গৌতম বুদ্ধের জীবনী: ভবিষ্যৎ বাণী
অসিত ঋষির আগমণ:
রাজ কুমারের খবর
শুনে তাঁকে দেখবার জন্য রাজা-প্রজা দলে দলে রাজবাড়ীতে আসতে লাগল। হিমালয়ের চারুঅঙ্ক
আশ্রমবাসী অসিত ঋষি ধ্যান বলে শাক্যরাজ ভবনে উপনীত হয়ে রাজাকে বললেন- “মহারাজ! আপনার
নবজাত শিশুকে দেখতে এসেছি। আশা করি আমার মনোবাসনা পূর্ণ করবেন।”
ঋষির বাক্য শ্রবণ
করে, সসম্ভ্রমে স্বর্ণাসনে বসতে ঋষিকে করজোড় প্রার্থনা করলেন এবং বন্দনান্তে নবজাত
শিশুকে নিয়ে আসতে অন্তঃপুরে চলে গেলেন।
অনন্তর শিশুকে
এনে ঋষির সম্মুখে স্বর্ণাসনে বসিয়ে রাখলেন। স্বর্ণ পাত্রে সোনার পুষ্প রাখলে যেরূপ
শোভিত হয়, কোমল শিশুও সেরূপ পরিশোভিত হলেন।
ঋষি কিছুক্ষণ শিশুকে
অনিমেষ নেত্রে দেখলেন এবং তাঁকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে ধ্যানস্থ হলেন। তখন ঋষির অশ্রুধারা
প্রবাহিত হল।
ঋষির এই ভাবান্তর
দেখে শুদ্ধোধন ভয়বিহবল অন্তরে করজোরে নত জানু হয়ে জিজ্ঞেস করলেন-“একি ভাব ঋষি প্রবর!
কেন এ রোদন? কেন এ দীর্ঘশ্বাস? প্রভো! কি দেখলেন, শিশুর কোন অমঙ্গল ? বলুন দয়া করে।
ঋষি অসিতের ভবিষ্যৎ বাণী:
তৎপর ঋষিপ্রবর
অশ্রুধারা মুছে উত্তর করলেন- ‘মহারাজ! যিনি জগতের মঙ্গল নিদান, তাঁর অমঙ্গল কি করে
সম্ভব হয়?' আমি শিশুর জন্য কাঁদছি না, কাঁদছি আমার নিজের জন্য। যেহেতু এই শিশু একদিন
দেব-মানবের হিতের জন্য জগতে মহান ধর্মসাধন করে বুদ্ধ রূপে অবতীর্ণ হবেন এবং জন্ম জরা,
ব্যাধি ও মৃত্যু অবসানের পথ সুগম করে নির্বাণ ধর্ম প্রচার করবেন।
আমার কাঁদবার কারণ
অন্য কিছু নয়, আমি বৃদ্ধ আমার জীবনের দীপশিখা অচিরেই নিভে যাবে। বুদ্ধরূপ দেখতে পাবনা,
-তজ্জন্য আমি কাঁদছি। হে মহারাজ! এশিশুর দেহে বত্রিশ প্রকার মহাপুরুষ লক্ষণ বিদ্যামন।
এ সমস্ত নৃপতির লক্ষণ নয়, রাজছত্র তাঁর নিকট তুচ্ছ।
তাঁর ধর্মের ছায়া
তলে অর্ধজগৎ মহাশান্তি লাভ করবেন। হে মহারাজ! ইহা তোমার পূর্ব পূর্ব কৃত মহাপুণ্যের
ফল। এতদিনে তোমার পূর্বকৃত পূণ্য কর্মের ফলে মনোরথ সিদ্ধ হয়েছে। সুতরাং এ শিশুর নাম
রাখবে- সিদ্ধার্থ। মহাপ্রজাপতী গৌতমী এ শিশু প্রতিপালন করবেন, তজ্জন্য শিশুর নাম রাখবে-গৌতম
এবং শাক্য কুলে জন্ম হেতু নাম রাখবে- শাক্য সিংহ, যখন মহাতপস্যায় জ্ঞানের চরম সীমায়
উপনীত হবেন, তখন তাঁর নাম হবে -বুদ্ধ।
অতঃপর ঋষি নিজের
আশ্রমে ফিরে গেলেন। শিশুর নামকরণ দিবসে মহাসমারোহপূর্ণ উৎসবে আট জন দৈবজ্ঞকে আহবান
করলেন। বৈবজ্ঞেরা এসে শিশুকে একান্ত দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করে সাতজনে বললেন-“এশিশু গৃহাশ্রমে
থাকলে চক্রবর্তী রাজা হবেন এবং সন্ন্যাসাশ্রমে চলে গেলে সর্বজ্ঞতা লাভ করে সম্যক সম্বুদ্ধ
হবেন।
অন্যান্ন দৈবজ্ঞগণের ভবিষ্যৎ বাণী:
“অপর দৈবজ্ঞ বললেন -“যে দিন জরাজীর্ণ, ব্যাধিক্লিষ্ট,
মৃত এবং সন্ন্যাসী দেখবেন, সেদিন তাঁকে আর সংসারে রাখতে পারবেন না। তিনি সংসার ত্যাগ
করে চলে যাবেন।” এসমস্ত ভবিষ্যৎ বাণী শুনে নৃপতির চক্ষু অশ্রুসিক্ত
হল। অতঃপর রাজা ঘোষণা করলেন যে; যাতে পূর্বোক্ত চারটি দৃশ্য কুমার দেখতে না পান। স্নেহ-
বিমুগ্ধ নরপতি চতুর্দিকে সতর্ক প্রহরী নিযুক্ত করে দিলেন।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।