দ্বিতীয় অধ্যায়: ভালোবাসা ও অঙ্গীকার
For more details of Buddhism visit "www.bds969.com" (Buddha, Dhamma, Sangah)
#বিয়ে-
২৫
ব্রহ্মচারী ভিক্ষু হওয়ার পর থেকে আমি
অনেক মেয়ের বিয়ে দিয়েছি।
বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে আমার কাজের একটা
অংশ হলো বৌদ্ধ বিবাহ অনুষ্ঠানের ধর্মীয় অংশটা সম্পন্ন করা। আমার বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে,
বিয়ের আনুষ্ঠানিক কাজ পরিচালনাকারী হলেন একজন গৃহী বৌদ্ধ। কিন্তু দম্পতিদের অনেকেই
মনে করে, আমিই তাদের বিয়ে দিয়েছি। কাজেই, আমি অনেক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি, অনেক ছেলেকেও
বিয়ে দিয়েছি।
বলা হয়ে থাকে, বিয়েতে তিনটা আংটি থাকে-
এনগেজমেন্ট আংটি, বিয়ের আংটি এবং দুঃখের আংটিও!
তাই ঝামেলা আসাটা প্রত্যাশিত। আর যখন
ঝামেলা হয়, তখন আমি যাদেরকে বিয়ে দিয়েছি, তারা প্রায়ই আমার সাথে কথা বলতে আসে। ভিক্ষু
হওয়াতে আমি সাদাসিধে জীবন পছন্দ করি। তাই আমি আমার বিবাহ পরবর্তী সেবা হিসেবে তিনটা
গল্প বলি, যতদূর পারা যায় আমরা তিনজন যাতে ঝামেলামুক্ত থাকতে পারি আর কি!
#অঙ্গীকার
- ২৫
সম্পর্ক ও বিয়ের ক্ষেত্রে আমার দৃষ্টিভঙ্গি
হচ্ছে: যখন তারা দুজন বাইরে ঘুরতে যাচ্ছে, তখন তারা সামান্য জড়িয়ে গেছে মাত্র। যখন
তারা এনগেজ্ড, তখনো তারা কেবল জড়িয়ে গেছে, হয়তো আরো একটু গভীরভাবে। কিন্তু যখন তারা
বিয়ের শপথবাক্য পাঠ করে সবার সামনে, তখন সেটা অঙ্গীকার হয়ে দাঁড়ায়।
বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই হচ্ছে অঙ্গীকার।
লোকেরা যাতে এর অর্থ সারা জীবনের জন্য মনে রাখে, এজন্য আমি অনুষ্ঠানের সময় এর অর্থ
বুঝিয়ে দিই। আমি তাদেরকে ব্যাখ্যা করে বলি যে, জড়িত হওয়া আর অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া দুটো
ভিন্ন জিনিস, অনেকটা শুয়োরের মাংস ও ডিমের মতো।
এই পর্যায়ে এসে বর কনের আত্মীয় স্বজন
ও বন্ধুবান্ধবেরা একটু কান খাড়া করে। তারা অবাক হয়ে ভাবতে থাকে, ‘বিয়ের সাথে শুয়োরের
মাংস ও ডিমের সম্পর্ক কী?’ আমি বলতে থাকি, ‘শুয়োরের মাংস ও ডিম, এই দুটো জিনিসে মুরগী
জড়িত থাকে কিন্তু শুয়োর থাকে অঙ্গীকারবদ্ধ। এই বিয়েটা তাই শুয়োরের বিয়ে হোক!’
#মুরগী
ও হাঁস- ২৬
এটা উত্তর পূর্ব থাইল্যান্ডে আমার শিক্ষক
আজান চাহ্ এর একটা প্রিয় গল্প। এক নববিবাহিত দম্পতি কোন এক সুন্দর গ্রীষ্মের সন্ধ্যায়
রাতের খাবার খেয়ে জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে গেল। তারা দুজনে খুব আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছিল
যতক্ষণ না তারা দূর থেকে একটা শব্দ শুনল:
‘কোয়াক! কোয়াক!’
‘শোন তো,’ স্ত্রী বললো, ‘এটি নিশ্চয়ই একটা
মুরগি হবে।’
‘না, না। এটা একটা হাঁস,’ স্বামী বললো।
‘না, আমি নিশ্চিত ওটা একটা মুরগি।’
‘অসম্ভব। মুরগিরা ডাকে কুক্ কুরু কু! হাঁসেরা
ডাকে কোয়াক্ কোয়াক্! ওটা একটা হাঁস,
প্রিয়তমা,’
স্বামী এই প্রথম একটু বিরক্তি নিয়ে বলল।
‘কোয়াক্! কোয়াক্!’ আবার শব্দ হলো।
‘শুনেছো! এটা একটা হাঁস,’ স্বামীটি বললো।
‘না, প্রিয়। ওটা একটা মুরগি, আমি নিশ্চিত,’
স্ত্রীটি দৃঢ় স্বরে পা দাপিয়ে ঘোষণা করলো।
‘শোন স্ত্রী! ওটা ... একটা ... হাঁস। হ
আকার চন্দ্রবিন্দু স। হাঁস! বুঝেছো?’ স্বামী রেগে
গিয়ে
বললো।
‘কিন্তু ওটা তো একটা মুরগি,’ স্ত্রী আপত্তি
জানালো।
‘ওটা একটা হাঁসের ছানা, তুমি, তুমি.....’
স্বামীটি এমন কিছু বলে বসল যা তার বলা উচিত ছিল না।
এটি
আবার ডেকে উঠল, ‘কোয়াক্ কোয়াক!’
স্ত্রীটি
এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো, ‘কিন্তু এটা যে একটা মুরগি!’
স্বামীটি
দেখল তার স্ত্রীর চোখ অশ্রুতে টলমল করছে। অবশেষে তার মনে পড়ল কেন সে তাকে বিয়ে করেছে।
তার চেহারা কোমল হয়ে এল আর সে নরম সুরে বললো, ‘দুঃখিত প্রিয়তমা। আমার মনে হয় তোমার
কথাই ঠিক। ওটা একটা মুরগি।’
‘ধন্যবাদ, প্রিয়তম,’ স্ত্রীটি স্বামীর
হাত ধরে বললো।
বনের মধ্য থেকে ‘কোয়াক্ কোয়াক্’
শব্দ ভেসে এলো আবার। তারা আবার তাদের ভালোবাসাময় যাত্রা শুরু করলো।
গল্পটার
শিক্ষা হল, যা স্বামী অবশেষে বুঝেছিল যে, মুরগি হোক বা হাঁস হোক, তাতে কী আসে যায়?
এর থেকে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের ঐকতান, যেটি তারা উপভোগ
করেছিল এমন এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায়। এমন গুরুত্বহীন ব্যাপার নিয়ে কত বিয়ে ভেঙে যায়?
কত বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ হয় এমন হাঁস না মুরগি বিষয়?
যখন আমরা এই গল্পটি বুঝি, আমরা আমাদের
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনা করি। হাঁস না মুরগি এ বিষয়ে সঠিক হওয়া থেকেও ঢের গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় হলো বিয়েটা। আচ্ছা, বলুন তো, কতবার আমরা নিশ্চিতভাবে, পরম আত্মবিশ্বাসের সাথে
জানতাম যে আমরাই সঠিক, অথচ পরে জেনেছি যে আমাদের ধারণা ছিল ভুল? কে জানে? সেটি হয়তো
জিন পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া কোন মুরগিও হতে পারে, যা হাঁসের মতো করে ডাকে।
(লিঙ্গ সমতা এবং শান্তিপূর্ণ ভিক্ষু জীবনের
জন্য, প্রতিবার গল্পটি বলতে গিয়ে আমি সাধারণত মুরগি ও হাঁসের দাবিকারি বক্তাদেরকে পরস্পর
পাল্টে দিই।)
--------------------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।