গৌতম বুদ্ধের জীবনী: মহামায়ার স্বপ্ন
সেদিন কপিলাবস্তু নগরে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা উৎসব উদযাপনে সকলেই মাতোয়ারা। পাটরাণী মহামায়াদেবী পূর্ণিমার সপ্তাহকাল পূর্বেই ব্রতাদি গ্রহণ করে উৎসব পালন করছেন। সপ্তম দিবসে অর্থাৎ পূর্ণিমার দিন অতিপ্রত্যূষে মহারাণী সুবাসিত জলে স্নান করে ব্রত গ্রহণান্তর সহস্র মুদ্রা ব্যয়ে মহাদানোৎসব সম্পন্ন করলেন। অনন্তর উত্তম আহার্য গ্রহণ করে উপোসথ ব্রতানুশীলনে সারাদিন অতিবাহিত করেন এবং পবিত্র মনে সুসজ্জিতা প্রকোষ্ঠে সোনার পালঙ্কে ঘুমিয়ে পড়লেন।
শেষ রাত্রে মহারাণী এক বিস্ময়জনক স্বপ্ন দেখলেন। চারদিকপাল দেবতা এসে মহারাণীকে পালঙ্ক সহ হিমালয়ের এক মনোহর পর্বতোপরি রিবাট শাল বৃক্ষের নীচে রেখে এক পার্শ্বে দাঁড়িয়ে রইলেন। তখন দেবগন এসে তাঁকে মানস সরোবরে (অনোমতপ্ত হ্রদে) স্নান করিয়ে স্বর্গীয় সুবাস ও বস্ত্রাদিতে বিভূষিতা করলেন। অনতিদূরে ছিল এক রৌপ্য মণ্ডিত পর্বত ও তদুপরি ছিল এক সুবর্ণ অট্টালিকা, সে অট্টালিকায় দেবগণ এক স্বর্গীয় শয্যা পেতে পূর্বদিকে শিয়র রেখে তাঁকে শোয়ায়ে রাখলেন ।
আরো পড়ুন>>
- গৌতম বুদ্ধের জীবনী: বোধিসত্ত্বের জন্ম।
অতঃপর নিকটবর্তী সূবর্ণ পর্বত থেকে এক শ্বেতহস্তী এসে উত্তর পার্শ্বের রৌপ্য মণ্ডিত পর্বত থেকে শুভ্রশুণ্ডে শ্বেত পদ্ম ধারণ করে করতে করতে সূবর্ণ অট্টালিকায় প্রবেশ পূর্বক মহারাণীকে ডানদিক বৃংহতি রব থেকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে উদরের দক্ষিণ পার্শ্ব বিদীর্ণ করতঃ রাণীর জঠরে প্রবেশ করলেন। মহারাণীর ঘুম ভেঙ্গে গেল। রাণীর দেহ মন এক অপূর্ব আনন্দে ভরে উঠল, কেন যে তা তিনি বুঝতে পারলেন না ।
নিশাবসানে রাণী রাজাকে স্বপ্ন বৃত্তান্ত জ্ঞাত করলেন। রাজা মহাব্যতিব্যস্ত হয়ে চৌষট্টি জন প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী ব্রাহ্মণ আমন্ত্রণ করে তাঁদেরকে অন্ন-বস্ত্র প্রভৃতি দান দক্ষিণা দিয়ে পরিতৃপ্ত করলেন । অতঃপর মহারাণীর স্বপ্ন বৃত্তান্ত গোচরীভূত করে স্বপ্নের অর্থ কি জানতে চাইলেন। ব্রাহ্মণগণ অনেক ভেবে চিন্তে বললেন -“মহারাজ স্বপ্নের ফল অতীব শুভ। রাণী মা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। আপনার এক মহাজ্ঞানী পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবেন। এ পুত্র যদি সংসার ত্যাগ করে সন্ন্যাসী হন, তাহলে জগৎ পূজ্য বুদ্ধ হবেন এবং নবধর্ম প্রচার করে মানুষকে অজ্ঞানান্ধকার থেকে মুক্ত করবেন। আর যদি সংসারী হয়ে রাজত্ব করেন তা হলে চক্রবর্তী রাজা হবেন। তবে সে আশা কম।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।