পঞ্চম অধ্যায়: সুখ সৃষ্টি করা
বেশি
আশা করাটা বাড়াবাড়ি
ব্যথাবিহীন জীবন আশা করাটা বাড়াবাড়ি,
ব্যথাবিহীন জীবন আশা করাটা ভুল।
কারণ ব্যথা হচ্ছে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা
ব্যবস্থা।
আমরা যতই ব্যথাকে অপছন্দ করি না কেন,
এবং কেউই কিন্তু ব্যথাকে পছন্দ করে না,
তবুও ব্যথা খুব গুরুত্বপূর্ণ,
আর ব্যথার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত!
তা না হলে কীভাবে জানতাম,
আমাদের হাতটা আগুনের কাছ থেকে সরাতে হবে?
আঙুলটা সরাতে হবে ব্লেডের কাছ থেকে?
তাই ব্যথা খুব গুরুত্বপূর্ণ
আর ব্যথার জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত!
তবেএক ধরনের ব্যথা আছে যা কোন কাজে লাগে
না।
তা হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা।
এটা সেই সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর ব্যথা, যা
দেহের প্রতিরক্ষার জন্য নয়।
এটা একটা আক্রমণকারী শক্তি।
এটা একটা অভ্যন্তরীণ আক্রমণকারী,
ব্যক্তিগত সুখের ধ্বংসকারী,
ব্যক্তিগত সামর্থ্যরে উপর আক্রমণাত্মক
হামলাকারী,
ব্যক্তিগত সুখের মাঝে এক বিরামহীন অনুপ্রবেশকারী,
আর জীবনের জন্য এক অবিরাম উৎপীড়ন!
দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা হচ্ছে মনের লাফ দেওয়ার
জন্য সবচেয়ে কঠিন বাধা।
মাঝে মাঝে লাফ দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে
দাঁড়ায়।
তবুও আমাদেরকে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে
হবে।
আরো চেষ্টা করতে হবে।
আরো চেষ্টা করতে হবে।
কারণ, তা না করলে এটি ধ্বংস করে ফেলবে
আমাদেরকে।
আর এই যুদ্ধ থেকে আসবে কিছু ভালো দিক।
ব্যথাকে জয় করার সন্তুষ্টি।
সুখ ও শান্তিকে লাভ,
জীবনে এটার বিনিময়ে।
এটা একটা বলার মতন অর্জন,
এমন একটা অর্জন, যা খুবই বিশেষ কিছু,
খুব ব্যক্তিগত,
একটা সতেজ অনুভূতি,
ভেতরের একটা শক্তি,
যাকে
বুঝতে হলে এমন অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে।
তাই ব্যথাকে গ্রহণ করতে হবে সাদরে,
মাঝে মাঝে এমনকি ধ্বংসাত্মক ব্যথাকেও।
কারণ এটা হচ্ছে প্রকৃতির একটা অংশ,
আর মন এটার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারে,
বার বার এরূপ চর্চার মধ্য দিয়ে মন আরো
শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে।
--জোনাথন উইলসন ফুলার
রচয়িতার সদয় অনুমতি নিয়ে এই কবিতাটি এখানে
যোগ করার কারণ হলো, কবিতাটা লেখার সময় জোনাথনের বয়স ছিল মাত্র নয় বছর!
#ডাস্টবিন
হওয়া- ৮৫
আমার কাজের একটা অংশ হলো লোকজনের সমস্যাগুলো
শোনা। ভিক্ষুরা সবসময়ই টাকা বাঁচানোর একটা ভালো উপায়, কারণ তারা বিনিময়ে কোন কিছুই
দাবি করে না। প্রায়ই এমন হয়, যখন আমি জটিলতাগুলোর কথা শুনি, যেগুলো আঠালো আবর্জনার
মতো, যাতে কিছু কিছু লোক আটকে যায়, তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে আমিও বিষণ্ন
হয়ে পড়ি। কোন ব্যক্তিকে খাদ থেকে বের করে আনার জন্য আমাকেও মাঝে মধ্যে খাদের মধ্যে
ঢুকে পড়তে হয় তাদের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা ধরার জন্য- কিন্তু আমি সবসময় সাথে করে একটা
মই নিয়ে আসি। আলোচনাটার পরে আমি আবার আগের মতো সতেজ হয়ে যাই সবসময়। আমার পরামর্শের
কাজ আমার ভেতরে কোন প্রতিধ্বনি তোলে না, কারণ আমি সেভাবেই প্রশিক্ষিত হয়েছি।
আজান চাহ, যিনি থাইল্যান্ডে আমার শিক্ষক
ছিলেন, তিনি বলতেন যে ভিক্ষুদেরকে অবশ্যই ডাস্টবিন হতে হবে। ভিক্ষুরা, বিশেষ করে সিনিয়র
ভিক্ষুদেরকে বিহারে বসে বসে লোকজনের সমস্যার কথা শুনতে হয় আর তাদের সব আবর্জনাগুলো
গ্রহণ করতে হয়। বিবাহিত জীবনের সমস্যা, পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সমস্যা, উঠতি বয়সের
সন্তানদের নিয়ে ঝামেলা, আর্থিক সমস্যা- সব ধরনের সমস্যাই আমাদেরকে শুনতে হয়। আমি জানি
না কেন। একজন ব্রহ্মচারী ভিক্ষু বিবাহিত জীবনের সমস্যার ব্যাপারে কী জানে? আমরা সংসার
ত্যাগ করেছি তো এসব ঝঞ্জাট থেকে দূরে থাকার জন্য। কিন্তু দয়া ও মৈত্রী নিয়ে আমরা বসে
থাকি আর তাদের সমস্যার কথা শুনে যাই। আমাদের শান্তির ভাগ দিই তাদেরকে আর বিনিময়ে আবর্জনাগুলো
গ্রহণ করি।
আজান চাহ্ একটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ
দিতেন। তিনি আমাদেরকে একটা ডাস্টবিনের মতো হতে বলতেন যার নিচে একটা ছিদ্র আছে। আমাদেরকে
সব আবর্জনা গ্রহণ করতে হবে, কিন্তু রাখা যাবে না একটাও। তাই একজন যথার্থ বন্ধু অথবা
পরামর্শদাতা হচ্ছে একটা তলাবিহীন ডাস্টবিনের মতো, যে অন্যদের সমস্যার কথা শুনে শুনে
কখনোই পূর্ণ হয় না।
-----------------চলমান।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।