সংসার কি
২৭। রাজা বলিলেন,
“ভন্তে নাগসেন! আপনারা যে সংসার বলেন,
সেই সংসার কি?”
“মহারাজ! প্রাণী এখানে জন্মগ্রহণ করিয়া এখানেই মরে, এখানে মরিয়া
অন্যত্র জন্মগ্রহণ করে, সেস্থানে জন্মিয়া
সেই স্থানে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, আবার
সেই লোকে মরিয়া অন্য
লোকে উৎপন্ন হয়Íএই ভাবে
সংসরণ বা গমনামগনই সংসার।”
“মহারাজ! কোন ব্যক্তি পাকা
আম খাইয়া উহার আঁটি রোপন
করে। তাহা হইতে বিরাট
আম্রবৃক্ষ জন্মিয়া ফল ধারণ করিল।
তখন সেই ব্যক্তি উহারও
পাকা ফল খাইয়া আঁটি রোপন করিল
ও উহা হইতেও বৃহৎ
আম্রবৃক্ষ জন্মিয়া ফল ধারণ করিল।
এইরূপে এই বীজাঙ্কুর প্রবাহে
অন্ত দেখা যায় না।
মহারাজ! এই প্রকারে প্রাণী
এখানে জন্মিয়া এখানে মরে ও ----ইহাই
সংসার।”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি দক্ষ।”
পূর্বকৃতি স্মরণ
২৮। রাজা বলিলেন,
“ভন্তে নাগসেন! দীর্ঘকাল অতীতের বিষয় আমরা কি
প্রকারে স্মরণ করি?”
“মহারাজ!
স্মৃতির দ্বারা।”
“ভন্তে নাগসেন! চিত্তদ্বারা স্মরণ করে, স্মৃতিদ্বারা নহে-
নয় কি?”
“মহারাজ! আপনার এমন কোন কার্য
আছে, যাহা পূর্বে আপনি
স্বয়ং করিয়া ভুলিয়া গিয়াছেন?”
“হাঁ, ভন্তে!”
“মহারাজ! কেমন, সেই সময় আপনি
কি চিত্তহীন ছিলেন?”
“না, ভন্তে! সেই
সময় আমার স্মৃতি ছিল
না।”
“মহারাজ! তাহা হইলে আপনি
কেন বলিলেন, চিত্তদ্বারা স্মরণ করে, স্মৃতিদ্বারা নহে?”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি দক্ষ।”
অভিজ্ঞা-জনিত স্মৃতি
২৯। রাজা বলিলেন,
“ভন্তে নাগসেন! সমস্ত স্মৃতি কি অভিজ্ঞা-সম্ভুত,
অথবা কৃত্রিম কৌশল হইতেও উৎপন্ন
হয়?”
“মহারাজ! অভিজ্ঞতা হইতেও উৎপন্ন এবং কৃত্রিম কৌশল
হইতেও হয়।”
“ভন্তে নাগসেন! সমস্ত স্মৃতি অভিজ্ঞা হইতে হয়, কৃত্রিম
কৌশল হইতে হয় না।”
“মহারাজ! যদি কৃত্রিম কৌশল
হইতে স্মৃতি উৎপন্ন না হয় তবে
শিল্পীদের কর্মশালা, শিল্পকেন্দ্র কিংবা বিদ্যালয়ের প্রয়োজন নাই এবং আচার্যগণ
নিরর্থক। যেহেতু কৃত্রিম কৌশল হইতেও স্মৃতি
হয় তজ্জন্য এই সকলের প্রয়োজন
আছে এবং আচার্যগণেরও সার্থকতা
আছে।”
“ভন্তে নাগসেন! আপনি দক্ষ।”
[তৃতীয় বর্গ সমাপ্ত]
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।