মহাতীর্থস্থান লুম্বিনী - Moha Tirthastan Lumbini
চার মহাতীর্থের মধ্যে লুম্বিনী প্রথম মহাতীর্থ। লুম্বিনী গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান। নেপালের দক্ষিণ সীমান্তের অন্তর্গত বুটন জেলার ভগবানপুর তহশিলের উত্তরে ‘রুম্মিনদেই’ নামক স্থানে অবস্থিত । শুদ্ধোদনের স্ত্রী রানি মহামায়া শ্বশুর বাড়ি থেকে পিত্রালয়ে যাবার পথে লুম্বিনী কাননে সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম হয়। রাজপুত্রের জন্মের কারণে লুম্বিনীর পরিচিতি বৃদ্ধি পায় এবং এটি ‘মহাতীর্থ হিসেবে বিখ্যাত হয়। বর্তমানে লুম্বিনীতে আগের মতো বাগান নেই।
সম্রাট অশোক ও লুম্বিনী
বুদ্ধজীবনের
অনেক স্মৃতি রয়েছে। দেশ-বিদেশের বৌদ্ধরা স্থানটি দর্শন করে পুণ্য অর্জন করে। লুম্বিনী
মন্দিরের পাশেই আছে একটি অশোকস্তম্ভ। ছোট ঢিবির উপর এই মন্দির। সিঁড়ি বেয়ে সেখানে
উঠতে হয়। পুরণো মন্দিরের ভিত্তির উপর সেটি নেপাল সরকার আবার নির্মাণ করেন। এর উত্তরদিকে
দরজা আছে।
লুম্বিনীর বর্ণনা
ভিতরে
সিদ্ধার্থের জন্মচিত্র আকাঁ একটি অখণ্ড প্রস্তর ফলক আছে। প্রস্তর ফলকটি সেই প্রাচীনকাল
থেকে এখনও টিকে আছে। সিদ্ধার্থের জননী মহামায়াদেবী ডান হাতে শালগাছের শাখা ধরে আছেন
এমন চিত্র ফলকও আছে। পাশে অন্যটি মহিলা গৌতমীর মূর্তি বলে মনে করা হয়। আর এক পাশে
কয়েকটি মূর্তি করজোরে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে ব্রহ্মা, দেবতা প্রভৃতি মনে করা হয়।
সামনের
দিকে একটি পদ্মফুলের উপর নবজাত সিদ্ধার্থ দাঁড়িয়ে আছেন। এ সমস্ত দৃশ্য বা চিত্রফলক
দেখতে অপূর্ব লাগে। লুম্বিনী মন্দিরের দক্ষিণ পাশে যে পুষ্করিণীটি ক্ষেখা যায়, সেটি
হচ্ছে লুম্বিনী পুষ্করিনী। কথিত আছে, সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্মের পরেই লুম্বিনী উপবনে
নাগরাজ নন্দ উপানন্দ কর্তৃক জলধারায় যে স্থানে নবজাত শিশু সিদ্ধার্থের স্নানকৃত্য
সম্পন্ন করেছিলেন, সেটি পরে একটি কূপে পরিণত হয়। তার দক্ষিণে আরও একটি স্থূপ ছিল যে
স্থানে দেবরাজ ইন্দ্র নবজাত শিশু সিদ্ধার্থকে স্বীয় ক্রোড়ে তুলে নিয়েছিলেন এবং দিব্য
বস্ত্র দ্বারা অলংকৃত করেছিলেন। এরই পাশে ছিল আরো চারটি স্থূপ, যেখানে চারজন লোকপাল
দেবতা সিদ্ধার্থ গৌতমকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন।
স্তম্ভে
উকীর্ণ লিপি পাঠে জানা যায়, এখানেই সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্ম হয় এবং মহারাজ অশোক এ
স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন তাঁর রাজত্বের বিংশতিতম বর্ষে। এখানকার প্রধান দর্শনীয় বস্তু
হল অশোক স্তম্ভ ও রুম্মিনদেই মন্দির। সম্রাট অশোক তাঁর রাজ্য অভিষেকের ২০ বছরে দ্বিতীয়বার
লুম্বিনী আগমন করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ২৫০ অব্দে তিনি সিদ্ধার্থের জন্মস্থানকে চিরস্মরণীয় ও চিহ্নিত করার জন্য একটি স্তম্ভ স্থাপন করেন। তার নামই অশোক স্তম্ভ। এতে সিদ্ধার্থ গৌতমের জন্মস্থান চিরকালের জন্য চিহ্নিত হয়ে যায়। মন্দিরের প্রাঙ্গন থেকে অশোকস্তম্ভের দিকে যাওয়ার সিঁড়ি আছে। তার পূর্বদিকে যাওয়ার সিড়িও রয়েছে। তারই পাশে একটি বোধিবৃক্ষ আছে। প্রতিবছর তীর্থযাত্রার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে দলবেধে তীর্থযাত্রী যায় এবং লুম্বিনীর এ মন্দিরে পূজা করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মহাতীর্থস্থান লুম্বিনী - Moha Tirthastan Lumbini
মায়া দেবী মন্দির
নেপালের
লুম্বিনি গ্রামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরের
নাম মায়া দেবী মন্দির। এই স্থানে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়েছিলো। সেই কারণে তার মায়ের নামে
মন্দিরটির নামকরণ করা হয়। বুদ্ধের জন্মস্থান হিসেবে মন্দিরটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
লুম্বিনি গ্রামের মূল আকর্ষণ এটি। মন্দিরের পাশে রয়েছে একটি পুকুর যেখানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা
নিয়মিত গোসল করেন। পাথরের তৈরি মূর্তি দেখার জন্য ও ভক্তি করার জন্য ভারত, শ্রীলঙ্কা,
বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে বৌদ্ধরা ছুটে আসেন।
অশোকস্তম্ভ
ঐতিহাসিক
ও প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করেন সম্রাট অশোক খ্রিস্টপূর্ব ২৪৯ অব্দে স্তম্ভটি নির্মাণ
করেন। লুম্বিনি গ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এটি। ১৮৯৬ সালে এর সন্ধান পাওয়ার
পর পর্যটকদের কাছে এটি অত্যন্ত পছন্দের স্থাপনা হিসেবে সমাদৃত হয়। এতে চারটি স্তুপ
ও ঘোড়ার আদলে তৈরি একটি স্তম্ভ রয়েছে। নেপালের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে একটি অশোক
স্তম্ভ।
মিয়ানমারস্বর্ণমন্দির
মন্দিরটি
বার্মিজ স্থাপত্যে নির্মিত। প্রার্থনার জন্য রয়েছে তিনটি কক্ষ। হলরুমের মতো কক্ষ। স্থানীয়ভাবে
একে লোকমনি পুলা প্যাগোডা ও শ্বেদাগন প্যাগোডা হিসেবে অভিহিত করা হয়। ২৬ শতাধিক বছর
আগে মন্দিরটি নির্মিত হয়। কথিত আছে, টাপুসা ও ভালিকা নামে দুই ভাই গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায়
তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন এবং বুদ্ধের চুল দিয়ে মন্দিরটির আটটি স্তুপ তৈরি করেন। বর্তমানে
বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে মন্দিরটি পবিত্র স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।
বিশ্বশান্তিপ্যাগোডা
১০
লাখ ডলার ব্যয়ে জাপান বিশ্বশান্তি প্যাগোডা নির্মাণ করেছে। প্যাগোডাটিতে বুদ্ধমূর্তি
রয়েছে। নেপালের কাসকি জেলায় এটি অবস্থিত। বর্তমানে জেলাটি পোখারার অন্তর্গত। ১৯৪৭ সালে
এর নির্মাণ করা হয়। বৌদ্ধদের কাছে এটি নানা দিক থেকে সমৃদ্ধির প্রতীক। বুদ্ধমূর্তিটি
পোখারা উপত্যকার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পোখারার ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র মহেন্দ্রপুল
থেকে এটি ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
চীনমন্দির
চীনা
মন্দিরকে একাধারে প্যাগোডা, প্রার্থনা কক্ষ ও মেডিটেশন সেল হিসেবে অভিহিত করা হয়। এখানে
কেবল বৌদ্ধধর্মের অনুসারীরাই আসেন না। তাও ধর্মের অনুসারী ও চীনা সংস্কৃতিবান মানুষও
এখানে ভ্রমণ করেন। ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া, জার্মানি, শ্রীলঙ্কা ও অন্যান্য
দেশ যৌথভাবে মন্দিরটি নির্মাণ করে।
লুম্বিনি মিউজিয়াম
বিশ্বের
মানুষের জন্য গৌতম বুদ্ধের ছবি ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র লুম্বিনি মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।
বুদ্ধের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত মিউজিয়ামটিতে হাজারো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ও হিন্দু সন্ন্যাসী
ভ্রমণ করেন। নেপালের প্রণিধানযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা এটি। বিশেষ করে মিউজিয়ামটির জন্য
লুম্বিনি গ্রাম দর্শনার্থীদের কাছে অনেক পছন্দের।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।