#অপরাধীদের অপরাধবোধ - ১৪
বিহারাধ্যক্ষ হওয়াটা সম্মানের কিন্তু কাজের চাপ প্রচুর। এই পদটা চাপিয়ে দেওয়ার আগে আমি প্রায়ই পার্থের জেলখানাগুলোতে যেতাম। আমি খুব নিখুঁতভাবে জেলখানায় কত ঘন্টা সার্ভিস দিয়েছি তার একটা হিসেব রেখেছি। বলা তো যায় না, যদি কখনো জেলখানায় যেতে হয়, তখন তা উপকারে আসতে পারে।
পার্থের বড় জেলখানাটায় প্রথমবার গিয়েছিলাম ধ্যানের উপরে দেশনা দেওয়ার জন্য। দেশনা শুনতে এত কয়েদি হাজির হয়েছিল যে আমি রীতিমত অবাক ও মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। রুমটা একেবারে ভরে গিয়েছিল। কয়েদিদের মধ্যে ৯৫% উপস্থিত হয়েছিল ধ্যান শেখার জন্য। আমি যতই কথা বলতে লাগলাম, ততই তাদের উসখুস বাড়তে লাগল। দশ মিনিট যেতে না যেতেই কয়েদিদের একজন, যে ছিল দাগী আসামীদের অন্যতম, সে তার হাত তুললো প্রশ্ন করার জন্য। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে দিলাম। সে বললো, ‘এটা কি সত্যি যে ধ্যানের মাধ্যমে শূণ্যে ভাসাটা শেখা যায়?’
তখনই আমি জানলাম, কেন এতজন কয়েদি ধ্যান শিখতে চায়। তারা সবাই ধ্যান শেখার প্ল্যান করছে শূণ্যে ভেসে ভেসে জেলখানার দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি বললাম যে এটা সম্ভব, কিন্তু শুধু অসাধারণ ধ্যানীদের জন্য, আর তাও বহু বছরের ট্রেনিংয়ের পরে। এরপরের বার যখন গেলাম, মাত্র চারজন কয়েদি দেশনা শুনতে হাজির হয়েছিল।
এত বছর জেলখানায় শিক্ষা দেওয়ার সময়ে কয়েকজন কয়েদির সাথে আমার খুব ভালো পরিচয় হয়ে গেছে। একটা বিষয় আমি দেখেছি যে প্রত্যেক অপরাধীই তাদের কৃতকর্মের জন্য মনে মনে অপরাধবোধে ভুগে থাকে। তারা এটা দিনে রাতে অনুভব করে, তাদের মনের গভীরে। তারা এটা প্রকাশ করে শুধু তাদের কাছের বন্ধুদের কাছে। প্রকাশ্যে কিন্তু তারা এটা অস্বীকার করে। কিন্তু যখন আপনি তাদের বিশ্বাসভাজন হবেন, যখন আপনি তাদের আধ্যাত্মিক গুরু হয়ে উঠবেন কিছু সময়ের জন্য, তখন তারা সবকিছু খুলে বলে এবং তাদের করুণ ও বেদনাদায়ক অপরাধকে প্রকাশ করে। আমি প্রায়ই তাদেরকে পরের গল্পটি শুনিয়ে একটু সাহায্য করি। গল্পটা হচ্ছে বি ক্লাসের বাচ্চাদের গল্প।
----------------------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।