কেশরিয়া স্তূপে নতুন স্তরের সন্ধান: ইতিহাসের অতলে লুকিয়ে থাকা বুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন উঠে এলো আলোয় - Kesariya Stupa in Bihar

কেশরিয়া স্তূপে নতুন স্তরের সন্ধান: ইতিহাসের অতলে লুকিয়ে থাকা বুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন উঠে এলো আলোয় - Kesariya Stupa in Bihar

ত্রিশরণ ডেস্ক | বিহার, ভারত | জুন ২০২৫

ভারতের বিহার রাজ্যের পূর্ব চম্পারণ জেলায় অবস্থিত কেশরিয়া স্তূপ, যা তেজপুর দেওরা স্তূপ নামেও পরিচিত, সেখানে সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উঠে এসেছে নতুন এক স্তরের চিহ্ন। এই স্তরটি স্তূপের নিচে থাকা একটি অতিরিক্ত ধাপে অবস্থান করছে, যা এর আগের বিশ্লেষণগুলোকে আরও সমৃদ্ধ ও বিস্ময়কর করে তুলেছে।

ভারতের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে (ASI) জানিয়েছে যে, তারা স্তূপটির পূর্ব ঢালে একাধিক খনন ট্রেঞ্চ খুঁড়ে ইট নির্মিত দেয়াল, খোলা নালা এবং মাটির রাম করা মেঝে শনাক্ত করেছে। এছাড়াও, স্তূপের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি ইটের পরিক্রমাপথ এরও চিহ্ন পাওয়া গেছে—যা বৌদ্ধ ধর্মের আচার ও নকশার ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরে।

বুদ্ধেরপবিত্র স্মারক

ধারণা করা হয়, কেশরিয়া স্তূপ নির্মিত হয়েছিল সম্রাট অশোকের শাসনামলে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় স্মারকই নয়, বরং বুদ্ধের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি। ইতিহাসে বর্ণিত আছে, বৈশালীতে তাঁর শেষ দেশনা দেওয়ার পর গৌতম বুদ্ধ যখন কুশীনগরের পথে রওনা হন, লিচ্ছবীরা তাঁকে অনুসরণ করলে বুদ্ধ তাদের থামিয়ে দিয়ে তাঁর ভিক্ষাপাত্র তাঁদের হাতে তুলে দেন। এই পর্বটির স্মৃতিচিহ্ন হিসেবেই গড়ে ওঠে কেশরিয়া স্তূপ — যা একটি পরিভোগিক স্তূপ

স্থাপত্যে বরোবুদুরের ছাপ

এই স্তূপের আকৃতি ও স্তরবিন্যাস ইন্দোনেশিয়ার বিখ্যাত বরোবুদুর মন্দিরের সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। কেশরিয়া স্তূপের প্রতিটি স্তরে নিখুঁতভাবে খোদাই করা বুদ্ধের মূর্তি বসানো রয়েছে। স্তূপটি একটি উঁচু টিলার উপর নির্মিত হওয়ায় এর দৃশ্যও দর্শনীয়।

মাপ ও গঠন

বর্তমানে কেশরিয়া স্তূপের উচ্চতা ৩১ মিটার এবং ভিত্তির ব্যাস প্রায় ১২২ মিটার। স্তূপে দৃশ্যমান ছয়টি স্তর রয়েছে এবং প্রতিটি স্তরে কয়েকটি ছোট কক্ষ রয়েছে। এর আগেও জানা গিয়েছিল, ১৯৩৪ সালের ভূমিকম্পের আগে এর উচ্চতা ছিল ৩৭ মিটার এবং খ্রিস্টপূর্ব যুগে এটি ৪৩ মিটার পর্যন্ত উঁচু ছিল বলে ধারণা করা হয়।

এখন ASI-এর সাম্প্রতিক খননে নিচে থাকা আরও একটি স্তরের ইঙ্গিত মিলেছে, যা ভবিষ্যতে এর প্রকৃত আকার ও ধর্মীয় গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দেবে।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের চমক

নতুন খননে একটি কক্ষে স্টুকো নির্মিত বুদ্ধ মূর্তির নিম্নাংশ পাওয়া গেছে। পাশাপাশি আবিষ্কৃত হয়েছে একাধিক পরিক্রমাপথ, জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং ইট ও মাটির সংমিশ্রণে নির্মিত শক্ত মেঝে— যা প্রাচীন নির্মাণশৈলীর নিদর্শন।

পর্যটনের নতুন দিগন্ত

২০০৩ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার কেশরিয়া স্তূপে সফর করে এটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা শুরু করেন। পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি পর্যটন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, অতিথিশালা এবং ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রতিরূপ নির্মাণের প্রকল্প।

আবিষ্কৃত নতুন স্তর শুধু স্তূপটির আকারই নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা ধর্মীয়, ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক মহিমাকেও নতুনভাবে তুলে ধরছে। এ যেন হাজার বছরের পুরনো বৌদ্ধ ইতিহাসের স্তরে স্তরে লুকিয়ে থাকা অমূল্য এক অধ্যায়ের দ্বার উন্মোচন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !