তৃতীয় অধ্যায়: ভয় এবং ব্যথা
#ব্যথাকে
যেতে দেওয়া- ৪৬
আগের গল্পটাতে, দাঁতের ব্যথার যে ব্যথার
ভয় সেই ভয়টাকেই আমি যেতে দিয়েছিলাম। আমি ব্যথাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিলাম। এটিকে
জড়িয়ে ধরে তাকে তার মতোই থাকতে দিয়েছিলাম। এজন্যই এটি চলে গিয়েছিল। আমার বন্ধুদের অনেকেই
প্রচন্ড ব্যথার সময়ে এই পদ্ধতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন কাজে আসে নি।
তারা আমার কাছে এসে অভিযোগ করে বলেছে যে আমার দাঁতের ব্যথা নাকি তাদের ব্যথার তুলনায়
কিছু না। সেটা সত্যি নয়। ব্যথা ব্যক্তিগত এবং সেটা মাপা যায় না।
আমি তাদেরকে নিচের তিন শিষ্যের গল্প দিয়ে
ব্যাখ্যা করেছিলাম কেন যেতে দেওয়াটা তাদের বেলায় কাজ করেনি।
প্রথম শিষ্য প্রচন্ড ব্যথায় কাতর হয়ে
যেতে দেওয়ার চেষ্টা করলো।
‘যেতে দাও,’ তারা ভদ্রভাবে বলে এবং অপেক্ষা
করে।
‘যেতে দাও!’ যখন ব্যথার কোন পরিবর্তন হচ্ছে
না, তখন তারা আবার বলে।
‘শুধু যেতে দাও!’
‘ওহ, যেতে দাও না!’
‘আমি বলছি, যেতে! দাও!’
‘যেতে দাও!’
মজার মনে হতে পারে, কিন্তু আমরা বেশির
ভাগ সময় এমনই করে থাকি। আমরা ভুল জিনিসকে যেতে দিই। আমাদের যেতে দেওয়া উচিত, যে ‘যেতে
দাও’ বলছে তাকেই। আমাদের যেতে দেওয়া উচিত আমাদের মধ্যকার সেই
খেপাটে নিয়ন্ত্রণকারীকে। আমরা সবাই জানি কে সেই খেপাটে নিয়ন্ত্রণকারী। যেতে দেওয়া মানে
হচ্ছে ‘কোন নিয়ন্ত্রণকারী নেই’।
দ্বিতীয় শিষ্য, ভয়ানক ব্যথায় এই উপদেশ
স্মরণ করে নিয়ন্ত্রণকারীকে যেতে দিল। তারা ব্যথা সহ্য করেও বসে রইল, ধরে নিল যে তারা
যেতে দিচ্ছে। দশ মিনিট পরে সেই একই ব্যথা। তাই তারা অভিযোগ করে যে যেতে দেওয়াতে কোন
কাজ হয় না। আমি তাদেরকে বলি যে যেতে দেওয়াটা কোন ব্যথার কবল থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি
নয়, বরং ব্যথা থেকে স্বাধীন হওয়ার পদ্ধতি। দ্বিতীয় শিষ্যটা ব্যথার সাথে একটা চুক্তি
করার চেষ্টা করেছিল: ‘আমি দশ মিনিট ধরে যেতে দেব আর হে ব্যথা, তুমি চলে যাবে, বুঝেছ?’
এটা ব্যথাকে যেতে দেওয়া নয়, ব্যথার কবল
থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা।
তৃতীয় শিষ্য, ভয়ানক ব্যথায় জর্জরিত হয়ে
ব্যথাকে এরূপ বলে: ‘হে ব্যথা, আমার হৃদয়ের দরজা তোমার জন্য খোলা, তুমি আমাকে যা কিছুই
করো না কেন। এসো, ভেতরে এসো।’
তৃতীয় শিষ্যটি ব্যথাকে যতক্ষণ ইচ্ছে ততক্ষণ
থাকার অনুমতি দিয়েছিল, এমনকি সারা জীবন হলে সারা জীবন, আরো বেশি হয় হোক। তারা ব্যথাকে
স্বাধীনতা দিয়েছিল। তারা এটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা ত্যাগ করেছিল, অর্থাৎ যেতে দিয়েছিল।
ব্যথা থাকল কি গেল, সেটা এখন তাদের কাছে একই জিনিস। কেবল তখনই ব্যথা চলে যায়।
#যেভাবে
দাঁতের ব্যথার উর্ধ্বে যাওয়া যায়- ৪৭
আমাদের ভিক্ষুসংঘের একজনের দাঁত খুব খারাপ
ছিল। তার অনেকগুলো দাঁত তুলে ফেলার প্রয়োজন হয়েছিল কিন্তু এনেসথেশিয়া দিতে দেবে না
সে কিছুতেই। অবশেষে অস্ট্রেলিয়ার পার্থ শহরে একজন ডেন্টাল সার্জন খুঁজে পাওয়া গেল যে
এনেসথেশিয়া ছাড়াই তার দাঁতগুলো তুলে দেবে। সে কয়েকবার ঐ ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল দাঁত
তুলতে, কোনবারই সমস্যা হয় নি।
এনেসথেশিয়া ছাড়া দাঁত তুলতে দেওয়াটা বেশ
সাহসের বটে, কিন্তু আরেক ব্যক্তি ছিল এর থেকে এক ডিগ্রি উপরে। সে নিজেই নিজের দাঁত
তুলে ফেলেছিল কোন এনেসথেশিয়া ছাড়া।
আমরা তাকে দেখেছিলাম আমাদের বিহারের যন্ত্রপাতির
ঘরের বাইরে, প্লায়ার্সে তখন ধরা আছে তার রক্তমাখা দাঁত। কোন সমস্যাই হয় নি। সে প্লায়ার্সটা
ধুয়ে মুছে আবার যন্ত্রপাতির ঘরে রেখে দিয়েছিল।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সে কী করে
এমন জিনিস করতে পারল। সে যা বলল, তা থেকেই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় কেন ভয় ব্যথার একটা প্রধান
উপকরণ হিসেবে থাকে। সে বললো, ‘যখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, দাঁতটা নিজেই তুলবো, কেননা
ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার অনেক ঝক্কি ঝামেলা, সেই মুহুর্তে কোন ব্যথা লাগে নি। যখন আমি
প্লায়ার্সটা হাতে তুলে নিলাম, তখনো ব্যথা লাগে নি। যখন আমি প্লায়ার্স দিয়ে দাঁতটা ধরলাম
শক্ত করে, তখনো ব্যথা লাগলো না। যখন আমি প্লায়ার্সে মোচড় দিলাম এবং টান দিলাম, তখন
ব্যথা লাগলো, কিন্তু সেটা কয়েক সেকেন্ড মাত্র। যখন দাঁতটা বের করলাম, সেটা আর মোটেও
এত ব্যথা করলো না। পাঁচ সেকেন্ডের ব্যথা, এই আর কি!’
প্রিয় পাঠক, এই সত্যি ঘটনা পড়ে হয়তো ভয়ে
মুখ বিকৃত করে ফেলেছেন। সে যতটা না ব্যথা পেয়েছে, আপনি সম্ভবত তার থেকেও বেশি ব্যথা
অনুভব করেছেন। যদি এমন কাজে আপনি চেষ্টা করতেন, তাহলে ভয়ানক ব্যথা লাগতো। হয়তো যন্ত্রপাতির
ঘরে গিয়ে প্লায়ার্স হাতে নেওয়ার আগেই আপনি ব্যথায় কাতর হয়ে পড়তেন। আশংকা-ভয়-ব্যথার
প্রধান উপাদান।
-----------চলমান
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।