কোশল রাজ প্রসেনজিতের ষোল স্বপ্ন ও তার ব্যাখ্যা

একদা কোশলরাজ প্রসেনজিত রাত্রে পরপর ষোলটি স্বপ্ন দেখে ভীত ত্রাসিত হয়ে ঘুম থেকে জাগ্রত হন। সকালে পুরোহিত ব্রাহ্মণ এই স্বপ্ন বৃত্তান্ত শুনে বললেন, “স্বপ্ন সমূহ বড়ই অকুশলজনক। এতে রাজ্য অন্তরায়, জীবন-অন্তরায় কিংবা ভোগ অন্তরায় এই তিনটির যে কোন একটি ঘটতে পারে। এর প্রতিকারের মত আমাদের ব্যবস্থা আছে। আপনার চিন্তার কোন  কারণ নাই, মহারাজ।”

রাজা জিজ্ঞেস করলেন, “কি প্রতিকার?” ব্রাহ্মণ বললেন, “মহারাজ, শান্তি স্বাস্থ্যয়নের জন্য সর্বচতুষ্ক যজ্ঞ করতে হবে।” ভীত ত্রাসিত রাজা যজ্ঞের যাবতীয় দায়িত্ব পুরোহিত ব্রাহ্মণদের হাতে অর্পণ করে নিশ্চিত হলেন। বিস্তর খাদ্য-ভোজ্য ও ধন সম্পত্তি লাভের আশায় ব্রাহ্মণগণ যজ্ঞানুষ্ঠানের কাজে লেগে যান। যজ্ঞ স্থান নির্বাচন, বলির জন্য সবল কায় পশু-পাখি সংগ্রহ, যজ্ঞের বিবিধ উপকরণাদি সংগ্রহের জন্যে চারিদিকে লোকজন প্রেরণ করা হল। রাজ কর্মচারীদের মধ্যে হাঁকডাক বেড়ে গেল। এদিকে কোশলরাজের প্রধান মহিয়ষী মল্লিকা দেবী সব জ্ঞাত হয়ে রাজাকে জেতবনে ভগবান বুদ্ধের নিকট স্বপ্ন বিবরণ জানাতে অনুরোধ করলেন। রাজা জেতবন বিহারে গিয়ে ভগবান বুদ্ধকে বন্দনা করে স্বপ্ন-বৃত্তান্ত একে একে শানাতে আরম্ভ করেন এবং ব্রাহ্মণের সিদ্ধান্তের কথা জানালেন। 

প্রথম স্বপ্নঃ কৃষ্ণ বর্ণের চারটি বৃষ চারদিক থেকে এসে রাজ-ময়দানে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত বৃষ দেখার জন্য বহুলোক সমাগত। কিন্তু বিনা যুদ্ধে তারা ক্ষান্ত হয়ে গেল। এর হেতু কি?

উত্তরঃ ভগবান বললেন, “মহারাজ এ স্বপ্ন ফল আপনার আমার জীবিত কালে ঘটবে না, ভবিষ্যতে ঘটবে। এতে আপনার কোন অন্তরায়ও হবে না। ব্রাহ্মণগণ কেবল নিজ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বলেছে। ভবিষ্যতে রাজা-প্রজারা হবেন কৃপণ ও অধার্মিক, তাদের কুশলকর্ম প্রায়হীন হবে, অকুশল বেড়ে যাবে, নিয়মিত বরিবর্ষণ হবে না। অনিয়মিত বৃষ্টিতে শষ্য নষ্ট হবে। দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, চারদিকে মেঘ উঠবে, মেঘগর্জনে বিদ্যুৎ চকাবে, কিন্তু বৃষ্টি হতে না হতেই বিনা যুদ্ধে বৃষদের প্রস্থানের ন্যায় মেঘসমূহ চলে যাবে। 

দ্বিতীয় স্বপ্নঃ ছোট ছোট গাছগুলো এক বিঘত কিংবা দেড় বিঘত বৃদ্ধি পেতে না পেতেই ফুল ও ফল প্রসব করল, এর কারণ কি?

উত্তরঃ ভগবান বললেন, মহারাজ! ভবিষ্যতে সমাজের দুরাবস্থায় মানুষ হবে অল্পয়ূ, হবে তীব্র রাগ পরায়ণ, অল্প বয়সে মেয়ারা হবে ঋতুমতী ও গর্ভধারিণী এবং অকালে পুত্র-কন্যা প্রসব করবে। ছোট গাছের ন্যায় তাদের ঋতুভাব এবং ফলের ন্যায় পুত্র-কন্যা প্রসব। আবার তাদর থেকে অল্পবয়ষ্ক ও রোগক্রান্ত পুত্র-কন্যা জন্ম দেবে। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না। 

তৃতীয় স্বপ্নঃ গাভীরা সদ্যপ্রসূত বাছুরের দুধপান করছে, এর কারণ কি? 

উত্তরঃ ভগবান বললেন, মহারাজ! ভবিষ্যতে যখন বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মান নষ্ট হবে তখন এসব ঘটবে। পুত্র-কন্যা কিংবা পুত্র বধূরা মাতা-পিতার প্রতি ও শ্বশুর-শ্বাশুড়ির প্রতি শ্রদ্ধহীন হবে, নিলর্জ্জ ভাবে স্বয়ং সংসারের ভার গ্রহণ করবে। ইচ্ছা হলে গুরুজনদেরকে খাদ্য, বস্ত্র দেবে ইচ্ছা না হলে দেবে না। কাজেই বৃদ্ধরা নিরুপায় হয়ে বাচ্চার দুগ্ধপায়ী গাভীর ন্যায় সন্তানগণের কৃপাধীন হয়ে জীবন ধারণ করতে বাধ্য হবে।  এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নেই। 

চুতুর্থ স্বপ্নঃ বলবান দৃঢ়কায় গরু থাকা সত্বেও অল্পবয়স্ক গরু গাড়ী টানতে সংযোজন করল, তারা শকট টানতে অক্ষম বিধায় অগ্রসর হতে পারল না, এর কারণ কি? 

উত্তরঃ ভগবান বললেন, মহারাজ! ভবিষ্যতে রাজারা যখন অধার্মিক হবে তখন এ অবস্থা ঘটবে। রাজকার্য পন্ডিত, কুশলী ও কর্মঠ ব্যক্তির পরিবর্তে মূর্খ ও অনবিজ্ঞ ব্যক্তিরা নিয়োগ প্রাপ্ত হবে। তারা যথাযথভাবে কাজ কর্ম করতে সক্ষম হবে না। বৃদ্ধ ও অনভিজ্ঞ ব্যক্তিরা আত্মসম্মান হানির ভয়ে এসব কাজে অগ্রসর হবে না। এভাবে রাজকার্যের পরিহানি হতে থাকবে এবং রাজ্যশী নষ্ট হতে থাকবে। শকট বহনে অসমর্থ তরুণ গরুর ন্যায় হবে নব্য লোকেরা আর বলবান গরুর ন্যায় হল বৃদ্ধ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা। এতে আপনার কোন ভয় নেই। 

পঞ্চম স্বপ্নঃ একটি অশ্বের দুটো মুখ, দুমুখেই খাচ্ছে ঘাস, এর অর্থ কি? 

উত্তরঃ এ ঘটনাও ভবিষ্যতে অধার্মি ক রাজার সময়ে ঘটবে। অনাগত অধার্মি ক মূর্খ রাজাগণ অধার্মিক মূর্খ রাজাগণ অধার্মিক লোভী ব্যক্তিকে বিচারপতি নিযুক্ত করবেন। তারা বিচারাসনে বসে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষের নিকট থেকে উৎকোচ (ঘুষ) গ্রহণ করবে। স্বপ্নের অশ্বের ন্যায় এরা দুমুখেই খাবে। এতে আপনার অমঙ্গল ঘটবে না। 

ষষ্ঠ স্বপ্নঃ বহুমূল্যবান সবর্ণ পাত্রে  একটি জড় শৃগাল প্রস্রাব করল,  এর কারণ কি? 

উত্তরঃ এর ফলও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে অধার্মিক রাজাগণ প্রাচীন সম্মানিত বংশের লোকদেরকে নানা কারনে সম্মান প্রদর্শণ করবে না। অকুলীনেরাই সংখ্যায় বাড়বে, কুলীনগণ দিন দিন গরীব হবে। অকুলীনগণ ও নিম্নশ্রেণীর লোকেরা সম্পদশালী হবে এবং তাদের সাথে কুলীনগণ নিজ নিজ কন্যার বিবাহ দেবে, নীচ লোকের সহবাসে কুলীন কন্যাগণ মর্যদা হারাবে। যেমন- মহামূল্যবান পাত্রে জড় শৃগালের প্রস্রাব সদৃশ। এতে আপনার কোন অনিষ্ট হবে না। 

সপ্তম স্বপ্নঃ একজন লোক বেঞ্চে বসে রজ্জু পাকাচ্ছে, এটা প্রস্তুত হওয়া মাত্র বেঞ্চের নীচ অবস্থানরত একটি শৃগালী লোকটার অজ্ঞাতসারে ওটা খেয়ে পেলেছে। এর অর্থ কি? 

উত্তরঃ ভগবান বললেন, মহারাজ! এটিও ভবিষ্যতে ঘটবে। অনাগতে নারীগণ পুরুষের সঙ্গ অভিলাষ করবে, তারা হবে সুরাপায়ী, অলংকার লোভী, বিলাসী ও আমিষশী। সেই দুঃশীল, দূরাচারী স্ত্রী স্বামীর সঞ্চিত সম্পদ অকাতরে নষ্ট করবে এবং গোপনে উপপতির সাথে মিলিত হবে। যেমন- স্বামীর অজ্ঞাতসারে শৃগালীর রজ্জু ভক্ষণ সদৃশ্য। এতে আপনার কোন অশুভ  হবে না। 

অষ্টম স্বপ্নঃ রাজদ্বারে  একটি বৃহৎ পূর্ণ কলসী, এর চারপাশে বহু শূণ্য কলসী রয়েছে। লোকেরা ভারে জল এনে পূর্ণ কলসীতে ঢালছে। কলসীর জল চারদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে তবুও শূণ্য কলসীতে কেহ জল ঢালছে না। এর কারণ কি?

উত্তরঃ ভবিষ্যতে দেশের বড় দূরাস্থা হবে, দেশে বলশূণ্য ও ধনশূণ্য হবে। রাজাগণ অর্থলোভী হবে। বিভিন্ন ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে রাজ ভান্ডার পূণ্য করবে, কিন্তু গরীবের শূণ্য ভান্ডারের প্রতি থাকাতেও অবসর মিলবে না। যেমন- শূণ্য কলসী শূণ্য থাকবে। এতে অপনার বিচলিত হওয়ার কারণ নাই। 

নবম স্বপ্নঃ পঞ্চবর্ণ পদ্ম প্রস্ফুটিত ও চতুর্দিকে ঘাটযুক্ত এক জলাশয়। এর মাঝখানে জল ঘোলা ও পঙ্কিল কিন্তু তটপার্শ্বের যে জল দ্বিপদ ও চতুষ্পদেরা পান করছে তা পরিষ্কার, এর কারণ কি?

উত্তরঃ এসব আমি আপনি বেঁচে থাকতে ঘটবে না। ভবিষ্যতে রাজাগণ যখন অধার্মিক, স্বেচ্ছাচারী ও অবিচারী হয়ে রাজত্ব করবে, ধর্মমতে বিচারদি করবে না, ঘুষ খোর অত্যাচারে ও উৎপীড়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গিয়ে বাসস্থান নির্মাণ করবে, মধ্যাঞ্চল জনশূণ্য হতে থাকবে। যেমন- পুষ্করিণীর মধ্যস্থিত জল ঘোলা কিন্তু তটপার্শ্বের জল নির্মল ইত্যাদি। এতে আপনার কোন ভয় নাই। 

দশম স্বপ্নঃ একটি পাত্রে ভাত পাক হচ্ছে এর কোন পাশে পেচাল এর কোন পাশে চাউল আর কোন পাশে সুপক্ক। এর কারণ কি?

উত্তরঃ ভগবান বললেন, এটাও ভবিষ্যতে ঘটবে। যখন রাজাগণ অধার্মিক হবে তাদের কারনে অন্যন্যেরাও অধার্মিক হবে। তখন রক্ষক দেবতাগণ ভূমিস্থিত কিংবা আকাশস্থিত হোক অধার্মিক হবে। সেই অধার্মিক রাজার রাজ্য নানাবিধ বিপদ-আপদের সম্মুখীন হবে (যেমন- ঝড়, তুফান, অতিবৃষ্টি, আন্ত-কোন্দল বা গৃহযুদ্ধ, বহিঃ রাষ্ট্রের আক্রমণ ইত্যাদি।) এরূপে একধিক ভয়ানক বৃষ্টি যার ফলে শস্য নষ্ট, অন্যদিকে বৃষ্টির অভাবে চাষহীন অবস্থা আবার কোনদিকে সু-বৃষ্টির ফলে শস্য উৎপন্ন হবে। এক পাতিলে তিন প্রকার ভাতের ন্যায় একরাজ্যে তিন প্রকার অবস্থা হবে। এতে আপনার কোন অশুভ হবে না। 

একাদশ স্বপ্নঃ লক্ষ টাকা মূল্যের চন্দন সার অম্লময় দধির বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে- এর কারণ কি? 

উত্তরঃ ভবিষ্যতে আমার শাসন ধর্মের পরিহানীর সময় ঘটবে। ভবিষ্যতে অধিকাংশ ভিক্ষু স্বার্থপরায়ণ ও লজ্জহীন হবে। লোভের বিরুদ্ধে আমি যা উপদেশ দিয়েছি, ভবিষ্যতে তারা লোভ পরবশ হয়ে অর্থের আশায় এ ধর্মোপদেশের বিরুদ্ধাচরণ করবে। দ্রব্যলোলুপ ভিক্ষরা নৈর্বাণিক ধর্ম তারা সু-স্বরে বা মধুর শব্দে প্রচার করবে। যেমন বহু মূল্যের চন্দন খারাপ দধির দ্বারা বিক্রিত হচ্ছে।  এতে আপনার কোন অন্যায় হবে না। 

দ্বাদশ স্বপ্নঃ তুচ্ছ লাউ সকল পানিতে ভাসছে- এর কারণ কি? 

উত্তরঃ ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে লোকের চরিত্র বিকৃত হলে এমনটা ঘটবে। সে সময় রাজাগণ সম্ভ্রান্ত কুলপুত্রগণকে যশ বা খ্যাতি প্রদান করবে না। অকুলীনদেরকে প্রদান করবে। অকুলীনেরা সম্পদশালী হবে, কুলীনেরা দরিদ্র হবে এবং রাজার সম্মুখে রাজদ্বারেও বিচার স্থানে কুলীনদের কথা তুচ্ছ লাউ সদৃশ ভেসে থাকবে অর্থাৎ তাদের কথাই গ্রাহ্য হবে। সে রূপে সংঘ মধ্যেও দুশ্চরিত্র, অশিক্ষিত ভিক্ষুরা সাধক ও বিজ্ঞ স্থবিরদের উপর প্রাধ্যন্য বিস্তার করবে অর্থাৎ সংঘ কর্মে ও বিচার স্থানে দুঃশীল ভিক্ষুর কথা অগ্রাধিকার পাবে। সুশীল ভিক্ষুর কথা গ্রাহ্য হবে না। এভাবে সকল স্থানে তুচ্ছ লাউয়ের ভাসার ন্যায় অধার্মিক লোকের কথা বলবৎ হবে। এতে আপনার বিচলিত হবার কারণ নাই। 

ত্রয়োদশ স্বপ্নঃ বৃহৎ কূটাগার সদৃশ পর্বত নৌকার ন্যায় ভাসমান দেখলাম। এর কারন কি? 

উত্তরঃ ভগবান বললেন, মহারজ! ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজাগণ অকুলীনদের সম্মান প্রদর্শন করবে।  তারা ধনশালী হবে। কুলীনরা দরিদ্র হেতু অকুলীনদের সম্মান করবে। রাজার সম্মুখে, অমাত্য সম্মুখে ও বিচার স্থানে তারা ঘন শিলার সদৃশ গ্রহণীয় বা যোগ্য হবে। কুলীনেরা উপহাসের পাত্র হবে। ভিক্ষু সভায় শীলবান ভিক্ষুরা তদ্রুপ হবে। ঠিক যেমন- ভাসমান শিলা সদৃশ হবে। এতে আপনার কোন ভয় নাই। 

চতুর্দশ স্বপ্নঃ ক্ষুদ্র মধুক পুষ্পপ্রমাণ ভেকসমূহ বা ব্যাঙ ভীষণ কৃষ্ণ সর্পকে দৌড়ায়ে পদ্ম মৃগালের ন্যায় ছিড়ে মাংস খেতে ও গিলতে দেখলাম। এর কারণ কি? 

উত্তরঃ এই স্বপ্ন ভবিষ্যতে সমাজের দুরাবস্থার ইঙ্গিত। সে সময় মানুষেরা হবে তীব্র রাগপরায়ণ বা কামাতুর। কাজেই তৃষ্ণাতুর হয়ে তরুণরা স্ত্রী বশে আসবে। গার্হস্থ্য কার্যের ভার তাদের উপর অর্পণ করব। অর্থাৎ ভার্যার উপর আপনার সুখ স্বাধীনতা বলিদান করবে। কোনদিন গৃহ স্বামী কোন জিনিসের তত্ত্ব-তলাশ করলে স্ত্রী নানাবিধ কটূক্তি করবে। যে কোন কার্যে কথা বলতে দেবে না। যেমন দাস-দাসীর প্রতি লোকে ব্যবহার করে, তদ্রুপ নব বধুরা স্বামী বা গুরুজনের প্রতি সেরূপ ব্যবহার করবে। অর্থাৎ তারাই ঘরের সর্বেসর্বা হবে। ঠিক ভেকে যেমন সর্প গিলছে। এতে আপনার কোন ভয় নাই। 

পঞ্চদশ স্বপ্নঃ সুবর্ণ রাজহংসপাল নানা দোষ সমন্বিত বা কলুষিত কাকের অনুবর্তী হচ্ছে। এর কারণ কি? 

উত্তরঃ বুদ্ধ বললেন, “ভবিষ্যতে দূূর্বল রাজার সময়ে এমনটা ঘটবে। ভবিষ্যতে রাজাগণ রাজ্য শাসন কিংবা যুদ্ধ বিদ্যায় সুনিপুন হবে না। তারা পদচ্যুত হবার ভয়ে সম্ভ্রান্তগণকে কার্যভার না দিয়ে স্বীয় পদসেবাকারী ক্রীতদাস বা নীচ বংশীয় দাসগণকে প্রাধান্য অর্পন করবে। জাতি গোত্র সম্পন্ন কুলপুত্রের রাজকুলে প্রতিষ্ঠা লাভ না করে জীবন-যাপন করতে অসমর্থ হয়ে ঐসব ক্রীতদাস বা জাতিগোত্রহীন অকুলীনেরা সেবা-শুশ্রূষা করে বিচরণ করবে। ঠিক যেমন সুবর্ণ রাজহংস কাকের অনুবর্তী হচ্ছে। এতে আপনার ভয়ের কোন কারণ নাই। 

ষোড়শ স্বপ্নঃ নেকড়ে বাঘ মেষ খায় তা জানি। কিন্তু মেষসমূহ হিংস্র বাঘকে দৌড়ায়ে খাচ্ছে, এদৃশ্য দেখে অন্যান্য প্রাণিরা ভয়ে ঝোপ-ঝাড়ে আশ্রয় নিচ্ছে। এর কারণ কি? 

উত্তরঃ বুদ্ধ বললেন, মহারাজ! ভবিষ্যতে অধার্মিক রাজার সময়ে নীচ বংশীয়রা রাজ প্রসাদে প্রাধান্য লাভ করবে। কুলীনগণ অপমাণিত ও নিরন্ন হবে। যেমন সম্ভ্রান্তরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাদের হাতে লাঞ্চিত ও অপমানিত হওয়ার ভয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে থাকে, তাদ্রুপ অদূর ভবিষ্যতে শীলবান ভিক্ষুরা পাপী ভিক্ষুর উৎপীড়নে নিরাশ্রয় হয়ে নির্জন অরণ্যে আশ্রয় গ্রহণ করবে বা পালায়ে থাকবে। এতে আপনার কোন ভয়ের কারণ নাই। 

ষোল প্রকার মহা-স্বপ্নের ব্যাখায় রাজা প্রসেনজিৎ ভয়হীন ও আনন্দিত হয়ে যজ্ঞ ত্যাগ করলেন এবং প্রাণি সমূহের বন্ধন মোচন করে দিলেন। 

[উৎসঃ মহা-সুপিন জাতক]

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !