হৃদয়ের দরজা খুলে দিন (পর্ব-৫০) দশম অধ্যায়


দশম অধ্যায়: স্বাধীনতা ও নম্রতা

#হাতুড়ি- ১৬৮
আমরা সবাই সময়ে সময়ে ভুল করি। জীবনটা হচ্ছে ভুল যতটা পারা যায় কম করতে শেখা। এটা বুঝে নিয়ে আমাদের বিহারে একটা নীতি চালু আছে এরকম যে, ভিক্ষুরা ভুল করতে পারবে। যখন তারা ভুল করতে ভয় পায় না, তখন তারা এতটা ভুল করে না।
একদিন আমার বিহারের মাঠে হাঁটার সময় ঘাসের মধ্যে একটা হাতুড়ি পড়ে থাকতে দেখলাম। সেটি নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন ধরে সেখানে পড়ে ছিল। কারণ এতে বেশ জং ধরে গেছে। আমি আমার সতীর্থ ভিক্ষুদের অযতœ অবহেলাতে খুব ক্ষুদ্ধ হলাম। আমরা বিহারে যা কিছু ব্যবহার করি, আমাদের চীবর থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতি, সবই আমাদের কঠোর পরিশ্রমী গৃহী ভক্তদের দান করা। একজন গরীব কিন্তু উদার বৌদ্ধ উপাসক হয়তো সেই হাতুড়িটা কিনে দিতে গিয়ে সপ্তাহের পর সপ্তাহ টাকা জমিয়েছে। এই দানগুলোকে অবিবেচকের মত ব্যবহার করা ঠিক নয়। তাই আমি ভিক্ষুদের একটি সভা আহ্বান করলাম।
আমাকে বলা হয় যে আমার চরিত্র নাকি ডালের মতো নরম। কিন্তু সেই সন্ধ্যায় আমি ছিলাম থাই মরিচের মতো ঝাঁঝালো। আমি আমার ভিক্ষুদের আসলেই জিহ্বা দিয়ে পিটিয়েছিলাম। তাদের একটা শিক্ষা পাওনা ছিল। তাদের শেখা বাকি ছিল কী করে আমাদের অল্প কয়েকটি সম্পত্তির দেখাশোনা করতে হয়।
যখন আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম, ভিক্ষুরা সবাই তখন ঋজু হয়ে বসা, ছাই বর্ণের মুখ ও নিরব। আমি কিছ্ক্ষুণ অপেক্ষা করলাম এই আশায় যে, অপরাধী তার দোষ স্বীকার করবে। কিন্তু ভিক্ষুদের কেউই স্বীকার করলো না। তারা ঋজু হয়ে নিরবে অপেক্ষায় বসে রইল।
আমি আমার সতীর্থ ভিক্ষুদের নিয়ে বেশ ঝামেলা অনুভব করলাম। তাই উঠে হল থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম অন্ততপক্ষে যে ভিক্ষুটা এভাবে হাতুড়িটা ঘাসে ফেলে রেখেছে, নিজের দোষ স্বাীকার করার মত সাহস তার থাকবে ও ক্ষমা চাইবে। আমার বক্তব্য কী খুব কড়া হয়ে গিয়েছিল?
আমি যখন হলের বাইরে বেরিয়ে গেলাম, তখন হঠাৎ করে বুঝতে পারলাম কেন কোন ভিক্ষুই এর দায় স্বীকার করে নি। আমি ফিরে হলে চলে এলাম।
‘ভিক্ষুরা!’ আমি ঘোষণা করলাম, ‘আমি খুঁজে পেয়েছি কে এই হাতুড়িটাকে ঘাসের মধ্যে ফেলে রেখেছে। সেটি ছিলাম আমি!!’
আমি পরিষ্কার ভুলে গিয়েছিলাম যে আমিই তখন বাইরে কাজ করছিলাম আর তাড়াহুড়োতে হাতুড়িটা তুলে রাখতে ভুলে গিয়েছিলাম। সেই অগ্নিঝরা কথাগুলো বলার সময়েও স্মৃতি আমার সাথে লুকোচুরি খেলেছে। কেবল যখন আমি ভিক্ষুদেরকে চলে যেতে বলেছি, তখনই স্মৃতিটা ফিরে এসেছিল পুরো অর্থসহ। আমিই এই কাজটি করেছিলাম। ওহ! কী লজ্জার! সৌভাগ্যবশত আমার বিহারে আমরা ভিক্ষুরা ভূল করলে মেনে নিই, এমনকি অধ্যক্ষ ভুল করলেও।

#কাউকে আঘাত না দিয়েই কৌতুক উপভোগ করা- ১৬৯
যখন আপনি আপনার ইগো বা অহংবোধকে ত্যাগ করবেন, তখন কেউই আর আপনাকে ঠাট্টা করতে পারবে না। যদি কেউ আপনাকে বোকা বলে, তাতে আপনার রেগে যাওয়ার একমাত্র কারণ হতে পারে যে আপনি বিশ্বাস করেন, তারা হয়তো ঠিক কথাই বলছে।
কয়েক বছর আগে, পার্থে অনেক লেনের একটা হাইওয়েতে গাড়িতে করে যাওয়ার সময় একটা পুরনো ধাঁচের গাড়িতে কয়েকজন যুবক আমাকে দেখে তাদের গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে আমাকে ব্যঙ্গ করতে শুরু করলো, ‘এই যে! টাকওয়ালা! এই যে ন্যাড়া মাথা!’
তারা আমাকে প্যাঁচে ফেলতে চাচ্ছিল, তাই আমিও আমার জানালার কাচ নামিয়ে চীৎকার দিলাম, ‘তোমাদের চুলগুলো কাটো! মেয়েদের দল!’ সম্ভবত আমার সেটা করা উচিত ছিল না, কেননা এতে করে সেই তরুণদের উৎসাহ আরো বেড়ে গেল।
তারা তাদের গাড়িটাকে আমাদের গাড়িটার পাশে এনে একটা ম্যাগাজিন দেখাল আর মুখ বড় বড় করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গী করা শুরু করলো ম্যাগাজিনের ছবিগুলোর দিকে তাকানোর জন্য। এটা ছিল প্লেবয় ম্যাগাজিনের একটা কপি।
আমি তাদের এমন অশালীন রসবোধ দেখে হেসে উঠলাম। তাদের বয়সের হলে এবং বন্ধুরা সাথে থাকলে আমিও এমনটা করতাম। আমাকে হাসতে দেখে তারা তাড়াতাড়ি সরে পড়ল। ব্যঙ্গ বিদ্রুপে হাসাটা ভদ্রতার খাতিরে লজ্জায় চুপ থাকার চেয়ে অনেক উত্তম।
আমি কি সেই প্লেবয় ম্যাগাজিনের ছবিগুলোর দিকে তাকিয়েছিলাম? অবশ্যই না। আমি একজন সংযত আচরণকারী ব্রহ্মচারী ভিক্ষু। তাহলে কীভাবে জানলাম যে ওটা একটা প্লেবয় ম্যাগাজিনের কপি ছিল? কারণ, আমার ড্রাইভার আমাকে সেটা বলেছিল, অন্ততপক্ষে আমি এই গল্পটাই সবাইকে বলি।

#বোকা- ১৭০
কেউ আপনাকে বোকা বলে ডাকে। এরপর আপনি ভাবতে থাকেন, ‘তারা কীভাবে আমাকে বোকা ডাকে? আমাকে বোকা ডাকার তাদের কোন অধিকার নেই! কী অভদ্র সে, যে আমাকে বোকা ডাকে! আমাকে বোকা ডাকার জন্য তাদেরকে আমি ধরব!’
আর আপনি হঠাৎ উপলদ্ধি করেন যে আপনি এইমাত্র তাদেরকে আরো চারবার বোকা ডাকতে দিলেন।
প্রত্যেকবার আপনি যখন তারা কী বলেছে তা স্মরণ করেন, আপনি তাদেরকে বোকা ডাকার অনুমতি দেন। সেখানেই সমস্যার বীজ লুকিয়ে আছে।
যদি কেউ আপনাকে বোকা ডাকে আর আপনি তৎক্ষণাৎ সেটিকে যেতে দেন, তাহলে সেটি আর আপনাকে বিরক্ত করবে না। সেখানেই আছে এর সমাধান।
আপনার অন্তরের সুখটাকে কেন অন্যদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে দেবেন?

-------দশম অধ্যায় শেষ--------

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !