অষ্টম অধ্যায়: মন ও বাস্তবতা
#ওঝা-১৩১
নিচের ঘটনাটি থাইল্যান্ডের একটি সত্য
ঘটনা। এতে বিস্ময়কর আজান চাহ-র অলৌকিক প্রজ্ঞা পরিষ্ফুটিত হয়েছে।
কাছের গ্রামের হেডম্যান তার এক সহকারী
নিয়ে দ্রুত পায়ে আজান চাহ্ -র কুটিরে আসল। গত সন্ধ্যায় নাকি গ্রামের এক মহিলার উপরে
খুব মারাত্মক ও শয়তানী এক ভূত এসে ভর করেছে। তারা কোন উপায় না দেখে মহিলাকে এই মহান
ভিক্ষুর কাছে নিয়ে আসছে। কথা বলতে বলতেই দূর থেকে মহিলাটির চিৎকার শোনা গেল।
আজান চাহ তৎক্ষণাৎ দুজন শ্রমণকে আগুন
জ্বেলে পানি গরম করার নির্দেশ দিলেন। অন্য দুজন শ্রমণকে তার কুটিরের কাছেই একটা বড়
গর্ত খুঁড়তে বললেন। কোন শ্রমণই জানল না এর কারণ।
চারজন গ্রাম্য লোক, উত্তর পূর্বাঞ্চলের
শক্তসমর্থ কৃষক, তারা চারজন সে স্ত্রীলোকটিকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছিল। যতই তারা তাকে
এই পৃথিবীর পবিত্রতম বিহারগুলোর একটিতে তাকে টেনে নিয়ে আসছিল, ততই সে অশ্লীলভাবে চিৎকার
করে গালিগালাজ করছিল।
আজান চাহ তাকে দেখেই শ্রমণদেরকে বজ্রকন্ঠে
আদেশ দিলেন, ‘তাড়াতাড়ি গর্ত খোঁড়, পানি গরম কর তাড়তাড়ি ! আমাদের বড় একটা গর্ত আর অনেক
ফুটন্ত গরম পানি লাগবে।’
ভিক্ষুরা ও গ্রামবাসীরা কেউই বুঝতে পারল
না আজান চাহ কী করতে যাচ্ছেন। আজান চাহর কুটিরের নীচে আনার পরে মহিলার মুখ দিয়ে ফেনা
বেরোতে শুরু করল। তার বিশাল রক্তচক্ষু যেন উন্মত্ততার ঘোরে বিস্ফোরিত। আর তার মুখের
অভিব্যক্তিতে চরম পাগলামির চিহ্ন দেখা দিল যখন সে আজান চাহকে অশ্লীল ও নিষ্ঠুর ভাবে
গালাগালি আরম্ভ করলো। এমন উন্মত্ত, মুখ দিয়ে ফেনা বেরোনো মহিলাকে সামাল দিতে আরো লোক
এসে যোগ দিল।
‘গর্তটা এখনো খোঁড়া হয় নি? জলদি। পানি
গরম করা হয়েছে? তাড়াতাড়ি!’ আজান চাহর গলা মহিলার চিৎকার ছাপিয়ে সবার কানে ঢুকলো, ‘তাকে
গর্তে ছুঁড়ে দিতে হবে। সেখানে তার উপর গরম পানি ফেলে দিতে হবে। এরপরে তাকে মাটি চাপা
দিয়ে কবর দিতে হবে। এই খারাপ ভুতের হাত থেকে বাঁচার এটাই একমাত্র উপায়। আরো জলদি খোঁড়,
আরো ফুটন্ত পানি আনো!’
অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখেছি যে কেউই নিশ্চিত
বলতে পারে না, আজান চাহ কখন কী করে বসেন। তিনি ছিলেন অনিশ্চয়তার ভিক্ষু রূপ। গ্রামবাসীরা
নিশ্চিত ভেবেছিল যে তিনি এই ভুতে পাওয়া মহিলাকে গর্তে ঠেলে দিয়ে সারা গায়ে গরম পানি
ঢেলে দেবেন এবং মাটিতে পুঁতে ফেলবেন। তারা তাকে সেটা করতে দিতও। মহিলাটিও নিশ্চিতই
এমন ভেবেছিল, কারণ সে আস্তে আস্তে শান্ত হতে শুরু করলো। গর্ত খোঁড়া এবং পানি গরম করা
সম্পূর্ণ না হতেই সে শান্তভাবে আজান চাহ এর সামনে বসেছিল আর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে
খুব সুন্দরভাবে আশীর্বাদ নিল। কী দারুণ!
আজান চাহ জানতেন যে, ভূতে পাওয়া হোক বা
পাগল হোক, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এমন শক্তিশালী কিছু একটা আছে, যাকে বলা হয় আত্মরক্ষার
শক্তি। দক্ষতার সাথে এবং খুব নাটকীয়তার সাথে মহিলাটির মধ্যকার সেই আত্মরক্ষার শক্তির
সুইচ টিপে দিয়েছিলেন তিনি, আর ব্যথা ও মৃত্যুর ভয় দিয়ে সেই ভূতকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
প্রজ্ঞা এমনই হয়, যা অন্তর্যামী, পরিকল্পনাবিহীন, পুনর্বার তাকে অনুকরণ করা মুশকিল!
#পৃথিবীতে
সবচেয়ে বড় জিনিস- ১৩২
আমার কলেজ জীবনের বন্ধুর ছোট্ট এক কন্যা
আছে, সেটি তার প্রাইমারি স্কুলের প্রথম বছর। তার শিক্ষক পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের গোটা
ক্লাসকে জিজ্ঞেস করল‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জিনিসটা কী?’
‘আমার বাবা’,
এক ছোট্ট মেয়ে বলে উঠল।
‘হাতি,’ এক ছেলে উত্তর দিল, যে সম্প্রতি
চিড়িয়াখানায় গিয়েছিল।
‘পর্বত,’ আরেকজন বলল।
আমার
বন্ধুর ছোট্ট মেয়ে উত্তর দিল, ‘আমার চোখ হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়।’
পুরো
ক্লাস তার জবাব শুনে চুপ হয়ে এর মানে বুঝার চেষ্টা করতে লাগল। ‘কেন বল তো?’ তার শিক্ষক
হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করল।
‘দেখুন!’ ছোট্ট দার্শনিক বলতে শুরু করল,
‘আমার চোখ তার বাবাকে দেখতে পারে, একটা হাতিকেও দেখতে পারে, এটি একটি পর্বতকেও দেখতে
পারে, সেই সাথে আরো কত কী দেখতে পারে। এত সব কিছু যখন আমার চোখের ভেতরে এঁটে যাচ্ছে,
তখন আমার চোখটা অবশ্যই পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জিনিস!’
প্রজ্ঞা কোন শেখার বিষয় নয়, কিন্তু যা
কখনো শেখানো যায় না, সেটাকে পরিষ্কার দেখাটাই প্রজ্ঞা।
আমার বন্ধুর সেই ছোট্ট কন্যার প্রতি অনেক
শ্রদ্ধা রেখেই আমি তার এই অন্তর্দৃষ্টিকে আরেকটু বাড়িয়ে নেবো- আপনার চোখ নয়, বরং আপনার
মনই হচ্ছে পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জিনিস।
যা আপনার চোখ দেখে, তার সবকিছুই আপনার
মন দেখতে পায়। আপনার কল্পনার চোখে এটি আরো অনেক বেশি দেখতে পায়। এটা শব্দকেও জানে,
যা আপনার চোখ কখনো দেখে না। এটা স্পর্শকে জানে যা বাস্তব এবং কাল্পনিক উভয়ই হতে পারে।
আপনার পাঁচটি ইন্দ্রিয়ের বাইরের বিষয়গুলোও মন জানে। যেহেতু যা যা জানার বিষয়, তার সবকিছুই
আপনার মনে এঁটে যায়, তাই আপনার মন অবশ্যই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জিনিস। মন সবকিছুকে ধারণ
করে।
------------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।