[তৃতীয় বর্গ]
প্রব্রজিতদের কায়-প্রীতি
১৯। রাজা বলিলেন,
“ভন্তে নাগসেন! প্রব্রজিতগণের নিজ দেহ প্রিয়
কি?”
“না, মহারাজ! প্রব্রজিতগণের
নিজ দেহ প্রিয় নহে।”
“ভন্তে! তাহা হইলে আপনারা
দেহের এত যত্ন ও
আদর করেন কেন?”
“মহারাজ! কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে আপনার
শরাঘাত হয় কি?”
“হাঁ, ভন্তে! হয়।”
“মহারাজ! তখন আপনি সেই
ক্ষতস্থানে মলম লাগান কি,
তৈল মালিশ
করান
কি এবং সূক্ষ্ম বস্ত্রের
পট্টি বাঁধন কি?”
“হাঁ, ভন্তে! এইরূপ
করা হয়।”
“মহারাজ! আপনার সেই ক্ষত খুব
প্রিয় কি যাহার জন্য
উহাতে মলম
লাগান, তৈল মালিশ করান
ও সূক্ষ্ম বস্ত্রের পট্টি বাঁধান?”
“ভন্তে! ক্ষত আমার প্রিয়
নহে, কিন্তু নতুন মাংস উৎপত্তির
নিমিত্ত ঐ সমস্ত
পরিচর্যা করিতে হয়।”
“মহারাজ! তদ্রপ প্রব্রজিতদের আপন দেহ প্রিয়
নহে, কিন্তু তাঁহারা বহ্মচর্য
পালনের
নিমিত্ত অনাসক্ত ভাবে দেহের এত
যত্ন ও আদর করেন।
ভগবানও দেহকে ব্রণোপম বলিয়াছেন; সেই কারণে প্রব্রজিতগণ
অনাসক্ত ভাবে ব্রণের ন্যায়
দেহের পরিচর্যা করেন। ভগবান ইহাও বলিয়াছেন- “আর্দ্র
চর্মে আচ্ছাদিত এই দেহ নবমুখযুক্ত,
মহাব্রণ সদৃশ যাহার সর্বদিক
দিয়া সর্বদা অশুচি, পচা ও দুর্গন্ধ
নিঃসৃত হইতেছে’।”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি দক্ষ।”
বুদ্ধ সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী
২০। রাজা বলিলেন,
“ভন্তে নাগসেন! বুদ্ধ সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী ছিলেন
কি?”
“হাঁ, মহারাজ! বুদ্ধ
সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী ছিলেন।”
“ভন্তে! তাহা হইলে তিনি
শিষ্যগণের বিনয় শিক্ষাপদ ক্রমান্বয়ে
প্রণয়ন করিয়াছেন কেন?” (অর্থাৎ একই সঙ্গে সমস্ত
বিনয় বিধি প্রণয়ন করিলেন
না কেন?)”
“মহারাজ! আপনার কোন বৈদ্য আছেন
কি যিনি পৃথিবীর সমস্ত
রোগের ঔষধ জানেন?”
“হাঁ, ভন্তে! আছেন।”
“মহারাজ! সেই বৈদ্য রোগ
হইলেই কি রেগীকে ঔষধ
সেবন করায় অথবা রোগ
না হইলে?”
“ভন্তে! রোগ হইলেই তিনি
রোগীকে ঔষধ সেবন করান,
রোগ না হইলে নহে”
“মহারাজ! এইরূপ ভগবানও সর্বজ্ঞ ও সর্বদর্শী; সময়
উপস্থিত না হইলে তিনি
শ্রাবকদের নিমিত্ত কোন শিক্ষাপদ প্রণয়ন
করেন নাই। উচিত সময়
হইলেই তিনি শ্রাবকদের নিমিত্ত
যাবজ্জীবন অলংঘনীয় শিক্ষাপদ প্রণয়ন করিয়াছেন।”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি দক্ষ।”
বুদ্ধের মহাপুরুষ লক্ষণ
২১। রাজা বলিলেন,
“ভন্তে নাগসেন! বুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে বত্রিশ মহাপুরুষ লক্ষণযুক্ত, অশীতি অনুব্যঞ্জন শোভিত, সুবর্ণ দেহধারী, কাঞ্চন সদৃশ চর্ম-বিশিষ্ট
ছিলেন এবং তাঁহার শরীর
হইতে এক ব্যাম পরিমাণ
চতুর্দিকে জ্যোতি বিচ্ছুরিত হইত কি?”
“হাঁ, মহারাজ! প্রকৃতপক্ষে
তিনি ঐরূপ ছিলেন।”
“ভন্তে! তাঁহার মাতা-পিতাও কি
তদ্রুপ ছিলেন?”
“না, মহারাজ! তাঁহারা
সেইরূপ ছিলেন না।”
“ভন্তে! তাহা হইলে বুদ্ধও
সেইরূপ হইতে পারেন না,
কেননা পুত্র স্বীয় মাতা কিংবা মাতৃপক্ষের
সদৃশ হয় অথবা পিতা
কিংবা পিতৃপক্ষের সদৃশ হয়।”
স্থবির কহিলেন, “মহারাজ! কোন শতপদ্ম আছে
কি?”
“হাঁ ভন্তে! আছে।”
“উহা কোথায় উৎপন্ন
হয়?”
“কর্দ্দমে জন্মে এবং জলে বর্ধিত
হয়।”
“মহারাজ! বর্ণ, গন্ধ কিংবা রসে
পদ্ম কর্দ্দম সদৃশ হয় কি?”
“না, ভন্তে!”
“বর্ণ, গন্ধ কিংবা রসে
জলের সদৃশ হয় কি?”
“না, ভন্তে!”
“মহারাজ! এইপ্রকারে যদিও ভগবান এইরূপ
ছিলেন কিন্তু তাঁহার মাতাপিতা সেইরূপ ছিলেন না।”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি দক্ষ।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।