধ্যায়ঃ সুখ সৃষ্টি করা
#হয়তো
এটাই ন্যায়সঙ্গত- ৮৬
হতাশায় পড়ে আমরা প্রায়ই ভাবি: ‘এটা তো
ন্যায্য হচ্ছে না! আমাকে কেন?’ জীবনটা যদি আরেকটু ন্যায্য হতো, তাহলে হয়তো ব্যাপারগুলো
আরেকটু সহজ হতো। জেলখানায় ধ্যানের ক্লাসে এক মধ্যবয়স্ক কয়েদি আমার সাথে ধ্যানের পরে
দেখা করতে চাইলো। সে কয়েক মাস ধরে ধ্যান চর্চা করছিল আর তার সাথে বেশ ভালো পরিচয় হয়ে
গিয়েছিল আমার।
’ব্রাহম্’
সে বললো, ‘আমি তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম, যে অপরাধের জন্য আমি এই জেলখানায় বন্দী, তা কিন্তু
আমি করি নি। আমি জানি, অনেক আসামীই এই কথা বলবে আর তারা খুব সম্ভবত মিথ্যাই বলবে। কিন্তু
আমি তোমাকে সত্যি কথাটাই বলছি। আমি তোমাকে মিথ্যা বলবো না, ব্রাহম্। অন্তত তোমাকে নয়।’
আমি তার কথা বিশ্বাস করেছিলাম। তখনকার
অবস্থা ও তার আচরণ আমাকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে সে সত্যি বলছে। আমি ভাবতে শুরু
করলাম ব্যাপারটা কেমন অন্যায়, আর কীভাবে তার এই ভয়ানক অবিচারকে সারিয়ে তোলা যায়। কিন্তু
সে আমার চিন্তাতে বাধা দিল।
মুখে এক দুষ্টামির হাসি নিয়ে সে বললো,
‘কিন্তু ব্রাহম্, এমন অনেক অপরাধ আমি করেছি, যেগুলোতে আমি ধরা পড়ি নি। তাই আমার মনে
হয়, এটা আমার ন্যায্য পাওনা।’
আমি দ্বিগুণ জোরে হেসে উঠলাম। এই ধুর্ত
বুড়ো কর্মের নিয়মটা ভালোই বুঝেছে। এমনকি আমার চেনাজানা অনেক ভিক্ষুর চেয়েও ভালো বুঝেছে।
কতবার আমরা এমন ‘অপরাধ’
করি, ঘৃণ্য কোন কাজ করে বসি, অথচ তার জন্য আমাদেরকে দুঃখ পেতে হয় না? আমরা কি তখন বলি,
‘এটা তো ন্যায্য পাওনা হচ্ছে না! কেন আমি ধরা পড়লাম না?’ আর যখন আমরা দুঃখকষ্ট পাই,
আপাতদৃষ্টিতে কোন কারণ ছাড়া, আমরা তখন কাতর হয়ে বলি, ‘এ তো ন্যায্য নয়! আমাকে কেন?’
বোধ হয় এটাই ন্যায্য। আমার গল্পের সেই
কয়েদীর মতো, জীবনে আমরা সম্ভবত আরো অনেক অপরাধ করেছি, যেগুলোতে ধরা পড়ি নি। একারণেই
জীবনটা মনে হয় অবশেষে এই ন্যায্য পাওনাটা দিচ্ছে।
--------------পঞ্চম অধ্যায় শেষ-------------
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।