মিলিন্দপ্রশ্ন (পর্ব-০৪)


নাগসেনের অহত্ত্ব লাভ
আয়ুস্মান নাগসেন তিন মাসের মধ্যে ভদন্ত ধর্মরক্ষিতের নিকট ত্রিপিটক। বুদ্ধবচন এক আবৃত্তিতেই কণ্ঠস্থ করিলেন এবং পুনরায় তিন মাসের মধ্যে ইহার মর্মার্থ হৃদয়ঙ্গম করিলেন। তখন আয়ুষ্মন ধর্মরক্ষিত নাগসেনকে কহিলেন- “নাগসেন! গোপাল যেমন গাভীগুলি কেবল পালন করে কিন্তু দুধ পান করে অন্য লোকে , সেইরূপ তুমি ত্রিপিটক বুদ্ধবচন জানা সত্ত্বেও শ্রামণ্য ফলের অধিকারী হও নাই।"
ভন্তে ! তাহাই লাভ করিব, অধিক বলার আবশ্যকতা নাই।সেই দিবা রাত্রির মধ্যেই তিনি প্রতিসম্ভিদা সহ অর্হত্ত্ব লাভ করিলেন।
আয়ুস্মান নাগসেনের এই সত্যোপলব্ধির সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবী নিনাদিত হইল, দেবতারা সাধুবাদ দিলেন, ব্ৰহ্মাগণ আনন্দে করতালি দিলেন; দিব্য চন্দন-চূর্ণ মন্দারপুষ্প বর্ষিত হইল।
৩৭। সেই সময় কোটিশত অৰ্হত হিমবন্ত পর্বতের রক্ষিত তলে সম্মিলিত হইয়া আয়ুস্মান নাগসেনের নিকট দূত প্রেরণ করিলেন- “নাগসেন! এখানে আগমন করুন, আপনাকে (নাগসেনকে) দেখিতে ইচ্ছা করি।"
তখন, আয়ুষ্মান নাগসেন দূতের মুখে সংবাদ শুনিয়া অশোকারাম হইতে অন্তহিত হইলেন এবং হিমবন্ত পর্বতের রক্ষিত তলে কোটি শত অরহতগণের সম্মুখে উপস্থিত হইলেন।
সেই অরহতগণ মাননীয় নাগসেনকে কহিলেন- “নাগসেন! রাজা মিলিন্দ বাদ-বিতন্ডামূলক প্রশ্ন করিয়া ভিক্ষুসংঘকে বিব্রত করিতেছেন। নাগসেন! তুমি যাও এবং মিলিন্দ রাজাকে দমন কর।
ভন্তে! এক মিলিন্দ রাজা কেন, যদি জম্বুদ্বীপের সকল রাজা আসিয়া আমাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, তবে আমি সকলের প্রশ্নোত্তর দিয়া উহাদিগকে শান্ত করিব। ভন্তে! আপনারা নির্ভয়ে সাগল নগরে গমন করুন।
তখন সেই স্থবির ভিক্ষুগণ সাগল নগরকে কাষায় বস্ত্রে উজ্জ্বল করিলেন ঋষিদের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করিলেন।
ভদন্ত আয়ুপালের সঙ্গে মিলিন্দের মিলন
৩৮। সেই সময় ভদন্ত আয়ুপাল সংখেষ্য পরিবেণে অবস্থান করিতেন তখন রাজা মিলিন্দ স্বীয় অমাত্যগণকে কহিলেন- “আহা, জ্যোৎস্নাময়ী রজনী বড়ই রমণীয়! আজ কোন্ শ্ৰমণ কিংবা ব্রাহ্মণের নিকট ধর্মালোচনা প্রশ্ন জিজ্ঞাসার জন্য যাইতে পারি? কে আমার সহিত ধর্মালোচনা করিতে আমার সংশয় ভঞ্জন করিতে সাহস রাখে?”
এইরূপ জিজ্ঞাসিত হইলে পঞ্চশত যবন রাজা মিলিন্দকে কহিলেনমহারাজ! আয়ুপাল নামে এক স্থবির আছেন। তিনি ত্রিপিটকধারী, বহুশ্রুত শাস্ত্রবিদ। তিনি বর্তমানে সংখেয্য পরিবেশে বাস করেন, আপনি তাহার নিকট যান এবং প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন।
ওহে! তাহা হইলে তোমরা ভদন্ত আয়ুপালকে সংবাদ দাও।
তখন এক নিমিত্ত্বজ্ঞকে ভদন্ত আয়ুপালের নিকট পাঠাইলেন এবং কহিলেনভন্তে! রাজা মিলিন্দ আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে ইচ্ছুক।
আয়ুস্মান আয়ুপাল বলিলেন- “তাহা হইলে তিনি আসিতে পারেন।”
তখন রাজা মিলিন্দ পঞ্চশত যবন পরিবৃত হইয়া উত্তম রথে আরোহণপূর্বক সংখেয্য পরিবেশে আয়ুষ্মান আয়ুপালের নিকট উপনীত হইলেন। পরষ্পর শিষ্টাচার-সম্ভাষণের পর তিনি এক প্রান্তে বসিলেন এবং জিজ্ঞাসা করিল--
 ভন্তে! আপনি কেন প্রব্রজিত হইয়াছেন? আপনার পরম উদ্দেশ্য কি?”
স্থবির কহিলেন- “মহারাজ! ধর্মাচরণ সংযমাচরণের নিমিত্ত আমাদের প্রব্রজ্যা। শ্রামণ্যফলই আমাদের পরমার্থ বা চরম লক্ষ্য।
ভন্তে! গৃহীদের মধ্যে কেহ ধর্মাচারী সংযমাচারী আছেন ?"
হ্যাঁ মহারাজ! গৃহীও ধর্মাচরণ সংযমাচরণ করিতে পারেন। বারাণসীর ঋষিপত্তন মৃগদাবে ভগবানের ধর্মচক্র প্রবর্তনের সময় আঠার কোটি ব্রহ্মার  ধর্মাধিগম হইয়াছিল, অপর সংখ্যাতীত দেবগণেরও ধর্মজ্ঞান উৎপন্ন হইয়াছিল, তাঁহাদের মধ্যে কেহ প্রব্রজিত ছিলেন না। পরন্তু সকলেই গৃহস্থ ছিলেন। পুনরায় ভগবানের মহাসময়, মহামঙ্গল, সমচিত্ত-পরিয়ায়, রাহুলোবাদ, পরাভব সূত্রোপদেশের পর অসংখ্য দেবতার ধর্মজ্ঞান উৎপন্ন হইয়াছিল। তাহারা সকলেই গৃহস্থ ছিলেন, প্রব্রজিত নহে।
ভন্তে আয়ুপাল! তাহা হইলে আপনাদের প্রব্রজ্যা নিরর্থক। পূর্বজন্মকৃত পাপকর্মের ফলে শাক্যপুত্রীয় শ্রমণগণ প্রব্রজিত হন, ধুতাঙ্গত আচরণ করেন। ভন্তে আয়ুপাল! যে সকল ভিক্ষু একাসনিক ধুতাঙ্গ ধারণ করেন, তাহারা অবশ্যই পূর্বজন্মে পরম্বাপহারী চোর হইয়া থাকিবেন! অপরের সম্পত্তি অপহরণ কর্মফলেই বর্তমানে একাসনিক হইয়া থাকেন। তাঁহারা যথাসময় ইচ্ছামত ভোজন লাভ করেন না। ইহাতে তাঁহাদের কোন শীল নাই, তপস্যা নাই, আর ব্রহ্মচর্য নাই। ভন্তে আয়ূপাল! যে সকল ভিক্ষু অভ্যবকাশিক (সতত খোলা স্থানে বাসের) ধুতাঙ্গধারী তাহারা পূর্ব জন্মে গ্রাম-ঘাতক চোর ছিলেন, কোন ঘরের ভিতর থাকিতে পারেন না। ইহাতে তাহাদের কোন শীল, তপ ব্রহ্মচর্য নাই। ভন্তে আয়ুপাল! যে সকল ভিক্ষু নিঃশয্যা বা শয়নহীন ধুতাঙ্গ গ্রহণ করেন, তাহারা পূর্বজন্মে পথে লুণ্ঠনকারী চোর হইয়া থাকিবেন। তাঁহারা পথিকগণকে ধরিয়া বাধিয়া বসাইয়া রাখিতেন, সেই পাপ কর্মের ফলে এই জন্মে নিঃশয্যিক হইয়াছেন এবং কখনও শয়ন করিতে পারেন না। ইহাতে তাঁহাদের কোন শীল, তপ ব্রহ্মচর্য নাই।"
৪০। এইরূপ উক্ত হইলে ভদন্ত আয়ুপাল নীরব হইলেন। তিনি এইসব কথার অর্থ বুঝিতে পারিলেন না। তখন, পঞ্চশত যবন রাজাকে কহিলেনমহারাজ! এই স্থবির পন্ডিত, কিন্তু বিশারদ নহেন, তাই উত্তর দিতেছেন না।
ভদন্ত আয়ুপালকে এই প্রকারে নীরব থাকিতে দেখিয়া রাজা করতালি দিয়া উচ্চৈঃস্বরে যবনদিগকে কহিলেন, “হায়! জম্বুদ্বীপ পন্ডিতশূন্য, একেবারে তুষের ন্যায় সারহীন। এখানে এমন কোন শ্ৰমণ-ব্রাহ্মণ নাই যিনি আমার সহিত বাক্যালাপ করিতে আমার সন্দেহ ভঞ্জন করিতে সাহস করেন।
৪১ এই বলিয়া রাজা সমগ্র পরিষদের দিকে অবলোকন করিলেন, কিন্তু তিনি যবনদিগকে নির্ভীক নিঃসংশয় দেখিয়া চিন্তা করিলেন- “সম্ভবতঃ অপর কোন পন্ডিত ভিক্ষু নিশ্চয় আছেন, যিনি আমার সঙ্গে আলাপ করিতে উৎসাহ রাখেন, সেই কারণে যবনরা নীরব।
তখন রাজা মিলিন্দ যবনদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন- “কেমন, অপর কোন পন্ডিত ভিক্ষু আছেন কি, যিনি আমার সঙ্গে তর্ক করিয়া সন্দেহ ভঞ্জন করিতে সাহস করেন?
৪২। সেই সময় আয়ুষ্মান নাগসেন শ্ৰমণসংঘ পরিবেষ্টিত হইয়া গ্রাম, নগর ও রাজধানীতে ভিক্ষা করিতে করিতে ক্রমশঃ সাগল নগরে পৌছিলেন। তিনি সংঘনায়ক, গণনায়ক, গণাচার্য, জ্ঞানী, যশস্বী, বহুলোকের সম্মানিত, পন্ডিত, চতুর, বুদ্ধিমান, নিপুণ, বিজ্ঞ, প্রভাবশালী, বিনীত, বিশারদ, বহুশ্রুত, ত্রিপিটকজ্ঞ, বেদ-পারগ, প্রত্যুৎপন্নমতি, আগমবি, প্রতিসম্ভিদাসম্পন্ন, শান্তার নবাঙ্গ শাসন হৃদয়ঙ্গত, পারমীপ্রাপ্ত, জিনবচনে ধর্ম-অর্থ-দেশনা-প্রতিবেধ-কুশল, অক্ষয় বিচিত্র প্রতিভাসম্পন্ন, বিচিত্র বক্তা, কল্যাণভাষী, দুরবগাহ, দুঃসই দুর্নিবার ছিলেন। তাহার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দুষ্কর ছিল। তাহাকে তর্ক দ্বারা নিবারিত করা সম্ভব নহে। তিনি সাগরের ন্যায় প্রশস্ত, হিমালয় সদৃশ নিশ্চল, নিষ্কলুষ, অবিদ্যারূপ অন্ধকার নাশক, জ্ঞানালোক বিকাশক, মহাবক্তা, অন্যমতাবলম্বীকে পরাজয়কারী, অপরতীর্থিক-মর্দনকারী ছিলেন।
তিনি ভিক্ষু, ভিক্ষুণী, উপাসক, উপাসিকা, রাজা রাজমহামাত্য সকলের দ্বারা সম্মানিত, গৌরবান্বিত, মানিত, পূজিত অর্চিত হন। চীবর-পিন্ডপাত, শয়নাসন, রোগপ্রত্যয়-ভৈষজ্য, অগ্রলাভ অগ্রযশ প্রাপ্ত, ধর্মোপদেশ শ্রবণের ইচ্ছায় আগত বৃদ্ধ বিজ্ঞগণকে বুদ্ধের ধর্মরত্নের নবাঙ্গ প্রদর্শক, ধর্মমার্গের উপদেশক, ধর্মালোকের ধারক, ধর্মপতাকার উত্তোলনকারী, ধর্মশঙ্খবাদক, ধর্মভেরী প্রহারক, সিংহনাদকারী, বজ্রের ন্যায় গর্জনকারী, মধুর-বাণী ভাষী, উত্তম জ্ঞান-রূপ বিদ্যুজ্জাল পরিবেষ্টিত তিনি, করুণারূপ জলপূর্ণ মহৎ ধর্মামৃত মেঘের বর্ষণ দ্বারা সমগ্র জগতকে পরিতৃপ্ত করিতে করিতে গ্রাম, নগর, রাজধানীতে বিচরণ করিয়া ক্রমান্বয়ে সাগল নগরে উপস্থিত হইয়াছেন।
৪৩। তথায় আয়ূম্মান নাগসেন আশি সহস্র ভিক্ষুর সহিত সংখেয্য পরিবেণে অবস্থান করিতেছেন। সে কারণে প্রাচীনেরা বলেন-
“(নাগসেন) বহুশ্রুত, বিচিত্র বাগ্মী, নিপুণ বিশারদ, নানা সিদ্ধ অবগত, সুদক্ষ, প্রত্যুৎপন্ন, বুদ্ধিমত্তায় চতুর।
ত্রিপিটকে অভিজ্ঞ, পঞ্চনিকায় চার নিকায়ধারী সেই ভিক্ষুগণ নাগসেনকে অগ্রণী বলিয়া মানিয়া লইয়াছেন।"
গম্ভীর, প্রাজ্ঞ, মেধাবী, সুমার্গ কুমার্গ সম্বন্ধে অভিজ্ঞ বিশারদ নাগসেন পরমার্থ (নির্বাণ) প্রাপ্ত হইয়াছেন।
(তিনি সেই নিপুণ, সত্যবাদী ভিক্ষুগণ পরিবেষ্টিত হইয়া গ্রাম নগরে বিচরণ করিতে করিতে সাগল নগর উপনীত হইয়াছেন। নাগসেন তখন সংখেয্য পরিবেশে বাস করিতেছেন এবং পর্বতে কেশরীর ন্যায় তিনি জনগণকে উপদেশ দান করিতেছেন।

আয়ুস্মান নাগসেন রাজা মিলিন্দের মিলন
৪৪ অনন্তর দেবমন্তিয় রাজা মিলিন্দকে কহিলেন- “মহারাজ! অপেক্ষা করুন। নাগসেন নামক এক পন্ডিত মেধাবী, বিনীত, বিশারদ, বহুশ্রুত, চিত্রকথী, কল্যাণধর্মপ্রবক্তা, অর্থ, ধর্ম, নিরুক্তি প্রতিভান- এই চারি প্রতিসম্বিদায় পরিপূর্ণতাপ্রাপ্ত স্থবির আছেন। এই সময় তিনি সংখেয্য পরিবেণে বাস করিতেছেন। মহারাজ! আপনি তাহার কাছে যাইয়া প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন। তিনি আপনার সহিত আলোচনা করিতে আপনার সন্দেহ ভঞ্জন করিতে উৎসাহী।'
তখননাগসেনশব্দ শুনিয়াই রাজা মিলিন্দের সহসা ভয় হইল, বুদ্ধিলোপ হইল, রোমাঞ্চ হইল।
রাজা মিলিন্দ দেবমন্তিয়কে কহিলেন- “সেই নাগসেন ভিক্ষু আমার সহিত আলাপ করিতে উৎসাহী?”
হাঁ, মহারাজ! উৎসাহী। যদি ইন্দ্র, যম, বরুণ, কুবের, প্রজাপতি, সুম, সন্তোষিত দেব, লোকপালগণ পিতা-পিতামহ সহ মহাব্রহ্মাও আসেন তবে তিনি তাঁহার সহিতও আলাপ করিতে পারেন, মানুষের কথাই বা কি!”
তখন রাজা মিলিন্দ দেবমন্তিয়কে কহিলেন- “দেবমন্তিয়! তাহা হইলে তুমি ভদন্তের নিকট দূত প্রেরণ কর।” “হাঁ, দেব!” বলিয়া দেবমন্তিয় আয়ুস্মান নাগসেনের নিকট দূত পাঠাইলেন- “ভন্তে! রাজা মিলিন্দ আপনাকে দর্শন করিতে ইচ্ছুক।
আয়ুস্মান নাগসেনও উত্তর করিলেন- “তাহা হইলে তিনি আসিতে পারেন।
অতঃপর রাজা মিলিন্দ পাঁচ শত যবন পরিবৃত হইয়া উত্তম রথে আরোহণ করিয়া বিপুল সৈন্য সামন্তসহ সংখেয্য পরিবেণে আয়ুস্মান নাগসেন সমীপে উপস্থিত হইলেন।
৪৫। সেই সময় আয়ুস্মান নাগসেন আশী হাজার ভিক্ষু সহ মন্ডলমালে (সম্মেলন গৃহে) উপবিষ্ট ছিলেন। রাজা মিলিন্দ দূর হইতেই আয়ুস্মান নাগসেনের পরিষদ দেখিলেন। তিনি দেবমন্তিয়কে কহিলেন- “দেবান্তিয়! এই মহা পরিষদ কাহার?”
মহারাজ! আয়ুস্মান নাগসেনের এই পরিষদ।
তখন আষুস্মান নাগসেনের পরিষদ্ দূর হইতে দেখিয়া রাজা মিলিন্দের ভয় হইল, বুদ্ধি লোপ পাইল, রোমাঞ্চ হইল।
তিনি গন্ডার পরিবেষ্টিত গজের ন্যায়, গরুড় পরিবেষ্টিত সর্পের ন্যায়, অজগর পরিবেষ্টিত শৃগালের ন্যায়, মহিষ পরিবেষ্টিত ভল্লুকের ন্যায়, সর্পানুধাবিত ভেকের ন্যায়, ব্যাঘ্রানুধাবিত মৃগের ন্যায়, অহিতুল্ডিক (সাপুড়ে) গৃহীত সর্পের ন্যায়, মার্জীর গৃহীত ইঁদুরের ন্যায়, পিঞ্জরাবদ্ধ পক্ষীর ন্যায়, জালে আবদ্ধ মৎস্যর ন্যায়, হিংস্রপশুসমাকুল অরণ্যে প্রবিষ্ট মানুষের ন্যায়, বৈশ্রবণের প্রতি অপরাধকৃত যক্ষের ন্যায় এবং ক্ষীণ আয়ু দেবপুত্রের ন্যায় ভীত, উদ্বিগ্ন, সন্ত্রস্ত, সংবিগ্ন, রোমাঞ্চিত, বিমনা, দুর্মনা, ভ্রান্তচিত্ত বিপরিণতচিত্ত হইলেন।এই ব্যক্তি আমাকে পরাজিত না করুকএই চিন্তা করিয়া তিনি সাহস অবলম্বন করিয়া দেবমন্তিয়কে কহিলেন- “দেবমন্তিয়! তুমি আমাকে বলিও না আয়ুষ্মন নাগসেন কে? অনুক্ত হইলেও আমি নাগসেনকে জানিয়া লইব।
সাধু মহারাজা! আপনিই তাঁহাকে জানিয়া নিন।”
৪৬। সেই সময় নাগসেন ভিক্ষু পরিষদের সম্মুখে উপবিষ্ট চল্লিশ হাজার ভিক্ষুর মধ্যে কনিষ্ঠ এবং পশ্চাত- উপবিষ্ট চল্লিশ হাজার ভিক্ষুর মধ্যে বায়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন।
তখন রাজা মিলিন্দ সমগ্র ভিক্ষুসংঘকে সম্মুখে, পশ্চাতে মধ্যভাগে। দেখিতে দেখিতে দুর হইতে আয়ুস্মান নাগসেনকে দেখিলেন। তিনি ভিক্ষুসংঘের মধ্যে কেশরী সিংহের ন্যায় নির্ভীক, নিরাতঙ্ক, নিঃসংকোচ চিত্তে বসিয়া আছেন। তাহাকে দেখিয়া রাজা ভাবভঙ্গিতেই জানিতে পারিলেন- “এই পরিষদে ইনিই নাগসেন।"
তখন রাজা মিলিন্দ দেবমন্তিয়কে কহিলেন- “কেমন দেবমন্তিয়! ইনিই তো আয়ুস্মান নাগসেন?”
হ্যাঁ, মহারাজ! ইনিই আয়ুস্মান নাগসেন। আপনি নাগসেনকে সুষ্ঠুভাবে চিনিতে পারিয়াছেন।
এই ভাবিয়া রাজা সন্তুষ্ট হইলেন যেকেহ না বলিলেও আমি নাগসেনকে জানিতে পারিয়াছি। কিন্তু নাসেনকে দেখিয়াই রাজা মিলিন্দের ভয়, বুদ্ধিলোপ রোমাঞ্চ হইল।
তজ্জন্য বলা হইয়াছে-
সদাচারসম্পন্ন, উত্তম দমগুণে বিভূষিত নাগসেনকে দেখিয়া রাজা এই কথা বলিলেন-
আমি বহু বাগ্মী দেখিয়া অনেক শাস্ত্রালোচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছি। কিন্তু আজ আমার যেমন ভয় হইতেছে এমন ভয় কখনও হয় নাই। আজ নিশ্চয় আমার পরাজয় হইবে, নাগসেনেরই জয় হইবে। সে কারণে আমার চিত্ত অস্থির হইয়াছে।

বাহি-কথা সমাপ্ত
---#চলমান।
পরবর্তী পর্ব পড়ার জন্য আমাদের সাথে থাকুন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !