নরকের দিন রাত্রি কত দীর্ঘ্য?

নরকের প্রকৃতি সম্পর্কে কম বেশি অনেকের জানা আছে। অনেকেই ধারনা রাখে যে নরক মানে শাস্তি আর যন্ত্রনা। কিন্তু এই নরক গুলোতে এক একটা দিন কত সময় পযর্ন্ত দীর্ঘ্য হয় এবং সেখানে উৎপন্ন হলে এক একজন কত দিন পযর্ন্ত বাঁচে সে সম্পর্কে অনেকের ধারনা নাই। আমরা আজ সে সম্পর্কে লিখছি। 

সঞ্জীব নরকঃ চতুৰ্ম্মহারাজিক দেবগণের আয়ু মনুষ্য গণনায় নব্বই লক্ষ বৎসর। এই নব্বই লক্ষ বৎসরে প্রথমোক্ত সঞ্জীব নরকে একদিন রাত্রি হয়। এইরূপ দেবগণনায় পাঁচ শত বৎসর সঞ্জীব নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল। 

কালসূত্র নরকঃ ত্রয়স্ত্রিংশ দেবগণের আয়ু মনুষ্য গণনায় তিন কোটি ষাট লক্ষ বৎসরে দ্বিতীয় কালসূত্র নরকের একদিবা রাত্রি হয়। এইরূপে দেব গণনায় এক হাজার বৎসর কালসূত্র নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল।

সংঘাত নরকঃ যাম দেবগণের আয়ু মনুষ্য গণনায় ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসর। এই ১৪ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসরে তৃতীয় সংঘাত নরকে এক দিবারাত্রি হয়। এইরূপে দেব গণনায় দুই হাজার বৎসর সঙ্ঘাত নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল।

আরো পড়ুন>>

·           মানব জন্ম

·               বৌদ্ধ ধর্মে নরক কয়টি ও কি  কি?

·                       প্রেত দুঃখ কি? 

রৌরব নরকঃ তুষিত দেবগণের আয়ু মনুষ্য গণনায় ৫৭ কোটি ৬০ লক্ষ বৎসর। এই ৫৭ কোটি ৬০ লক্ষ বৎসরে চতুর্থ রৌরব নরকের এক দিবারাত্রি হয়। এইরূপ দেব গণনায় চারি হাজার ষাট লক্ষ বৎসর রৌরব নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল ।

মহারৌরবঃ নির্মাণরতি দেবগণের আয়ু মনুষ্য গণনায় ২৩০ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসর । এই ২৩০ কোটি ৪০ লক্ষ বৎসরে পঞ্চম মহারৌরব নরকের এক দিবারাত্রি হয়। এইরূপে দেব গণনায় আট হাজার বৎসর মহারৌরব নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল।

তাপন নরকঃ পরনিৰ্মিত বসবৰ্ত্তী দেবগণের আয়ু মনুষ্য গণনায় ৯ শত ২১ হাজার কোটি ৬০ লক্ষ বৎসর। এই ৯ শত ২১ হাজার কোটি ৬০ লক্ষ বৎসরে যষ্ঠ তাপন নরকের এক রাত্রি দিন হয়। এইরূপে দেব গণনায় ১৬ হাজার বৎসর তাপন নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল।

প্রতাপ নরকঃ সপ্তম প্রতাপ নরকবাসীদের আয়ুষ্কাল অন্তর কল্লার্ধ।

অবীচিঃ অষ্টম অবীচি নরকে প্রাণীদিগের আয়ুষ্কাল এক অন্তর দশ বৎসর হইতে ক্রমে বর্ধিত হইয়া অসংখ্য বৎসর, পুনঃ উহা হইতে ক্রমশঃ হ্রাস প্রাপ্ত হইয়া দশ বৎসর আয়ু হইলে ঐ পরিমিত কালকে এক অন্তরকল্প বলে।

“অবলোকনকারী শত যোজন দূরে স্থিত হইলেও অবীচি নরকের উত্তাপ তাহার চক্ষুভেদ করিতে পারে। বলিয়াছেন, —অবীচি নরকের অগ্নি চতুর্দিকে শত যোজন ব্যাপ্ত হইয়া সৰ্ব্বদা স্থিত থাকে।”

সুতরাং দেখা যাইতেছে, এই সকল নরকে পতিত প্রাণী দিগের আয়ুষ্কাল সুদীর্ঘ; দেবলোকে দেবতাদের আয়ুষ্কাল অত্যল্প।

পাপের পরিণাম দীর্ঘ এবং পুণ্যের ফল অল্পস্থায়ী কেন? যাবজ্জীবন দান, শীল ও মৈত্রী ভাবনার দ্বারা যদি কেহ কোন দেবলোকে উৎপন্ন হন, তথায় তাহার দিব্য সম্পদ জনিত সুখের বাহুল্য হেতু কামরাগ প্রবল হয়। তখন তিনি অভিমানী এবং উদ্ধত (অবিনীত) হন। ঈর্ষা মাৎসর্যের প্রাচুর্য হেতু তাহার পূৰ্বাৰ্জিত পুণ্য ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। যদিও বা কখনও তাঁহার কুশল চিত্ত উৎপন্ন হয়, তথাপি দান বা শীলাদি রক্ষা করিবার যোগ্যপাত্র সেখানে মিলে না ।

নরকের নিদারুণ দুঃখ - যন্ত্রণা পাপী সহ্য করিতে অসমত হইয়া অতিশয় খেদ করিতে থাকে। ‘অহহ! আমি সারা জীবন স্ত্রী-পুত্রের জন্য কত পাপকৰ্ম্ম করিয়াছি, নিজের জন্য কিছুই করি নাই। এখন তাহারা নির্বিঘ্নে আমার অর্জিত সম্পত্তি ভোগ করিতেছে, আমি নরকে পড়িয়া ভীষণ দুঃখ পাইতেছি, অথচ পণ্ডিতদিগের হিতবাক্য শুনি নাই। আপন লব্ধ ভোগসমূহ পরের জন্য ধ্বংস করিয়া লোভ-দ্বেষ-মোহে চালিত হইয়া প্রাণীহত্যাদি নানা প্রকার পাপকর্মই করিয়াছি। ভোগ-সম্পত্তি বিদ্যমানে সাধু সৎপুরুষদিগকে দান করিতে বা শীলাদি রক্ষা করিতে পারি নাই। এই প্রকারে নরকে অনুশোচনা করে। অপরের কুশল কর্মের ফল দেখিয়া ঈর্ষাপরায়ণ হয় এবং পুনঃ পুনঃ পাপের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এইরূপে ইহাদের পাপ ও আয়ু বর্ধিত হয়।

তত্থ সত্তা মহালুদ্ধা মহাকিব্বিসকারিনো,

অচ্চন্তা পাপকম্মন্ত পচ্চন্তি ন চ মিয্যরে।

জাবেদসমে! কায়ো তেসং নিরযবাসীনং,

তস্স কম্মানং দল্হত্তং ন ভস্মং হোতি মংসিপি।

“মহালোভী, মহাদুষ্কৃতিকারী ও অনন্ত পাপকারিগণ দগ্ধ হইতে থাকে, অথচ মরে না। সেই নরক বাসীদিগের দেহ প্রজ্জ্বলিত অগ্নির ন্যায় প্রদীপ্ত থাকে। পাপকর্ম্মের কঠোরতা হেতু দেহের মাংসও ভস্মীভূত হয় না, প্রাণবায়ূ বহির্গতও হয় না।”

”তংখো পনাহং ভিক্খবে নাঞ্ঞস্স সমণস্স বা ব্রাহ্মণস্স বা সুত্বা বদামি, অপিচ যদেব ঞাতং, সামং দিট্ঠং, সামং বিদিতং, তমেব ’হং বদামি।”

”হে ভিক্ষুগণ, আমি যে তির্য্যক, প্রেত ও নরক দুঃখ বর্ণনা করিতেছি তাহা আমি অন্য শ্রমণ বা ব্রাহ্মণের নিকট শুনিয়া প্রকাশ করছি না। যাহা আমি স্বয়ং জ্ঞাত হইয়াছি, স্বয়ং দেখিয়াছি এবং স্বয়ং বিদিত হইয়াছি, তাহাই আমি প্রকাশ করিতেছে।”

সেয়্যথা’পি ভিক্খবে দ্বে অগারা সন্ধিদ্বারা, তত্থ চক্খু মা পুরিসো মজ্ঝে ঠিতো পস্সেয্য মনুস্সে গেহং পবিসন্তে’পি নিক্খমন্তে’পি অনুসঞ্চরন্তে’পি অনুবিচরন্তে’পি এবমেব খো অহং ভিক্খবে দিব্বেন চক্খ না বিসুদ্ধেন অতিক্কন্ত মনুসকেন সত্তে পস্সামি চবমানে উপ্পজ্জমানে হীনে পণীতে সুবণ্নে দুব্বণ্নে সুগতে দুগ্গতে যথা কম্মুপগে সত্তে পজানামি।

”হে ভিক্ষুগণ, মনে কর, সন্ধি দ্বারযুক্ত দুই গৃহ,- সেই দুই গৃহের মধ্যভাগ যেমন কোন চক্ষুষ্মান পুরুষ দাঁড়াইয়া দেখে, মনুষ্যগণ গৃহে প্রবেশ করিতেছে, পুনঃ গৃহ হইতে বাহির হইতেছে, এক গৃহ হইতে আবার এই গৃহে প্রবেশ করিতেছে, হে ভিক্ষুগণ, তেমনই আমিও সুগতি ও দুর্গতি ভূমির মধ্যভাগে দাঁড়াইয়া মনুয্য - চক্ষুর অগোচর (মনুষ্য দৃষ্টির বাহিরে) বিশুদ্ধ দিব্য চক্ষু দ্বারা প্রাণিগণ দর্শন করিতেছি; কেহ চ্যুত হইতেছে, কেহ উৎপন্ন হইতেছে, তন্মধ্যে কেহ হীনকুলে যাইতেছে, কেহ শ্রেষ্ঠ কুলে যাইতেছে, কেহ সুশ্রী, কেহ বিশ্রী, কেহ সুগতি, কেহ দুর্গতি প্রাপ্ত হইতেছে, যে যেইরূপ কৰ্ম্ম করিয়াছে সে সেইরূপ ফল ভোগ করিতেছে। এইরূপ বিবিধ প্রকার কৰ্ম্মফলভোগী সত্ত্বদিগকে আমি সম্যক্‌রূপে জানি, জানিয়া তোমাদের নিকট তাহা প্রকাশ করিতেছি।”

সূত্র: সদ্ধর্ম্ম দীপিকা, প্রথম পরিচ্ছেদ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !