হৃদয়ের দরজা খুলে দিন (পর্ব-৩৬) সপ্তম অধ্যায়



#সমস্যার সমাধান করা-১১৯
বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে প্রায়ই আমাকে রেডিওতে লাইভ টক শোগুলোতে কথা বলতে হয়। সম্প্রতি এক রেডিও স্টেশন থেকে তাদের রাতের অনুষ্ঠানে কথা বলতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমার অবশ্য আরেকটু খোঁজখবর নিয়ে আমন্ত্রণটা গ্রহণ করা উচিত ছিল। স্টুডিওতে ঢোকার পরে তবেই আমাকে বলা হলো, আজকের প্রোগ্রামটা হচ্ছে ‘প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয় নিয়ে। আমাকে সরfসরি আজ শ্রোতাদের প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। আমার সাথে থাকবে একজন বেশ নামকরা, পেশাদার যৌন বিশেষজ্ঞ!
বিপত্তি দেখা দিল আমার নামের উচ্চারণ নিয়ে। অবশেষে সমাধান এলো, আমাকে সম্বোধন করা হবে মিস্টার মংক, অর্থাৎ জনাব ভিক্ষু নামে। তো, অনুষ্ঠানে আমি খুব ভালোভাবে উতরে গেলাম। আমি ব্রহ্মচারী ভিক্ষু। নারী পুরুষের অন্তরঙ্গ বিষয়গুলো খুব কমই জানি। কিন্তু প্রশ্নকারীদের সমস্যাগুলোর পিছনের কারণগুলো খুব সহজেই বুঝতে পারছিলাম আমি। শীঘ্রই সমস্ত ফোন কলগুলো আমাকে উদ্দেশ্য করে করা হতে লাগলো, আর দুঘন্টার টকশোর বেশির ভাগ উত্তর দিতে দিতে বেশ হাঁপিয়ে উঠলাম। অথচ মোটা অংকের চেকটা গেল পেশাদার যৌন বিশেষজ্ঞের ঘরে। ভিক্ষু হওয়ায় আমি তো আর টাকা পয়সা গ্রহণ করতে পারি না। তাই সর্বসাকুল্যে পেলাম একটা চকোলেট বার। বৌদ্ধ জ্ঞানের আলোয় সমস্যা আরেকবার সমাধান হয়ে গেল। আপনি তো আর চেক খেতে পারবেন না। তাই সুস্বাদু চকোলেট বার খান। সহজ সমাধান। হুম!
অন্য এক বার রেডিওতে এমন অনুষ্ঠানের সময়ে এক শ্রোতা আমাকে প্রশ্ন করলো: ‘আমি বিবাহিত। আরেক মেয়ের সাথে আমার সম্পর্ক আছে যা আমার স্ত্রী জানে না! এটা কি ঠিক?’
আপনি এর উত্তরে কী বলবেন?
‘যদি এটা ঠিক হতো,’ আমি জবাব দিলাম, ‘আপনি আমাকে এই প্রশ্ন করার জন্য ফোন করতেন না।
অনেকেই এমন প্রশ্ন করে বসে। তারা জানে যে তারা যা করছে তা ঠিক নয়। কিন্তু তাদের আশা যে, কোন ‘বিশেষজ্ঞ তাদেরকে বলে দেবে কাজটা ঠিক। মনের গভীরে বেশির ভাগ লোকই জানে কোনটা সঠিক, কোনটা ভুল। তবে কেউ কেউ মন দিয়ে শোনে না।

#মন দিয়ে না শোনা- ১২০
এক সন্ধ্যায় আমাদের বুড্ডিস্ট সেন্টারের ফোন বেজে উঠল। রাগী গলায় একজন জিজ্ঞেস করল, ‘আজান ব্রাহ্ম আছে?’ ফোন ধরেছিল একজন শ্রদ্ধাবতী এশিয়ান মহিলা। সে জবাব দিল, ‘দুঃখিত, তিনি এখন তার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ত্রিশ মিনিট পরে ফোন করুন, প্লিজ।
‘গররর! সে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে মারা যাবে। গর্জে উঠল অন্যজন আর খুট করে ফোন কেটে দিল। বিশ মিনিট পরে আমি রুম থেকে বের হলাম। প্রৌঢ়া এশিয়ান মহিলাটি তখনো ফ্যাকাসে মুখে চেয়ারে বসে কাঁপছিল। অন্যরা তার চারপাশে জড়ো হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করছিল কী হয়েছে কিন্তু সে এমন ভয় পেয়েছিল যে কথাও বলতে পারছিল না। আমি একটু মিষ্টি স্বরে তাকে অনুরোধ করতেই সে বলার সাহস পেল, ‘কেউ একজন আপনাকে খুন করতে আসছে!’
আমি অনেকদিন ধরে এক অস্ট্রেলিয়ান যুবককে পরামর্শ দিতাম। তার এইডস রোগ ধরা পড়েছিল। আমি তাকে ধ্যান করা শিখিয়েছিলাম। আরো শিখিয়েছিলাম কী করে বিজ্ঞতার সাথে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এখন তার মৃত্যু আসন্ন। আমি গতকালই তাকে দেখতে গিয়েছিলাম আর তার সঙ্গীর কাছ থেকে যে কোন সময় একটা ফোনের আশায় ছিলাম। তাই আমি তাড়াতাড়ি বুঝে নিলাম ফোনকলটা কীসের। আমি নই, সেই এইডসে আক্রান্ত তরুণটিই মারা যাবে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে।
আমি তার বাড়িতে ছুটলাম আর মৃত্যুর আগেই তার সাথে দেখা করতে পারলাম। সৌভাগ্যবশত ব্যাপারটা আমি সেই আতঙ্কিত হওয়া এশিয়ান মহিলাটিকেও বুঝিয়ে দিয়েছিলাম, তা না হলে ভয়ে সে মরেই যেত।
কতবার এমন হয় যে, যা বলা হয় আর আমরা যা শুনি, তা এক নয়?
                                                                                                          ----------চলমান 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !