হৃদয়ের দরজা খুলে দিন (পর্ব-৪২) নবম অধ্যায়


নবম অধ্যায়: মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিক জীবন

#সবচেয়ে সুন্দর শব্দ- ১৪১
একজন অশিক্ষিত বৃদ্ধ লোক তার জীবনে প্রথমবার শহরে বেড়াতে গিয়েছিল। সে বড় হয়েছিল একটা প্রত্যন্ত পাহাড়ী গ্রামে, কঠোর পরিশ্রম করে তার ছেলেমেয়েদেরকে বড় করেছে। আর এখন সে তার ছেলেমেয়েদের আধুনিক বাড়িতে প্রথমবারের মতো বেড়াতে আসাটা উপভোগ করছে।

        একদিন, শহরের চারপাশ ঘুরে দেখার সময় বৃদ্ধলোকটির কানে একটি শব্দ এসে বিঁধল। এমন সাংঘাতিক শব্দ সে তার নিরিবিলি পাহাড়ী গ্রামে কখনো শোনে নি। তাই সে এর কারণ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সেই কর্কশ শব্দের উৎস খুঁজতে খুঁজতে সে একটি বাড়ির পিছনে একটি রুমে চলে এল, যেখানে একটি ছোট ছেলে বেহালা বাজানো প্র্যাকটিস করছে।
‘ক্রিরিরিচ্! ক্রেং!’ বেসুরো শব্দে বেহালা আর্তনাদ করে উঠলো।
বৃদ্ধ লোকটি যখন শুনলো যে এটার নাম বেহালা, সে সিদ্ধান্ত নিলো যে, আর কখনো এমন জঘন্য জিনিসের বাজনা শুনতে চাইবে না।
পরের দিন শহরের অন্যএক এলাকায় বৃদ্ধ লোকটি একটা শব্দ শুনলো যা মনে হলো তার বুড়ো কানগুলোকে আদর করছে। সে তার পাহাড়ী উপত্যকায় এমন মনোমুগ্ধকর সুর কখনো শোনে নি। তাই সে এর উৎস খুঁজে বের করতে মনস্থ করলো। উৎস খুঁজতে খুঁজতে সে একটা বাড়ির সামনে এক রুমে গিয়ে হাজির হলো যেখানে এক বুড়ী বেহালায় একাই সুর তুলছিল।
মুহুর্তেই বৃদ্ধ লোকটি তার ভুল বুঝতে পারলো। আগের দিন সে যে জঘন্য শব্দ শুনেছিল তা বেহালার দোষে নয়, বালকটির দোষেও নয়। ব্যাপারটা হলো ছেলেটাকে তার বাদ্যযন্ত্র ভালোমতো বাজাতে শেখাটা আরো শিখতে হবে।
সাধারণ লোকের প্রজ্ঞা নিয়ে বৃদ্ধ লোকটি ভাবলো, একই ব্যাপার ঘটে ধর্মের ক্ষেত্রেও। কোন ধর্মীয় ব্যাপারে উৎসাহী ব্যক্তিকে আমরা যখন দেখি সে তার বিশ্বাস নিয়ে অনেক দুর্দশা ভোগ করছে, তখন ধর্মকে দোষ দেওয়া ভুল। ব্যাপারটা এই যে, সেই শিক্ষানবীশের তার ধর্ম সম্বন্ধে জানার এখনো অনেক বাকী আছে। যখন আমরা কোন সাধু সন্তের সংস্পর্শে আসি যে তার ধর্মে দক্ষ, সেটা এমন দারুণ অভিজ্ঞতা হয়, যা আমাদেরকে অনেক বছর ধরে অনুপ্রাণিত করে, তাদের বিশ্বাস যাই হোক না কেন।
কিন্তু এতেই এই গল্পের শেষ নয়।
তৃতীয় দিন, শহরের অন্য এক প্রান্তে বৃদ্ধটি অন্য একটি শব্দ শুনতে পেল যা সৌন্দর্য ও বিশুদ্ধতায় সেই ওস্তাদ বেহালা বাদক বুড়ীকেও ছাপিয়ে গেল। আপনি কী মনে করেন, সেই শব্দটা কী ছিল?
এটা ছিল বসন্তে পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রপাতের চেয়েও সুন্দর, শরতে বনে বনে বয়ে যাওয়া উচ্ছ্বল হাওয়া থেকেও সুন্দর, অথবা ভারী বর্ষণ শেষে পাহাড়ী পাখিদের গান থেকেও সুন্দর। এটা এমনকি কোন এক শীতের নিশীথে পর্বতের গুহায় বিরাজমান নিরবতার চেয়েও সুন্দর। সেই শব্দটা কী ছিল যা বৃদ্ধের হৃদয়কে অভূতপূর্ব নাড়া দিয়েছিল?
এটা ছিল একটি বড় অর্কেস্ট্রা(বাদক দল) যারা একটি সুর বাজাচ্ছিল। বৃদ্ধের জন্য এটি দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শব্দ ছিল, কারণ প্রথমত, এই অর্কেস্ট্রার প্রত্যেকটি সদস্য ছিল আপন আপন বাদ্যযন্ত্র বাজানোতে ওস্তাদ। আর দ্বিতীয়ত, তারা আরো শিখেছিল কীভাবে একসাথে সমান তালে বাজাতে হয়।
‘ধর্মের ক্ষেত্রেও এমন হোক,’ বৃদ্ধটি ভাবলো। ‘প্রত্যেকেই আমরা যেন জীবনের পাঠশালায় আমাদের বিশ্বাসের কোমল হৃদয়ের শিক্ষা পাই। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের ধর্মের মধ্যে মৈত্রীর এক একজন ওস্তাদ হই। আমাদের ধর্মকে ভালোভাবে শিক্ষা করে এবার আসুন আরেকটু এগোই এবং শিখি, অর্কেস্ট্রার সদস্যদের মতো, কীভাবে অন্যান্য ধর্মের সাথে একত্রে একই সুরে বাজাতে হয়।
সেটাই হবে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ।

#নামে কী আছে?- ১৪২
আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী যখন কেউ বৌদ্ধ ভিক্ষু হয়, সে একটা নতুন নাম গ্রহণ করে। আমার ভিক্ষু নাম ‘ব্রহ্মবংশ (Brahmavamso), যা বেশি লম্বা হওয়ায় আমি সংক্ষেপে বলি ব্রাহম্ (ইৎধযস)। এখন প্রত্যেকেই আমাকে এই নামে ডাকে। শুধু আমার মা বাদে। সে এখনো আমাকে পিটার নামেই ডাকে। আর আমিও বলি, সেই নামে ডাকার অধিকার তার আছে।
একবার বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর এক মিলনমেলায় আমন্ত্রণের জন্য আমাকে ফোন করা হলো, আর আমার নামটার বানান জানতে চাওয়া হলো। আমি জানিয়ে দিলাম:
B- হচ্ছে বুড্ডিস্ট
R-হচ্ছে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান
A-হচ্ছে এংলিকান খ্রিস্টান
H-হচ্ছে হিন্দু
M-হচ্ছে মুসলিম।
আমি এতে এমন ভালো সাড়া পেলাম যে এখন সাধারণত আমি আমার নামটা এভাবেই বানান করি। আর নামের অর্থটাও সেটাই।
                                                                                                                                    ------চলমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !