পঞ্চম অধ্যায়: সুখ সৃষ্টি করা
#প্রশংসা
বাক্য আপনাকে সব জায়গায় নিয়ে যাবে- ৭৩
আমরা সবাই নিজেদের সম্বন্ধে প্রশংসাবাক্য
শুনতে চাই। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ বেশির ভাগ সময় কেবল আমাদের দোষের কথাই শুনি। আমি মনে
করি সেটা ন্যায্য পাওনা, কেননা বেশিরভাগ সময় আমরা অন্যের দোষ নিয়েই কথা বলি। প্রশংসার
বাক্য উচ্চারণ করি খুব কদাচিৎ। আপনি কথা বলার সময় নিজের কথাগুলো শোনার চেষ্টা করুন।
প্রশংসা না পেলে ভালো গুণগুলো সুদৃঢ় হয়
না, আর তাতে সেই গুণগুলো ক্ষয় হয়ে হয়ে একসময় মারা যায়। কিন্তু ছোট্ট একটা প্রশংসা সেখানে
বিরাট এক উৎসাহের ভিত্তি গড়ে দেয়। আমরা সবাই প্রশংসিত হতে চাই; আর সেই প্রশংসাবাক্য
শোনার জন্য আমাদের কী করা উচিত সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে চাই।
একবার আমি একটা ম্যাগাজিনে একটা চিকিৎসক
দল সম্পর্কে পড়েছিলাম, যারা ছোট বাচ্চাদের খাওয়ার সমস্যা দূর করতে ভালো গুণাবলীগুলো
সুদৃঢ় করার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়েছিল। এই বাচ্চারা যখনই কোন কঠিন খাদ্যবস্তু খেত,
সাথে সাথে সেটা বমি করে ফেলে দিত। কোন বাচ্চা এক মিনিট বা তারও বেশি সময় খাদ্যবস্তু
পেটে রাখতে পারলে চিকিৎসকের দলটি তার জন্য একটা পার্টির আয়োজন করতো। তাদের বাবা-মারা
কাগজের টুপি মাথায় দিয়ে চেয়ারের উপরে দাাঁড়িয়ে উল্লাস করতো আর হাততালি দিতো, নার্সেরা
নাচত আর রঙিন কাগজের ফিতে নাচিয়ে বেড়াতো। কেউ একজন বাচ্চাদের প্রিয় গানটি বাজিয়ে শোনাতো।
খাদ্যের সবটুকু পেটের মধ্যে রাখতে পারলে সেই বাচ্চাটিকে নিয়ে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন
করা হতো।
এভাবে বাচ্চারা বেশি বেশি সময় ধরে খাদ্যকে
তাদের পেটে ধরে রাখতে সমর্থ হলো। এমন আনন্দ ও উৎসবের কারণ হতে পেরে তাদের স্নায়ুতন্ত্র
নতুন করে পুনর্বিন্যস্ত হলো, সেই শিশুরা প্রশংসাকে এতটাই চেয়েছিল। আমরাও তাই চাই।
যে এই কথা বলেছে, ‘প্রশংসাবাক্যতে কোথাও
পৌঁছানো যায় না’ সে একজন... কিন্তু আমি মনে করি তাকে
আমাদের ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। হে বন্ধু, প্রশংসাবাক্য আপনাকে সবখানে নিয়ে যাবে!
#কীভাবে
একজন ভিআইপি হতে হয়- ৭৪
আমাদের বিহারের প্রথম বছরে আমাকে শিখতে
হয়েছিল কীভাবে কোন কিছু নির্মাণ করতে হয়। প্রথম বড় নির্মাণ কাজ ছিল ছয়টা টয়লেট ও ছয়টা
বাথরুম নিয়ে গঠিত গোসলখানার অংশটি। আমাকে পাইপ বসানোর কাজের সবকিছু শিখতে হয়েছিল। আমি
বিহারের একটা ডিজাইন নিয়ে একটা দোকানে গেলাম, ডিজাইনটা কাউন্টারে বিছিয়ে বললাম, ‘সাহায্য
চাই!’
আমার বিল্ডিংয়ে অনেক মাল লাগবে, তাই কাউন্টারের
লোকটা, যার নাম ফ্রেড, সে কিছুটা অতিরিক্ত সময় দিতে কোন কার্পণ্য করলো না। সামান্য
কিছু সময় নিয়ে সে বুঝিয়ে দিল কোন কোন পার্টস লাগবে, কেন সেগুলো লাগবে, কীভাবে সেগুলোকে
একসাথে জোড়া দিতে হয়। অবশেষে প্রচুর ধৈর্য্য, কান্ডজ্ঞান ও ফ্রেডের উপদেশ নিয়ে বর্জ্য
পানি নিষ্কাশনের পাইপ বসানোটা শেষ হলো। স্থানীয় কাউন্সিলের স্বাস্থ্য পরিদর্শক আসলো,
তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করলো পুরো পাইপিং সিস্টেমটা। এটি পাস হয়ে গেল। আমি তো খুশিতে
ডগমগ।
কয়েকদিন পরে পাইপ ও তার সরঞ্জামগুলোর
বিল এসে গেল। আমি বিহারের কোষাধ্যক্ষের কাছ থেকে একটি চেক চেয়ে নিয়ে একটি ধন্যবাদের
চিঠি, বিশেষ করে আমাদের বিহারটি শুরু করতে ফ্রেডের সাহায্যের কথা উল্লেখ করে তাদের
ঠিকানায় চেকসহ চিঠিটা পাঠিয়ে দিলাম।
আমি সেই সময় বুঝি নি যে, দোকানটা একটা
বড় একটা পাইপের সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, যার অনেকগুলো শাখা ছড়িয়ে আছে গোটা পার্থ
শহর জুড়ে। তাদের আছে আলাদা একটা একাউন্টস ডিপার্টমেন্ট। আমার চিঠিটা ঐ ডিপার্টমেন্টের
এক কেরাণী খুলে পড়ে দেখল। সে এই প্রশংসাসূচক চিঠিটা পেয়ে এমন অবাক হলো যে তারা চিঠিটা
তৎক্ষণাৎ একাউন্টসের ম্যানেজারের কাছে নিয়ে গেল। সাধারণত একাউন্টস সেকশন চেকের সাথে
কোন চিঠি পেলে তা হয় অভিযোগপত্র। একাউন্টস ডিপার্টমেন্টের প্রধানও অবাক হয়ে গেল আর
চিঠিটা নিয়ে সোজা কোম্পানির এমডির কাছে গেল। এমডি চিঠিটা পড়ে এমন খুশিহলো যে সে তাদের অনেকগুলো শাখা থেকে খুঁজে খুঁজে যে শাখায়
ফ্রেড কাজ করে, সেখানকার কাউন্টারে ফ্রেডকে ফোন করে আমার দেওয়া চিঠিটা সম্পর্কে বললো,
যা তখনো এমডির মেহগনি কাঠের টেবিলে পড়ে ছিল।
‘ঠিক এমন জিনিসই আমরা আমাদের কোম্পানিতে
খুঁজছিলাম, ফ্রেড। ক্রেতাদের সাথে সুন্দর বোঝাপাড়া, সেটাই তো সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ!’
’জ্বি স্যার।’
’তুমি খুব চমৎকার একটা কাজ করেছো, ফ্রেড।’
’জ্বি স্যার।’
’তোমার মতো আরো অনেক কর্মচারি পেলে ভালো
হতো।’
’জ্বি স্যার।’
’তোমার বেতন কত এখন? আমরা মনে হয় সেটা
আরেকটু ভালো করতে পারি?’
’জ্বি, স্যার!’
’ভালো কাজ করেছো, ফ্রেড!’
’থ্যাঙ্ক ইউ, স্যার।’
তো, আমি ঘন্টা দুয়েক পরে আবার সেই পাইপের
সরঞ্জামের দোকানে গেলাম, কী যেন একটা পার্টস বদলাতে। আমার আগেই দু’জন
অস্ট্রেলিয়ান মিস্ত্রি দাঁড়িয়েছিল, এক একজনের কাঁধ টয়লেটের টাংকির মতো বিশাল চওড়া।
তারা আমার আগে এসে মালের জন্য অপেক্ষা করছিল। কিন্তু ফ্রেড আমাকে দেখল।
‘ব্রাহম্!’ সে বিশাল একটা হাসি দিয়ে বললো,
‘এখানে এসো।’
আমাকে ভিআইপি অভ্যর্থনা দেওয়া হলো, নিয়ে
যাওয়া হলো দোকানের পিছনের স্টোরে, যেখানে কোন কাস্টমারের যাওয়ার কথা নয়। সেখান থেকে
আমাকে প্রয়োজনমত যেকোন পার্টস পছন্দ করতে দেওয়া হলো। কাউন্টারে ফ্রেডের সহকারী আমাকে
এমডির ফোনের ব্যাপারটা জানালো।
আমি যে পার্টসটা খুঁজছিলাম, তা পেয়ে গেলাম।
তবে যেটা ফেরত দিচ্ছিলাম, তা থেকে এটা ঢের দামী ছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কত দিতে
হবে আমার? আগেরটার সাথে এটার দামের পার্থক্য কেমন?’
ফ্রেড একটা একান ওকান চওড়া হাসি দিয়ে
বললো, ‘ব্রাহম্, তুমি হলে সেটা আমার জন্য কোন পার্থক্য নয়।’
তাই প্রশংসার ভালো অর্থনৈতিক দিকও আছে।
---------------চলমান
---------------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।