গৌতম বুদ্ধের জীবনী: বোধিসত্ত্বের জন্ম
ক্রমে দিন যায়। মহারাজ রাণীকে সযত্নে ও সুন্দরভাবে গর্ভ রক্ষার জন্য সাবধান করে দিলেন এবং নিজেও বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখলেন। শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা সমাগত। রাণীরও মাতৃত্বের সময় নিকটবর্তী। মহারাণী রাজাকে সম্বোধন করে বললেন-“মহারাজ আমি স্বর্গাদপি গরিয়সী আপন জন্মভূমি পিত্রালয়ে যেতে ইচ্ছা করি।” রাজা আনন্দিত কপিলবাস্তু হতে মনে এ প্রস্তাব অনুমোদন করে আদেশ করলেন যে, দেবদহ নগর পর্যন্ত রাস্তা সমতল করে উহার দুপ্রান্তে কদলীপত্রপূর্ণ ঘট ও ধ্বজা পতাকা দিয়ে রাস্তা সুসজ্জিত করে দাও। অতঃপর রাণীকে সুবর্ণ রথে চড়িয়ে সহস্রাধিক দাস-দাসী ও সভাসদগণ সহ তাঁর পিত্রালয়ে যেতে সুব্যবস্থা করে দিলেন।
মহারাণী ধীরে ধীরে পিত্রালয়ে গমন করলেন। যখন কপিলবাস্তু ও দেবদহ নগরের মধ্যবর্তী স্থান লুম্বিনীকাননে পৌঁছলেন, তখন লুম্বিনীকাননের অপূর্ব শোভা দেখে রাণী একেবারে বিমুগ্ধ। রাণীর প্রমোদ উদ্যান দেখবার জন্য প্রবল বাসনা জাগল । অতঃপর সভাসদগণ তাঁকে নিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করলেন। মহারাণী উদ্যানের মনো-মুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখে বলে উঠলেন- “অহো ! কী সুন্দর বনভূমি, স্বর্গীয় সৌরভে পুষ্পের ঘ্রাণে সুষমাহিত। ইহা মর্তভূমি বলে মনে হয় না, মনে হয় যেন দেবতাদের আবাস স্থান বা ভূস্বর্গ।” তৎপর রাণী একটু জিরিয়ে নেবার জন্য শাল বৃক্ষের ছায়াতলে একটি শালশাখা ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আরো পড়ুন>>
তখন হঠাৎ তাঁর প্রসব বেদনা অনুভূত হল। সঙ্গে সঙ্গে সখীগণ রাণীর চতুর্দিকে পর্দা টেনে দিল । অমনি দণ্ডায়মান অবস্থায় শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে উদীয়মান সূর্য্যের ন্যায় বোধিসত্ত্ব ধরাধামে অবতীর্ণ হলেন। আজ হতে ২৬১৫বৎসর পূর্বে (খৃষ্টপূর্ব ৫৬৩ অব্দে)। বোধিসত্ত্ব ভূমিষ্ট হয়েই উত্তরদিকে সপ্তপদ অগ্রসর হলেন। তাঁর প্রতি পদক্ষেপে এক একটি করে সাতটি পদ্মফুল প্রস্ফূটিত এবং উর্দ্ধদিক হতে পুষ্পবৃষ্টি বর্ষিত হল। তিনি অশুচি ক্লেদ-রক্তাদি দ্বারা লিপ্ত না হয়ে মনি-র -রত্নের ন্যায় মাতৃকুক্ষি হতে নিষ্ক্রান্ত হলেন। তথাপি সে সময় আকাশ হতে বারিধারা বর্ষিত হয়ে বোধিসত্ত্ব ও মাতৃদেহকে বিধৌত করিয়ে দিল। যথাসময়ে মহারাণী বোধি-সত্ত্বকে বক্ষে ধারণ করে রাজধানীতে প্রত্যাবর্তন করলেন।
বোধিসত্ত্বের এই জন্ম পূর্ব ৫৫০ জন্মের পূঞ্জীভূত সুকৃতির ফল বিদ্যমান। জাতক গ্রন্থে ইহা বর্ণিত আছে। তখন তিনি দান, শীল, নৈষ্ক্রম্য, প্রজ্ঞা, বীর্ষ, ক্ষান্তি, সত্য, অধিষ্ঠান, মৈত্রী, ও উপেক্ষা এই দশবিধ পারমী পূর্ণ করে অন্তিমজন্ম গ্রহণ করলেন। অপুত্রক মহারাজের পুত্র জন্মের কথা শুনে কপিলবাস্তু ও দেবদহে আনন্দের সারা পড়ে গেল । তিনি রাজ্যময় ঘোষণা ও আদেশ করলেন যে, সপ্তাহকালব্যাপী রাজকোষ উন্মুক্ত করা হোক। আর্ত,দীন-দরিদ্রের জন্য দানছত্র খোলা হোক । নগর ও রাজপ্রাসাদ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হোক। এভাবে মহামানবের জন্মোৎসব নির্দেশে চতুর্দিকে বিমোহিত হল।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।