হৃদয়ের দরজা খুলে দিন (পর্ব-৩৪) সপ্তম অধ্যায়


`সপ্তম অধ্যায়: প্রজ্ঞা ও অন্তরের নিরবতা
#মৈত্রীর ডানা- ১১৫
যদি দয়াকে একটা সুন্দর পায়রা হিসেবে কল্পনা করা হয়, তাহলে প্রজ্ঞা হচ্ছে তার ডানা। প্রজ্ঞাহীন দয়া কখনই কাজে আসে না।
একজন বয় স্কাউট দিনের ভালো কাজটা করলো একজন বৃদ্ধা মহিলাকে ব্যস্ত সড়ক পার করিয়ে দিয়ে। সমস্যাটা ছিল, বৃদ্ধা মহিলাটি রাস্তা পার হতে চায় নি। কিন্তু লজ্জায় সে তা মুখ ফুটে বলতে পারে নি।
দুর্ভাগ্যক্রমে উপরের গল্পটা আমাদেরকে ভালোভাবে বলে দেয় যে পৃথিবীতে এখন দয়ার নামে এসব কী হচ্ছে। আমরা প্রায়ই ধরে নিই যে অন্যদের কী প্রয়োজন সেটা আমাদের জানা আছে। এক তরুণ, জন্ম থেকে বধির, সে তার নিয়মিত চেক আপের জন্য তার বাবামায়ের সাথে এক ডাক্তারের কাছে গেল। ডাক্তার খুব আগ্রহভরে কোন এক মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতির কথা তার বাবা মাকে জানাল। জন্ম থেকে বধির এমন লোকদের দশ শতাংশকে একটি সাধারণ, স্বল্পব্যয়ী অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পূর্ণ শ্রবণক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া যায়। সে তরুণটির বাবামাকে জিজ্ঞেস করলো তারা এটি চেষ্টা করে দেখবে কিনা। তারা তাড়াতাড়ি সায় দিল এই প্রস্তাবে।
সেই তরুণটি ছিল শতকরা দশ জনের একজন, যে তার শ্রবণক্ষমতা পুরোপুরি ফিরে পেল। কিন্তু সে তার বাবা-মা ও ডাক্তারের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে গেল। চেক আপের সময় ডাক্তার ও তার বাবা মা কী ব্যাপারে আলাপ করেছিল তা সে শোনে নি। সে শুনতে চায় কি না, তাও কেউ জিজ্ঞেস করে নি। এখন সে অভিযোগ করছে যে তাকে সবসময় অপ্রয়োজনীয় শব্দের যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে, যার কোন মানে হয় না। গোড়া হতেই সে কখনো শুনতে চায় নি।
তার বাবা মা, ডাক্তার ও আমি নিজে, এই গল্পটি পড়ার আগে, ধরে নিয়েছিলাম যে সবাই শুনতে চায়। আমরা যা জানতাম, ঠিকই জানতাম। এমন ধারণায় পূর্ণ যে দয়া ও মৈত্রী, তা বোকামি ও বিপদজনক। এটা জগতে অনেক দুঃখকষ্টের সৃষ্টি করে।

#সন্তানের যত্ন নেওয়া- ১১৬
বাবা-মাদেরকে নিয়ে ঝামেলাটা হচ্ছে তারা সবসময় মনে করে তাদের সন্তানের প্রয়োজনটা তারাই সবচেয়ে ভালো জানে। কিন্তু প্রায়ই তারা এখানে ভুল করে। মাঝে মধ্যে তাদেরটা সঠিক হয় বটে, যেমনটা চাইনীজ কবি সু তুং পো (১০৩৬-১১০১) প্রায় এক হাজার বছর আগে তার এক কবিতায় বলেছিলেন-

আমার সন্তানের জন্মক্ষণে
পরিবারে, যখন একটা শিশুর জন্ম হয়,
তারা চায়, সে হবে বুদ্ধিমান।
আমি, এত বুদ্ধিমান হয়ে
ধ্বংস করলাম আমার সারাটা জীবন।
আমার কেবল একটাই আশা,
শিশুটি প্রমাণ করুক সে মুর্খ ও বোকা।
এতে করে সে একটা নিরিবিলি জীবন পাবে,
হবে একজন সরকারী মন্ত্রী।
                                                                                                                                    ------------চলমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !