হৃদয়ের দরজা খুলে দিন (পর্ব-১০) তৃতীয় অধ্যায়



তৃতীয় অধ্যায়: ভয় এবং ব্যথা
#ভয় থেকে মুক্তি - ৩৫
            দেয়ালে শুধুমাত্র দুটি খারাপ ইট দেখাটা যদি মনস্তাপের কারণ হয়, তাহলে সেই দেয়াল দেখে দেখে ভবিষ্যতের খারাপ কিছু ভেবে বসাটা আমাদের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যখন আমরা ভয়ে অন্ধ হয়ে যাই, দেয়ালের বাকি অংশটা আর দেখতে পাই না। অতএব ভয়কে জয় করতে হয় পুরো দেয়ালটা দেখে, শুধু খারাপ অংশটা দেখে নয়। উদাহরণস্বরূপ আমার সিঙ্গাপুরে সাম্প্রতিক ভ্রমণের গল্পটা বলা যায়।  
 
সিঙ্গাপুরে আমার ধারাবাহিক চারটি দেশনা দেওয়ার কথা ছিল অনেক মাস আগে থেকেই দেশনালয় হিসেবে বুক করা হয়েছিল ২৫০০ আসন সম্বলিত ব্যয়বহুল সিঙ্গাপুরের সানটেক সিটি অডিটোরিয়াম। বাস স্টেশনগুলোতে দেশনার পোস্টার টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর এলো সার্স সংকট (সার্স একটি সংক্রামক রোগ)। আমি যখন সিঙ্গাপুরে পৌঁছলাম, তখন স্কুলগুলো বন্ধ, আবাসিক এলাকাগুলো অবরুদ্ধ, সরকার লোকজনকে কোন জনসভায় যোগ না দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। ভয় ছিল আকাশচুম্বী। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো,-আমরা কি দেশনার প্রোগ্রামগুলো বাতিল করবো?’
সেদিন সকালে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় বড় বড় অক্ষরে ছাপা হলো যে নিরানব্বই জন সিঙ্গাপুরিয়ানের সার্স রোগ ধরা পড়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম সিঙ্গাপুরের বর্তমান জনসংখ্যা কত? প্রায় চল্লিশ লাখ। ‘তো,’ আমি মন্তব্য করলাম, ‘তার মানে হচ্ছে ৩৯,৯৯,৯০১ জনের সার্স রোগ হয় নি। কাজেই দেশনা চলুক।
কিন্তু কেউ যদি সার্স রোগে আক্রান্ত হয়?’ ভয় বললো।
কিন্তু যদি না হয়?’ প্রজ্ঞা পাল্টা প্রশ্ন করলো। সম্ভাবনার পাল্লা ভারি ছিল প্রজ্ঞার দিকেই। তাই আগের শিডিউল অনুযায়ী দেশনার আয়োজন করা হলো। প্রথম রাতে দেশনা শুনতে এলো পনেরশ লোক। এরপর থেকে প্রতিরাতে লোকজনের সংখ্যা বাড়তেই থাকলো। শেষ দেশনার রাতে হাউসফুল হয়ে গেল অডিটোরিয়াম। প্রায় ৮০০০ লোক দেশনাগুলো শুনতে এসেছিল। তারা অযৌক্তিক ভয়ের বিরুদ্ধে যেতে শিখেছিল, সেটা ভবিষ্যতে তাদের সাহসকে আরো শক্তিশালী করবে। তারা দেশনাগুলো বেশ উপভোগ করেছিল আর খুশিমনে চলে গিয়েছিল। তার মানে হচ্ছে তাদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আরো মজবুত হয়েছিল। প্রত্যেক দেশনা শেষে আমি তাদেরকে জোর গলায় বলে দিয়েছিলাম যে, যেহেতু তারা আমার মজার গল্পগুলো শুনে হেসে লুটোপুটি খেয়েছে, এতে করে তাদের ফুসফুসের ব্যায়াম হয়ে গেছে আর তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সিস্টেমটা আরো সুদৃঢ় হয়েছে! সেই শ্রোতাদের মধ্যে থেকে একজনও তো সার্সে আক্রান্ত হয় নি।
ভবিষ্যতের আছে অপার সম্ভাবনা। যখন আমরা খারাপ সম্ভাবনাগুলোতে নিজেদেরকে ডুবিয়ে রাখি, সেটাকেই বলে ভয়। যখন আমরা অন্যান্য সম্ভাবনাগুলোকেও দেখতে পাই, আর সেটাই বেশিরভাগ সময় হয়, সেটাকেই বলে ভয় থেকে মুক্তি।

#ভবিষ্যৎ বাণী করা- ৩৬
অনেকেই ভবিষ্যৎ জানতে চান। কেউ কেউ অধৈর্য্য হয়ে ভবিষ্যদ্বাণী ও ভবিষ্যৎবক্তাদের সাহায্য নেন। আমি আপনাকে ভবিষ্যদ্বাণী বিষয়ে সতর্ক করে দিতে চাই: কখনোই একজন গরীব ভবিষ্যৎ বক্তাকে বিশ্বাস করবেন না!
ধ্যানী ভিক্ষুরা দারুণ ভবিষ্যৎ বক্তা হিসেবে খ্যাত, কিন্তু তারা তা সহজে আপনাকে বলবে না।
একদিন এক ভক্ত আজান চাহকে তার ভবিষ্যৎ বলে দিতে অনুরোধ জানাল। আজান চাহ না করে দিলেন: ভালো ভিক্ষুরা ভবিষ্যৎ বলে দেয় না। ভক্ত তো নাছোড়বান্দা। সে আজান চাহকে মনে করিয়ে দিল কতবার সে তাকে পিন্ডদান করেছে, তার বিহারে সে কতটাকা দান করেছে, আজান চাহকে সে তার নিজের গাড়িতে করে কতবার ঘুরিয়েছে, নিজের কাজ ও পরিবার ফেলে। আজান চাহ দেখলেন যে লোকটি তার ভবিষ্যৎ জেনেই ছাড়বে, তাই তিনি বললেন যে একবারের জন্য তার ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া যায়। ‘ঠিক আছে, তোমার হাতটা দাও। একটু দেখে দিই।
ভক্ত তো উত্তেজনায় ভরপুর। আজান চাহ অন্য কোন ভক্তকে হাত দেখে দেন নি। এটা বিশেষ একটা সুযোগ। তাছাড়া আজান চাহ একজন সিদ্ধপুরুষ হিসেবে খ্যাত। তার অলৌকিক শক্তির কথা সবার জানা। তিনি যা বলেন তা হবেই, নিশ্চিতভাবেই হবে। আজান চাহ্ তার ভক্তের হাতের রেখাগুলো আঙুল দিয়ে টিপে টিপে দেখতে লাগলেন। একটু পর পর তিনি বলতে লাগলেন, ‘ওহ, দারুণ তো অথবা ‘ভালো, ভালো, ‘অসাধারণ!’ বেচারা ভক্ত ভালো কোন ভবিষ্যদ্বাণীর আশায় খুশিতে ডগমগ।
যখন আজান চাহর দেখা শেষ হলো, তিনি ভক্তের হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘ হে উপাসক, তোমার ভবিষ্যৎ এটাই হবে।
‘জ্বি, বলুন। ভক্ত তাড়াতাড়ি বলে উঠলো।
‘আর, আমি কিন্তু কখনোই ভুল করি না। আজান চাহ এর সাথে যোগ করলেন।
‘আমি জানি, আমি জানি। ঠিক আছে। আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে?’ ব্যগ্র সুরে বলে উঠলো ভক্ত।
‘তোমার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত,’ আজান চাহ্ বললেন। তিনি কিন্তু ভুল বলেন নি!


-----------------চালমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !