বুদ্ধের সার্বজনীন উপদেশ "চারি ব্রহ্ম বিহার"


ছেলে-মেয়ের প্রতি মাতা-পিতার কর্তব্য

শ্রেষ্ঠ জীবন যাপনের জন্যে চার প্রকার ব্রহ্মবিহার ভাবনা বা চার অপ্রমেয় ভাবনা অত্যাবশ্যক। শুধু ব্যক্তির জন্যে ভাবনা প্রয়োজন তা নহে, সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার পন্থা ব্রহ্মবিহার ভাবনা। ব্যক্তিগত ক্রোধ অথবা জাতিতে জাতিতে ক্রোধ-বিনাশের এটাই একমাত্র উপায়। ব্রহ্মবিহার ভাবনা বা চার অপ্রমেয় ভাবনা উৎকৃষ্ট জীবন যাপনের চাবিকাঠি। চারি ভাবনা হলো-

  • মৈত্রী 
  • করুণা
  • মুদিতা এবং 
  • উপেক্ষা।

মৈত্রী ভাবনাঃ সমগ্র সত্ত্বা বা জীবের হিত-সুখ কামনা হল মৈত্রী ভাবনা। দ্বেষহীন অবস্থাই হল মৈত্রী। সকল প্রাণী শত্রুহীন হোক, নীরোগ হোক এবং সুখে বাস করুক- এটাই হক মৈত্রী ভাবনার মূল তত্ত্ব। প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বন্ধুর আন্তরিক মঙ্গল কামনাই হল মৈত্রী। বুদ্ধের মতে মাতা যেমন তাঁর একমাত্র পুত্রের জীবন রক্ষা করেন তাঁর নিজের জীবনের বিনিময়ে, সেরূপ সর্বজীবের প্রতি অপ্রমেয় দয়া ভাবই হল এই মৈত্রী। হিংসা বা হত্যা চিন্তা এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। মৈত্রী হল জাতি-ধর্ম-বর্ণ তথা মানুষ-প্রাণী নির্বিশেষে সমগ্র জীব-জগতের প্রতি আত্নভাব পোষণ। তাহলে মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে আর কোন হিংসাভাব থাকতে পারে না। পৃথিবী হয়ে উঠবে একটি পরিবার; মানুষেরা হবে একটি পরিবারের সদস্য। পৃথিবীতে তখন নেমে আসবে শান্তি, মহাশান্তি।

করুণা ভাবনাঃ পরের দুঃখ অপনোদনের ইচ্ছার নাম করুণা। দুঃখে যারা অভিভূত, তাদের নিরাশ্রয় ভাব দর্শন করুণা উৎপত্তির কারণ। পরের দুঃখ দূর করার চেষ্টা করুণার স্বভাব। পর-দুঃখের হৃদয় কম্পিত হয় বলে এর অন্য নাম অনুকম্পা। সকল প্রাণী দুঃখ মুক্ত হোক-এটাই হল করুণার মুল মন্ত্র। মাৎসর্য এর প্রতিপক্ষ। করুণার আলম্বন পরের দুঃখ। মাৎসর্য চিত্তকে সষ্কুচিত করে, আমিত্বময় করে। করুণা চিত্তকে প্রসারিত করে, আমিত্বহীন করে।

মুদিতা ভাবনাঃ পরের শ্রী বা সৌন্দর্য, সম্পদ, যশ, লাভ, ঐশ্বর্য ইত্যাদি সৌভাগ্য দর্শনে নিজ চিত্তের আনন্দই মুদিতা। অন্যের সুখ সম্পদ অনুমোদন মুদিতার লক্ষণ। সকল প্রাণী যথালব্দ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত না হোক- এটাই হল মুদিতা ভাবনার মন্ত্র। মুদিতার আলম্বন পরের সম্পদ। ঈর্ষা হল মুদিতার প্রতিপক্ষ।

উপেক্ষা ভাবনাঃ চিত্তের অলীন বা অনুদ্ধত অবস্থা হল উপেক্ষা। লীন উদ্ধত অবস্থার মধ্যবর্তী অবস্থাই উপেক্ষা। লাভ-অলাভ, যশ-অযশ, নিন্দা-প্রশংসা, সুখ-দুঃখ ইত্যাদি অষ্ট লোকধর্মে চিত্তের অকম্পিত ভাবই উপেক্ষা। মনের স্থিরতা বা সমভাবই উপেক্ষা। কর্মের স্বকীয়তা জ্ঞানই চিত্তের উপেক্ষা উৎপাদক। কর্মই মানুষের বন্ধু বা স্বকীয়- এটাই উপেক্ষা ভাবনার মন্ত্র।উপমানুসারে জননীর পক্ষে শিশুপুত্রের যৌবনাবস্থার চিরস্থিতি কামনা মুদিতা। আত্ন-নির্ভরক্ষম উপযুক্ত পুত্রের জন্য নিরুদ্বিগ্নতা- উপেক্ষা।"

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

buttons=(Accept !) days=(20)

আমাদের ওয়েবসাইট আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকিজ ব্যবহার করে। দয়া করে সম্মতি দিন। Learn More
Accept !