অষ্টম অধ্যায়: মন ও বাস্তবতা
মনের
খোঁজে- ১৩৩
অনেক বিজ্ঞানী ও তাদের সমর্থকেরা এরূপ
মত দেন যে মন হচ্ছে ব্রেন থেকে উৎপন্ন। তাই আামার দেশনা পর্ব শেষে প্রশ্নোত্তর পর্বে
আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয়: ‘মন কি আছে? যদি থাকে, তাহলে কোথায়? এটি কি শরীরের মধ্যে?
নাকি তার বাইরে? নাকি এটি সর্বত্র ব্যাপী? কোথায় থাকে মন?’
আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তাদেরকে
হাতে কলমে বুঝিয়ে দিই। আমি শ্রোতাদেরকে জিজ্ঞেস করি: ‘যদি আপনারা এখন সুখী হন, তাহলে
আপনার ডান হাত তুলুন, প্লিজ। যদি আপনারা অসুখী হন, সামান্য মাত্র অসুখী হলেও প্লিজ
বাম হাতটা তুলুন।’ বেশির ভাগ লোক তাদের ডান হাতটা তোলে,
কেউ কেউ সত্যিই তোলে, বাকিরা অহংকারবশত হাত তোলে।
‘এখন,’
আমি বলতে থাকি, ‘যারা সুখী তারা প্লিজ সেই সুখকে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে দিন।
আর যারা অসুখী প্লিজ সেই অসুখী ভাবকে বাম হাতের তর্জনী দিয়ে দেখিয়ে দিন। আমাকে দেখিয়ে
দিন কোথায় আছে তারা।’
আমার শ্রোতারা তাদের আঙুলগুলোকে উদ্দেশ্যহীনভাবে
উপরে নিচে নিতে শুরু করে। এরপর তারা চারপাশের লোকজনের দিকে তাকায় যারাও তাদের মতো একইভাবে
বিভ্রান্ত। ব্যাপারটা বুঝে ফেললে তখন তারা হাসে।
সুখ বাস্তব। অসুখী ভাবটাও সত্যি। এই জিনিসগুলো
যে আছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনি এমন বাস্তব জিনিসগুলোকে আপনার দেহের কোথাও
দেখিয়ে দিতে পারবেন না। দেহের বাইরেও পারবেন না, কোথাও পারবেন না।
কারণ সুখএবং অসুখী ভাব হচ্ছে মনের একচেটিয়া
রাজেেত্বর আওতায়। তারা মনের আওতায় থাকে। যেমনটি বাগানের ফুল ও ঘাসগুলো থাকে সেই বাগানেরই
আওতায়। ফুল ও ঘাসের অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে বাগান আছে। ঠিক একইভাবে সুখ ও অসুখী ভাবের
অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে মন আছে।
সুখ ও অসুখী ভাবকে যে আঙুল দিয়ে দেখানো
যায় না, এই আবিষ্কারই আমাদের দেখিয়ে দেয় যে আপনি মনকে ত্রিমাত্রিক জগতে খুঁজে পাবেন
না। প্রকৃতপক্ষে স্মরণ করুন যে মন হচ্ছে এই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জিনিস। তাই মন এই ত্রিমাত্রিক
জগতের মধ্যে হতে পারে না। বরং ত্রিমাত্রিক জগতটাই মনের মধ্যে বিরাজমান। মন হচ্ছে দুনিয়ার
সবচেয়ে বড় জিনিস।এটি পুরো মহাবিশ্বকে ধারণ করে।
বিজ্ঞান-
১৩৪
ভিক্ষু
হওয়ার আগে আমি একজন বিজ্ঞানী ছিলাম। আমি ইংল্যান্ডের ক্যাম্ব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে তাত্ত্বিক
পদার্থবিদ্যায় জেন ধর্মমতের বিশ্বজগত সম্বন্ধে গবেষণা করছিলাম। বিজ্ঞান ও ধর্ম, আমি
দেখেছি যে, তাদের উভয়ের মধ্যে অনেক জিনিস কমন আছে, যার মধ্যে কমন হচ্ছে মতবাদ। আমার
ছাত্রজীবনের দিনগুলোর একটা হাস্যকর প্রবাদ আমার মনে পড়ে: একজন বিজ্ঞানী কতটুকু সময়
ধরে তার ফিল্ডের অগ্রগতিকে আটকে দিয়েছে, তা থেকে তার খ্যাতিকে পরিমাপ করা যায়!!
অস্ট্রেলিয়ায় বিজ্ঞান ও ধর্ম বিষযক এক
সাম্প্রতিক বিতর্কে, যেখানে আমি একজন বক্তা ছিলাম, সেখানে শ্রোতাদের একজন একটি ক্ষুরধার
মন্তব্য ছুঁড়ে দিল। ‘যখন আমি টেলিস্টোপ দিয়ে তারাদের সৌন্দর্য দেখি,’ সেই গোঁড়া ক্যাথলিক
মহিলা বললো, ‘তখন আমি সবসময় অনুভব করি যে আমার ধর্ম হুমকির মুখে।’
‘ম্যাডাম, যখন কোন বিজ্ঞানী টেলিস্কোপের
অন্য প্রান্তে চোখ রেখে আপনাকে দেখে,’ আমি জবাব দিলাম, ‘তখন সে অনুভব করে বিজ্ঞান এখন
হুমকির মুখে!’
নিরবতার
বিজ্ঞান - ১৩৫
বোধ হয় তর্কাতর্কি পুরোপুরি বন্ধ করাটাই
ভালো। একটা বিখ্যাত প্রাচ্য প্রবাদ আছে এরকম: যে জানে, সে বলে না। যে বলে সে জানে না।
প্রবাদটা
হয়তো খুব গভীর বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ভালোমতো ভাবলে একসময় আপনি দেখবেন যে এই প্রবাদ
অনুসারে, যে এটা বলেছে, সে নিজেই জানে না।
--------------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।