আমি এক শুক্রবার পার্থে বহুসংখ্যক শ্রোতার সামনে আগের গল্পটা বলেছিলাম। পরের দিন রোববার এক ক্রুদ্ধ পিতা এসে আমাকে বকা দিল। সে তার কিশোর ছেলেকে নিয়ে শুক্রবারের ঐ দেশনাটা শুনেছিল। শনিবার সন্ধ্যায় ছেলেটি বন্ধুদের নিয়ে বাইরে যেতে চাইল। তার পিতা তাকে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কি তোমার বাড়িকাজগুলো করেছো, পুত্র?’ তার ছেলে জবাব দিল, ‘আজান ব্রাহম্ গত রাতে আমাদেরকে যেভাবে শিখিয়েছেন, বাবা, যা করা হয়েছে, তাই সমাপ্তি। পরে দেখা হবে!’
পরের সপ্তাহে আমি আরেকটা গল্প বললাম।
অস্ট্রেলিয়ার বেশির ভাগ লোকেরই তাদের বাড়িতে একটা করে বাগান আছে কিন্তু কেবল গুটি কয়েকজন জানে, কী করে তাদের বাগানে শান্তি খুঁজে নিতে হয়। অন্যদের জন্য বাগান হলো কাজ করার জায়গা। তাই আমি সেই বাগানওয়ালাদেরকে কিছুক্ষণ বাগানে কাজ করে এটিকে আরো সুন্দর করে তুলতে উৎসাহিত করি আর তাদের মনের সৌন্দর্যের জন্য শান্ত হয়ে বাগানে বসে থাকতে বলি, প্রকৃতির উপহারকে উপভোগের জন্য বলি।
প্রথম বোকা ভাবে, এটা তো খুব ভালো কথা। তাই তারা প্রথমে ছোটখাট কাজগুলো করে ফেলতে মনস্থির করে। এরপরে তারা তাদের বাগানে কয়েক মুহুর্ত শান্তি উপভোগ করতে পারবে। যেহেতু বাগানের ঘাসগুলো ছাঁটা দরকার, ফুলগাছে একটু পানি দিলে ভালো হয়, পাতাগুলো কুড়ালে ভালো হয়, ঝোপগুলো ছোট করা দরকার, পথটা ঝাড়– দেওয়া দরকার... এই ‘ছোটখাট কাজ’ এর সামান্য করতেই তাদের পুরো অবসর সময় চলে যায়। তাদের কাজ কখনোই শেষ হয় না। আর তাই তারাও কয়েক মিনিটের জন্য মনে শান্তি পায় না। আপনি কি খেয়াল করেছেন, আমাদের সমাজে কেবল কবরে থাকা লোকেরাই শান্তিতে বিশ্রাম নেয়?
দ্বিতীয় বোকারা ভাবে যে তারা প্রথম বোকা থেকে চালাক। তারা ঝাড়–, পানি দেওয়ার বালতি, সবকিছু দূরে সরিয়ে রেখে বাগানে বসে বসে কোন একটা ম্যাগাজিন পড়তে থাকে, সম্ভবত বড় বড় ঝকঝকে প্রকৃতির ছবিওয়ালা ম্যাগাজিন। কিন্তু সেটা তো ম্যাগাজিনকে উপভোগ করা, বাগানে শান্তি খুঁজে পাওয়া নয়।
তৃতীয় বোকা বাগানের সব যন্ত্রপাতি দূরে ফেলে দেয়, সব ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, রেডিও সবকিছু সরিয়ে রাখে আর বাগানে শুধু শান্তিতে বসে থাকে... মাত্র দুসেকেন্ডের জন্য! এরপর তারা ভাবতে শুরু করে: ‘বাগানের ঘাসগুলো আসলেই ছাঁটা দরকার। আর ঐ ঝোপগুলো শীঘ্রই ছাঁটা উচিত। যদি আমি ঐ ফুলগুলোতে পানি না দিই, কয়েকদিনের মধ্যেই সেগুলো মারা যেতে পারে। ঐ কোণায় একটা সুন্দর গার্ডেনিয়ার ঝোপ লাগালে ভালো হবে। ইয়েস! সামনে ঐ পাতাবাহারগুলো হলে দারুণ দেখাবে। আমি নার্সারি থেকে একটা আনতে পারি...’ অর্থাৎ সে উপভোগ করছে চিন্তা ও পরিকল্পনাকে। সেখানে কোন মনের শান্তি নেই।
চালাক বাগানকারী ভাবে, ‘আমি অনেকক্ষণ কাজ করেছি। এখন আমার কাজের ফল উপভোগের সময়। শান্তির পদধ্বনি শোনার সময়। তাই বাগানের ঘাসগুলো হয়তো ছাঁটার দরকার, ঝরা পাতাগুলো কুড়ানো দরকার... ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু সেগুলো এখন নয়।’ এভাবে আমরা বাগানকে উপভোগ করার জ্ঞান অর্জন করতে পারি, যদিও বাগানটা নিখুঁত নয়।
সম্ভবত ঝোপের আড়ালেই কোথাও লুকিয়ে আছে সেই বুড়ো জাপানী ভিক্ষুটি যে ঝাঁপ দিয়ে বাগানে বেরিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত এবং সে এটাই বলতে চায় যে আমাদের হযবরল পুরনো বাগানটি সত্যিই নিখুঁত। প্রকৃতপক্ষে আমরা যদি যা কাজ করেছি তার হিসাব করি, যা করা বাকি, তাতে মন দেওয়ার বদলে, তখন হয়তো বুঝবো যে, যা করা হয়েছে তা সমাপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু যদি আমরা কেবল আমাদের দোষ দেখে থাকি, সেই জিনিসগুলো দেখি যেগুলো ঠিক করা দরকার, যেমনটা আমার বিহারের সেই ইটের দেয়ালের মতো, আমরা কখনোই শান্তি খুঁজে পাব না।
বুদ্ধিমান বাগানকারী তাদের পনেরো মিনিটের শান্তিকে প্রকৃতির নিখুঁত অসম্পূর্ণতার মাঝে উপভোগ করে থাকে। কোন চিন্তা নেই, কোন পরিকল্পনা নেই, নিজেকে দোষী ভাবার নেই। আমরা সবাই ন্যায্যত কিছু শান্তি উপভোগ করার যোগ্য; আর অন্যরা ন্যায্যত আমাদের শান্তিকে তাদের পথের বাইরে রাখতে পারে। অতঃপর আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ জীবন বাঁচানো পনের মিনিটের শান্তিকে বের করে নিয়ে আমরা আমাদের বাগানের কাজে আবার হাত দিই।
যখন আমরা আমাদের বাগানে কীভাবে শান্তি খোঁজা যায়, তা বুঝতে পারি, তখন যে কোন সময়ে যে কোন জায়গায় কী করে শান্তি খুঁজে পেতে হয় তাও জেনে যাবো। বিশেষভাবে আমরা জানব কী করে, আমাদের হৃদয়ের বাগানে শান্তি খুঁজে পেতে হয়, যদিও মাঝে মাঝে আমাদের মনে হতে পারে, সবকিছু এত অগোছালো আর কত কী যে করার বাকি রয়ে গেছে এখনো।
চলমান-------
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।