মানব - জন্ম

 


() মানব - জন্ম

 

কিচ্ছো মনুস্স-পটিলাভোমানব জন্ম দুর্লভ।

যদি কোন দুষ্কৃতির ফলে কাহাকেও মনুষ্যযোনি হইতে স্থলিত হইয়া পশু যোনিতে, প্রেতলোকে কিংবা নরকে পতিত হইতে হয়, তাহা হইলে সে বহুকল্পকোটি কাল এই নিম্নগতিতে ঘুরিতে ঘুরিতে অশেষ দুঃখযন্ত্রণা ভোগ করে। মানবজন্ম দুর্লভ কেন তাহা ভগবান্ উপমা দ্বারা পরিস্ফুট করিয়া বলিয়াছেন,—

—“হে ভিক্ষুগণ, কোন কৃষক একছিদ্র বিশিষ্ট ভগ্ন জোয়াল মহা সমুদ্রে নিক্ষেপ করে, যাহা পূর্বের বায়ুতে পশ্চিমে, পশ্চিমের বায়ুতে পূৰ্ব্বে, উত্তরের বায়ুতে দক্ষিণে এবং দক্ষিণের বায়ুতে উত্তরে চালিত হইতে থাকে। সেই মহা সমুদ্রে এক কাণা কচ্ছপ বাস করে। সেই কচ্ছপ শত বৎসর পর মাত্র একবার জলের উপর ভাসমান হইতে পারে। সে ক্ষেত্রে তোমরা কি মনে কর যে, সেই কাণা কচ্ছপ। ভাসমান একছিদ্রবিশিষ্ট জোয়ালে মস্তক প্রবেশ করাইতে পারিবে?”

—“হ্যাঁ, ভদন্ত সুদীর্ঘকাল অতীত হইলে ইহা অসম্ভব নহে।

—“হে ভিক্ষুগণ, সেই কাণা কচ্ছপ ইতস্ততঃ ভাসমান। কখনও একছিদ্রবিশিষ্ট জোয়ালে যদি কখনো গ্রীবা প্রবেশ করায়, তবে ইহা অতি শীঘ্রই ঘটিয়াছে বলিয়া মনে করিতে হইবে।

আরো পড়ুন>>

—“হে ভিক্ষুগণ, যদি কোন লোক পাপকৰ্ম্ম করিয়া নরকে গমন করে, পুনর্বার মনুষ্যত্ব লাভ করা তাহার পক্ষে দুঃসাধ্য।সংসার চক্রে ঘূর্ণায়মান্ নর-নারিগণের, ভগবদ প্রদত্ত উক্ত উপমার মর্ম একবার নিভৃতে চিন্তা করিবার বিষয়। মহাসমুদ্রে বায়ুতাড়িত ভাসমান একছিদ্রবিশিষ্ট জোয়ালে কাণা কচ্ছপের গ্রীবা প্রবেশ যেমন অনিশ্চিত সুদূরপরাহত, তেমন প্রাণী কায়িক, বাচনিক কিংবা মানসিক দুষ্কর্মের দ্বারা তির্যক্ যোনিতে, প্রেতলোকে কিংবা নরকে গমন করিলে অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত মর্মান্তিক দুঃখ ভোগ করে।

 প্রথম তির্য্য প্রাণীদিগের বিষয় আলোচনা করিব। সিংহ, ব্যাঘ্র, গো, মহিষ, কাক, বক, শুক ইত্যাদি পশুপক্ষী তির্য্যকযোনিসম্ভূত বলিয়া অভিহিত হয়। প্রকার ভেদে ইহারা পদশূন্য, দ্বিপদ, চতুষ্পদ বহুপদ। ইহাদের কাম, আহার মরণ ত্রিবিধ সংজ্ঞা বিদ্যমান। ইহাদের ধৰ্ম্ম-সংজ্ঞা অতি অল্প। কতকগুলি প্রাণী আছে যাহাদের অন্য জীব হত্যা ব্যতীত ক্ষুন্নিবৃত্তিও হয় না।

যে সকল প্রাণীর জীব-রক্তে মুখবিবর নিয়ত রঞ্জিত থাকে তাহারা কোন্ সৎকৰ্ম্ম প্রভাবে দুর্লভ মনুষ্যজন্ম লাভ করিতে পারে? অধিকাংশ গৃহপালিত পশু লাঙ্গল গাড়ী টানা কাজে প্রায় সকল সময় নিযুক্ত ইহাদের শক্তি থাকুক বা নাই থাকুক, লাঙ্গল গাড়ী টানিতেই হয়। যদি অসমর্থ হইয়া ভূপতিত হয়, তবে তাহার পৃষ্ঠে নির্যাতনের সীমা থাকে না; যদি ক্ষুধাতৃষ্ণায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় তথাপি বলিতে পারে না, —আমি ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত হইয়াছি; রোগযন্ত্রণায় মরণাপন্ন হইলেও তাহা প্রকাশ করিয়া বলিতে পারে না।

এইরূপে বহুবিধ মর্মান্তিক কষ্ট ইহাদিগকে সহ্য করিতে হয়। কর্মশক্তি রহিত হইলে ইহারা অনেক স্থলে পশুঘাতকের হাতে গিয়া পড়ে। কাজেই যাহারা অহরহ তাড়নদণ্ডে দণ্ডিত এবং মরণভয়ে ভীত তাহারা কি প্রকারে এই দুর্লভ মানবজন্ম প্রাপ্ত হইতে পারে?

সংসার-চক্রে আবদ্ধ নরনারিগণ, তির্য্য প্রাণীর দুঃখ যন্ত্রণা তোমরা স্বচক্ষে দেখিতেছ, সুতরাং এই দুঃখে যাহাতে তোমাদিগকেও পতিত হইতে না হয়, তজ্জন্য অবহিত হও।মানব, উর্ধ্বগামী হইতে না পারিলেও নিম্নগামী হইও না। অন্ততঃ পক্ষে মনুষ্য জন্ম স্থির রাখিতে যত্নপরায়ণ হও।

সূত্র: সদ্ধর্ন্ম-দীপিকা *প্রথম পরিচ্ছেদ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !