মানুষমারা যাওয়ার পর বাড়িতে অস্তিত্ত্ব পাওয়ার কি কারণ
মানুষ মারা যাওয়ার পর বাড়িতে তার অস্তিত্ত্ব পাওয়ার অনেক ঘটনা শুনে থাকবেন। আসলেই কি তার আত্মা ৭-দিন অপেক্ষা করে? বৌদ্ধধর্মে আত্মার কোন স্থান নাই, বুদ্ধ বলেছেন ”অনিচ্চ দুক্খ অনাত্মা”
বুদ্ধের
সময়ে 'তিস্স' নামক এক ভিক্ষু ছিল। ভিক্ষু তার বোন প্রদত্ত চীবরকে আস্রবগ্রস্ত হয়ে মারা
যাবার পর চীবরে ছারপোকা হয়ে জন্ম নিয়েছিলেন।
মারা
যাওয়ার পর বুদ্ধ একদিন সশিষ্য তিস্স ভিক্ষুর কুটিরে গেলেন এবং অন্য ভিক্ষুরা তার ব্যবহৃত
জিনিস গুলোকে গুছিয়ে রাখছিলেন। এমন সময় ঐ ছারপোকা চীবরে এদিক ওদিক ঘুরাঘুরি করে, ”আমার
চীবর ধরবে না, আমার চীবর নিও না” বলে চেঁচামিচি করতে লাগলো।
এ
কথাগুলো বুদ্ধ শুনতে পেয়ে ভিক্ষুদের উদ্দেশ্যে বললেন, ”ভিক্ষুগণ ঐ চীবরকে এখন ধরো না।
৭-দিন পরে ধরবে। ছারপোকার আয়ু ৭-দিন মাত্র। ৭ দিন পর ছারপোকা চলে যাবে, কখন তোমরা এই
চীবর নিতে পারো। ৭-দিনের আগে ঐ চীবর ভিক্ষরা ভাগ করে নিলে ঐ পোকা সংঘের প্রতি অপরাধ
করবে। অপরাধ জনিত কারণে সে নিরয়ে পতিত হবে। বুদ্ধ কারণটিকে আগাম জ্ঞাত হয়ে ৭-দিন পরে
ঐ চীবরকে ধরবে বলেছিলেন।
এই
ঘটনাটিকে অতিরঞ্জিত করে আজকাল সমাজে ধারনা হয়েগেছে যে, মানুষ মারা যাওয়ার পর ৭ পর্যন্ত
তার আত্মা বাড়ির আশেপাশে ঘোরতে থাকে। ৭ দিন পর মৃত ব্যাক্তির আত্মা চলে যায় এবং অন্য
কোথাও জন্ম গ্রহণ করে। মরণের পর কোন এক জন্মগ্রহণের আগ পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে সে আত্মা
হয়ে থাকে বলে ধারনা করে।
বৌদ্ধধর্ম
মতে এটি একটি মিথ্যা ধারনাটা। মরণের পর মধ্যবর্তী সময়ে আত্মা হয়ে থাকে এ মিথ্যা ধারনাটা
শাশ্বতদৃষ্টি। মরণের পর আত্মা বলতে কিছুই নেই। নির্বাণ প্রাপ্ত না হলে নিজের কর্মানুসারে
উপযুক্ত জন্মে সেকেন্ডক্ষণ অপেক্ষা না করে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করে।
যদি
কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর কেউ তার আনাগোনা উপলব্ধি করলে বুঝতে হবে, মৃত ব্যক্তি প্রেতকুলে
উৎপন্ন হয়েছে, তা মধ্যবর্তী সময়ে অপেক্ষা করা আত্মা নহে।
মরণের
পরপরই চ্যুতচিত্ত বিলয় হয়ে কর্মের হেতুতে আরেক নতুন জন্মে প্রতিসন্ধি বিজ্ঞাণ উৎপন্ন
হয়। পূর্বচিত্ত চ্যুতির পরপরই একেবারেই বিলয় হয়ে যায়।
কাজেই
মরণের পর ৭-দিন বাড়িতে বা আশেপাশে ঘুরাঘুরি করে থাকে এ ধারনাটা সম্পূর্ণ পিটক সম্মত
যুক্তি সংগত নয়। এ ধারনা গ্রহণকারীরা প্রকৃত বৌদ্ধ নয়।
অঞ্চল
ভেদে মৃত সৎকারের আলাদা সংস্কার লক্ষণীয়। কোন কোন অঞ্চলে, শ্মশান গিয়ে আত্মাকে ডাকা
হয়, মৃতব্যক্তিকে শ্মশানে নিয়ে যাবার আগে ভাত খাইয়ে দেওয়া হয়। শ্মশান যাত্রাকালে সারা
পথে চাল ছিটানা হয়।
কোন
কোন অঞ্চলে বাঁশ চোঙায় চাউল ভরিয়ে মৃতদেহকে শুনিয়ে দেওয়া হয়, দাহের পরদিন শব পোড়াস্থানে
ছাইস্তূপে পায়ের ছাপ দেখ হয়। অনেক অঞ্চলে, ৭-দিন পূর্ণদিনে বাড়ির সিঁড়ি নিচে চাউল ছিটানো
হয়, ময়দা বা চালের গুড়িতে পায়ের ছাপ রেখে গেছে কিনা দেখে নেওয়া হয়। এসব অদ্ভুত নিয়ম
কে কখন কোথায় প্রচলণ করেছিল তার কোন হদিস ত্রিপিটকে নাই।
বলা
হয়ে থাকে যে, মৃত ব্যাক্তির বাড়িতে মারা যাওয়ার পর প্রথম রাত অবস্থান করলে পরবর্তী
৭ দিন অবস্থান করা বাঞ্চনীয়। গ্রামের বাহিরে কেউ মারা গেলে মৃতদেহকে গ্রামে আনতে না
দেওয়া। এসমস্ত কাজগুলো পঞ্চশীল ভঙ্গের চেয়ে মারাত্মক নাকি। এগুলোকে নিয়ত মিথ্যাদৃষ্টি।
মনের
ধারনা ভুল হলে ব্যবহারিক আচরণ ভুল হয়। আচরণ ভুল হলে দৃষ্টিভঙ্গি (মিথ্যাদৃষ্টি) ভুল
হয়। দৃষ্টিভঙ্গি ভুল হলে ধর্মবিশ্বাস ভুল হয়/অন্ধবিশ্বাস হয়। অন্ধবিশ্বাস/ধর্মান্ধ
হয়ে গেলে অপায়ে যাওয়া আর বাঁধা থাকে না সরাসরি।
থেরবাদ
বৌদ্ধদের নৈর্বানিক পরম সুখকর সত্যধর্ম থাকা সত্ত্বেও যদি মিথ্যাধর্মকে গ্রহণ করে আর
এ ধর্ম তিরোধান হয়ে গেলে সম্যকদৃষ্টি হবে কখন?
সত্য-মিথ্যা
বিচার বিশ্লেষণ আপনার আমার সবার অধিকার। মিথ্যাকে ত্যাগ করে সত্যকে গ্রহণ করে দুঃখমুক্তি
লাভ আপনার নিজস্ব ব্যাপার।
"পানি
সবার জন্য জীবন। কিন্ত দূষিত পানি সবার জন্য মরণ। সম্যকদৃষ্টি সবার জন্য সব সময় মঙ্গল।
কিন্তু মিথ্যাদৃষ্টি সবার জন্য সবসময় অমঙ্গল।"
মূল লেখক- ভিক্খু- পঞ্ঞাদীপ, রাঙ্গামাটি।
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।