[পঞ্চম বর্গ]
নাগসেনের নিকট রাজা মিলিন্দের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন
৪৬। স্থবির কহিলেন, “মহারাজ! জানেন কি এখন সময় কত হইয়াছে?”
“হাঁ, ভন্তে! জানি। এখন রাত্রির প্রথম যাম গত হইয়াছে, মধ্যম যাম চলিতেছে। মশাল প্রজ্জ্বলিত হইয়াছে, চারিটি পতাকা উত্তোলনের আদেশ হইয়াছে, ভাণ্ডার হইতে রাজার দানীয় বস্তুগুলি যাইবে।”
যবনগণ বলিলেন, “মহারাজ! আপনিও দক্ষ, ভিক্ষু ও পণ্ডিত।”
“হাঁ, বন্ধুগণ! স্থবির পণ্ডিত। এইরূপ গুরু ও আমার ন্যায় শিষ্য হইলে পণ্ডিত
ব্যক্তি অচিরেই ধর্ম বুঝিতে পারিবেন।”
স্থবির নাগসেনের প্রশ্নোত্তরে সন্তুষ্ট হইয়া রাজা তাঁহাকে শত সহস্র মূল্যের
“ভন্তে! অদ্য হইতে প্রতিদিন আপনারা আট শত জনের খাদ্যভোজ্য আমার
এখান হইতে পাইবেন। অন্তঃপুরে যাহা কিছু প্রস্তুত হইবে তাহার দ্বারা আপনাদিগকে নিমন্ত্রণ করিতেছি।”
“যথেষ্ট মহারাজ! আমার জীবিকা-নির্বাহ হইতেছে।”
“ভন্তে! আমি জানি, আপনার ভরণ পোষণ চলিতেছে। তথাপি আপনি
নিজেকে এবং
আমাকে রক্ষা করুন। কি প্রকারে নিজেকে রক্ষা করিবেন?
‘নাগসেন রাজা মিলিন্দকে প্রসন্ন করিয়া কিছু পাইলেন না’ পরের এই অপবাদ আপনার উপর আসিতে পারে। তাহা হইতে নিজেকে রক্ষা করুন। কি প্রকারে আমাকে রক্ষা করিবেন? ‘মিলিন্দ রাজা প্রসন্ন হইয়াও প্রত্যুপকার কিছু করিলেন না’ পরের এই অপবাদ আমার উপর আসিতে পারে। তাহা হইতে আমাকে রক্ষা করুন।”
“মহারাজ! তথাস্তু।”
“ভন্তে! পশুরাজ সিংহ যেমন স্বর্ণ-পিঞ্জরে নিক্ষিপ্ত হইলেও বহির্মুখী হইয়া বাস করে সেইরূপ যদিও আমি গার্হস্থ্য-আশ্রমে বাস করি তথাপি সতত বহির্মূখী হইয়া আছি। ভন্তে! যদি আগার হইতে অনাগারিক হইয়া সন্ন্যাস ধর্ম গ্রহণের সুযোগ পাই তবে জীবন ধন্য মনে করিব। আমি দীর্ঘকাল বাঁচিব না, যেহেতু আমার বহু শক্র বিদ্যমান।”
৪৭। তৎপর আয়ুষ্মান নাগসেন রাজা মিলিন্দের প্রশ্নের উত্তর দিয়া আসন হইতে উঠিলেন এবং সংঘারামে চলিয়া গেলেন। আয়ুষ্মান নাগসেন চলিয়া যাইবার পরে রাজা মিলিন্দের এই চিন্তা হইলÍ“আমি কি কি জিজ্ঞাসা করিলাম ভদন্ত নাগসেন কি কি উত্তর দিলেন?” তখন রাজা মিলিন্দের মনে হইলÍ“আমি সমস্ত প্রশ্নই করিয়াছি, আর ভদন্ত নাগসেন সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়াছেন?”
সংঘারামে উপনীত হইলে আয়ুষ্মান নাগসেনেরও যেইরূপ চিন্তা হইলÍ“রাজা
মিলিন্দ যে সকল প্রশ্ন করিয়াছেন আমি সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়াছিত?”
পরদিন পূর্বাহ্নে আয়ুষ্মান নাগসেন চীবর পরিধান করিয়া পাত্রচীবর লইয়া রাজা মিলিন্দের বাসস্থানে উপনীত হইলেন এবং সজ্জিত আসনে বসিলেন।
রাজা মিলিন্দও তাঁহাকে অভিবাদন করিয়া একপ্রান্তে বসিলেন এবং বলিলেনঃ
“ভন্তে! আপনি এইরূপ বুঝিবেন না যে‘আমি নাগসেনকে বহু প্রশ্ন করিয়াছি কেবল এই আনন্দেই অবশিষ্ট রাত্রি অতিবাহিত করিয়াছি। অবশিষ্ট রাত্রিতে আমি এই বিচার করিয়াছি যে আমি কি কি প্রশ্ন করিয়াছি, ভদন্ত কি কি উত্তর দিয়াছেন। আমি সমস্ত উত্তম প্রশ্ন করিয়াছি, এবং ভদন্তও সমস্ত প্রশ্নের উত্তম উত্তর দিয়াছেন।”
স্থবিরও কহিলেন, “মহারাজ! “আপনিও এইরূপ বুঝিবেন না যে‘আমি রাজা মিলিন্দের সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়াছি’ কেবল এই আনন্দেই অবশিষ্ট রাত্রি অতিবাহিত করিয়াছি। তখন আমি কি কি প্রত্যুত্তর দিয়াছি। রাজা মিলিন্দ সমস্ত উত্তম প্রশ্ন করিয়াছেন, আমি সমস্ত প্রশ্নের উত্তম প্রত্যুত্তর দিয়াছি।”
এই প্রকারে দুই মহাসত্ত্ব পরস্পরের সুভাষিত বাক্য অনুমোদন করিলেন।
[পঞ্চম বর্গ সমাপ্ত]
[রাজা মিলিন্দের প্রশ্ন ও উত্তর সমাপ্ত]
[বিমতিচ্ছেদন প্রশ্ন সমাপ্ত]
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।