বুদ্ধি বৃদ্ধির উপায়
৭। “ভন্তে নাগসেন! আট প্রকার কারণে বুদ্ধি পরিণত ও পরিপক্ক হয়।”
“কোন আট প্রকার কারন?”
“(১) বয়স বৃদ্ধিরদ্বারা,
(২) যশ বিস্তারদ্বারা, (৩) পুনঃপুন প্রশ্ন জিজ্ঞাসাদ্বারা
(৪) তীর্থ সংবাস বা গুরুর নিকটে বাসদ্বারা, (৫) জ্ঞানযুক্ত মনোনিবেশদ্বারা, (৬) আলোচনা দ্বারা, (৭) সযতœ চর্চাদ্বারা,
এবং (৮) প্রতিরূপ দেশে বাসের দ্বারা বুদ্ধি পরিণত ও পরিপক্ক হয়। এক্ষেত্রে বলা হয়-
বয়স, যশ, জিজ্ঞাসা, গুরুর নিকট বাস, জ্ঞানযুক্ত মনস্কার, আলোচনা, সযতœ চর্চা, প্রতিরূপ দেশে বাসÍএই আটটি কারণে বুদ্ধি বিশদ হয়। যাহাদের এই আটটি গুণ আছে তাহাদের বুদ্ধি বিকশিত হয়।”
৮। “ভন্তে! এই স্থান মন্ত্রণার আট দোষ হইতে মুক্ত এবং জগতে আমিও উহার নিমিত্ত পরম যোগ্য ব্যক্তি। আমি গ হ্য বিষয়ে রক্ষা কর্তা, যতদিন বাঁচিব ততদিন গোপন বিষয় রক্ষা করিব। পূর্বোক্ত আট কারণে আমার বুদ্ধির পরিণত ও পরিপক্ক হইয়াছে বর্তমানে আমার ন্যায় শিষ্য লাভ সহজ নহে।”
শিষ্যের প্রতি আচার্যের কর্তব্য
৯। “আচার্যগণের যে পঞ্চবিংশতি গুণ আছে সেই সকল গুণযুক্ত হইয়া সুবিনীত অনুগামী শিষ্যের প্রতি আচরণ করা আচার্যের কর্তব্য।”
“সেই পঞ্চবিংশতি গুণ কি কি?”
“ভন্তে! এক্ষেত্রে আচার্য্যকে শিষ্যের প্রতি (১) সর্বদা শান্তভাবে রক্ষণাবেক্ষণ
যতœ নিতে হইবে, (২) কর্তব্যাকর্তব্য সম্বন্ধে উপদেশ দিতে হইবে, (৩) প্রমত্তঅপ্রমত্ত সম্বন্ধে জানাইতে হইবে, (৪) শয়নাদি স্থান সম্বন্ধে দৃষ্টি রাখিতে হইবে, (৫) রোগ হইলে তৎপ্রতি লক্ষ্য রাখিতে হইবে, (৬) ভোজন পাইয়াছে কিনা দেখিতে হইবে, (৭) শিষ্যের বিশেষ চরিত্র জানিতে হইবে, (৮) ভিক্ষা পাত্রে যাহা পাওয়া যায়, তাহা ভাগ করিয়া দিতে হইবে, (৯) আশ্বাস দিতে হইবে যেÍ‘ভয় করিও না, তোমার উদ্দেশ্য সাফল্যের পথে অগ্রসর হইতেছে’, (১০)‘অমুকের সহিত সাহচর্য করিও’ বলিয়া সৎসঙ্গ নির্দেশ করিতে হইবে, (১১) গ্রামের সঙ্গী সম্বন্ধে লক্ষ্য রাখিতে হইবে, (১২) বিহারের সঙ্গী সম্বন্ধে লক্ষ্য রাখিতে হইবে, (১৩) শিষ্যের সহিত হাস্য-কৌতুক বর্জন করিতে হইবে, সংলাপ ত্যাগ করিতে হইবে, (১৪) তাহার দোষ দেখিলে ক্ষমা করিতে হইবে, (১৫) উত্তম আদর্শ শিক্ষা দিতে হইবে, (১৬) অখ- ভাবে শিক্ষা দিতে হইবে, (১৭) কিছু গোপন রাখা চলিবে না, (১৮) স্বীয় জ্ঞান নিঃশেষে শিক্ষা দিতে হইবে, (১৯)‘শিক্ষাবিদ্যায়
ইহাকে জন্মদান করিতেছি’Íএই চিন্তা করিয়া তাহার প্রতি পুত্রবৎ স্নেহ রাখিতে হইবে, (২০) শিষ্য যাহাতে লক্ষ্যভ্রষ্ট না হয় সেইদিকে লক্ষ্য রাখিতে হইবে, (২১) ‘শিক্ষাবলে ইহাকে বলবান করিব’Íএইরূপ মনে স্থান দিতে হইবে, (২২) তাহার প্রতি মৈত্রী চিত্ত পোষণ করিতে হইবে, (২৩) বিপদে উহাকে ত্যাগ করা যাইবে না, (২৪) কর্তব্য কার্যে প্রেরণা দিতে অবহেলা করা চলিবে না, এবং (২৫) উহার চারিত্রিক স্খলন দেখিলে ধর্মানুসারে
রক্ষা করিতে হইবে। ভন্তে! আচার্যের এই পঞ্চবিংশতি গুণ আছে; আপনি আমার প্রতি সেগুলি উত্তমরূপে প্রয়োগ করুন। ভন্তে আমার সংশয় উৎপন্ন হইয়াছে। বুদ্ধের উপদিষ্ট ধর্ম-শাস্ত্রে এমন মে-ক (দ্বৈত) প্রশ্ন আছে, যাহাতে ভবিষ্যৎকালে এই সম্বন্ধে মতভেদ উৎপন্ন হইতে পারে। ভবিষ্যৎকালে আপনার ন্যায় প্রতিভাবান পন্ডিত দুর্ল্লভ হইতে পারে। এই সকল প্রশ্নে পরবাদ দমনের নিমিত্ত আপনি আমাকে চক্ষুদান করুন।”
উপাসকের গুণ
১০। স্থবির “অতি উত্তম” বলিয়া স্বীকার করিলেন এবং উপাসকের দশবিদ গুণ বর্ণনা করিলেন।
“মহারাজ! উপাসকের এই দশবিধ গুণ থাকা আবশ্যক।”
“কোন দশ প্রকার?”
“মহারাজ! এক্ষেত্রে উপাসককে (১) সংঘের সুখ-দুঃখে সহানুভূতি সম্পন্ন হইতে হয়, (২) ধর্মকে অধিপতিরূপে স্বীকার করিতে হয়। (৩) যথাশক্তি দান কার্য করিতে হয়, (৪) বুদ্ধ শাসনের পরিহানি দেখিয়া উহার উন্নতির জন্য উদ্যেগ করিতে হয়, (৫) সম্যক্ দৃষ্টি সম্পন্ন হইতে হয়, (৬) মঙ্গল আশায় কৌতূহল পরবশ হইয়া জীবনের জন্যও অন্য ধর্ম-গুরুর শরণ লইতে হয় না, (৭) কায়িক এবং বাচনিক সংযম রক্ষা করিতে হয়, (৮) ঐক্যপ্রিয় ও একাতায় রত থাকিতে হয়, (৯) ঈষ্যাপরায়ণ হইয়া শঠতার বশে ধার্মিকের ভান করা চলিবে না, এবং (১০) যথার্থভাবে বুদ্ধ, ধর্ম ও সে ঘর শরণাপন্ন হইতে হয়। মহারাজ! এই দশবিধ উপাসকের প্রকৃত গুণ; সেই সমস্ত গুন আপনার মধ্যে বিদ্যমান আপনার পক্ষে ইহা যোগ্য, সমীচীন এবং অতিশয় শোভনীয় যে আপনি জিন শাসনের পরিহানি দেখিয়া উহার উন্নতির উদ্যোগ করিতেছেন। আপনাকে অবসর (সময় ও সুযোগ) দিতেছি। আপনি আমাকে যথাসুখে প্রশ্ন করুন।”
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।