“ভন্তে নাগসেন! আপনারা বলিয়া থাকেন‘তথাগতের যাহা কিছু করণীয় ছিল তাহা বোধিমূলেই পরিসমাপ্ত হইয়াছে। তাঁহার আর উত্তর করণীয় নাই কিংবা যাহা করা হইয়াছে উহার প্রতিচয় বা সংস্করণ নাই।’ সঙ্গে সঙ্গে ইহাও বলিয়া থাকেন যে তিন মাসাবধি তাঁহাকে ধ্যানমগ্ন দেখা যায়।
ভন্তে! যদি তথাগত বোধিবৃক্ষের মূলে সমস্ত কর্তব্য সমাপ্ত করিয়া থাকেন তাহা হইলে এই কথা মিথ্যা যে তিন মাসাবধি তিনি সমাধিতে নিমগ্ন ছিলেন। আর যদি ভগবান যথার্থই তিন মাসাবধি সমাধিতে নিমগ্ন ছিলেন তাহা হইলে এই কথা মিথ্যা যে, বোধিবৃক্ষের মূলেই তিনি সমস্ত কর্তব্য সমাপ্ত করিয়াছেন। কেননা, যাঁহার কর্তব্য শেষ হইয়াছে তাঁহার সমাধির প্রয়োজন নাই। যাঁহার কর্তব্য শেষ হয় নাই তাঁহারই সমাধির প্রয়োজন।
ভন্তে! যে রোগী তাহারই ঔষধের প্রয়োজন, স্বাস্থ্যবানের ঔষধের কি প্রয়োজন? ক্ষুধার্তের জন্যই ভোজনের প্রয়োজন, যহার উদর পূর্ণ খাদ্য তাহার কি প্রয়োজন?
ভন্তে! এইরূপে যিনি আপনার সমস্ত কর্তব্য সমাপ্ত করিয়াছেন তাঁহার সমাধি প্রয়োজন নাই। যাঁহার কর্তব্য অবশিষ্ট আছে কেবল তাঁহারাই সমাধির প্রয়োজন হইতে পারে। ইহাও উভয়কোটিক প্রশ্ন আপনার সম্মুখে উপস্থাপিত হইয়াছে। অনুগ্রহ পূর্বক আপনি ইহার সমাধান করুন।”
“মহারাজ! সেই দুই বিষয়ই সত্য যে বোধিবৃক্ষের মূলে তথাগত আপনার সমস্ত কর্তব্য সমাপ্ত করিয়াছেন। তাঁহার তদুত্তর আর করণীয় নাই এবং যাহা সমাপ্ত করিয়াছেন তাহার প্রতিচয় বা সংস্করণও নাই। অপর পক্ষে তিন মাসাবধি তিনি সমাধিনিমগ্নও ছিলেন।
মহারাজ! সমাধিনিমগ্নের বহু গুণ। সমস্ত তথাগত সমাধি নিমগ্ন হইয়া সবর্জ্ঞতা প্রাপ্ত হইয়াছেন। তাঁহারা (বুদ্ধত্ব লাভের পরেও) সমাধির সুকৃত-গুণ অনুসরণ করিয়া ইহার সেবা করিয়া থাকেন।
মহারাজ! যেমন কোন লোক রাজার সেবা করিয়া তাঁহার নিকট হইতে বর ও সম্পত্তি লাভ করে। সে সেই সকৃত গুণ স্মরণ করিয়া উপর্যুপরি রাজার পরিচর্যা করিয়া থাকেন। সেইরূপ সকল তথাগত---- থাকেন। অথবা যেমন কোন রোগী সাংঘাতিক রোগাতুর ও দুঃখিত হইয়া চিকিৎসকের সান্নিধ্যে যাইয়া সুস্থ হয়। অতঃপর সে সুকৃত-গুণ স্মরণ করিয়া (প্রয়োজন বোধে) অন্যান্য চিকিৎসকের সান্নিধ্যে যাইয়া থাকে।
মহারাজ! সেইরূপ সকল বুদ্ধ সমাহিত হইয়া সর্বজ্ঞতা প্রাপ্ত হন। তাঁহারা সেই সুকৃত-গুণ স্মরণ করিয়া সমাধির সেবা করিয়া থাকেন।
মহারাজ! সমাধির অষ্টবিংশতি প্রকার গুণ আছে, যাহাদিগকে স্মরণ করিয়া বুদ্ধগণ সমাধির সেবা করেন। সেই অষ্টবিংশতি গুণ কি কি? মহারাজ!
সমাধি সমাধি পরায়ণকে রক্ষা করে, আয়ু বৃদ্ধি করে, বলবান করে, দোষ পরিহার করে, অযশ অপনয়ন করে, যশ আনয়ন করে, অরতি দ্রুর করে, রতি উৎপাদন করে, ভয় অপনোদন করে, বৈশারদ্য উৎপাদন করে, আলস্য দ্রুরীভূত করে, বীর্য উৎপাদন করে। রাগ, দ্বেষ, মোহ অপনীত করে, অভিমান নষ্ট করে, বির্তক ভঙ্গ করে, চিত্তকে একাগ্র করে, মনকে স্নেহযুক্ত করে, কর্ষ উৎপাদন করে, সম্ভ্রান্ত করে, লাভ উৎপাদন করে, নমস্য করে, প্রীতি লাভ করায়, প্রমোদ উৎপন্ন করে, সংস্কার সমূহের স্বভাব প্রদর্শন করে, ভবপ্রতিসন্ধি উদ্ঘাটিত করে এবং সর্ববিধ শ্রামণ্য ফল আহরণ করে।
মহারাজ! সমাধির এই অষ্টবিংশতি গুণ, যাহা স্মরণ করিয়া বুদ্ধগণ সমাধির সেবা করেন। ইহা ছাড়া মহারাজ! শান্তি, সুখ ও সমাপত্তির আনন্দ অনুভব করিবার ইচ্ছায় পরিপূর্ণ সংঙ্কল্প তথাগতগণ ধ্যান নিমগ্নতা সেবন করেন।
মহারাজ! চারি কারণে বুদ্ধগণ সমাধি পরায়ণ হন। সেই চারি প্রকার কি? সুখ বিহরণের জন্য বুদ্ধগণ ধ্যানপরায়ণ হন। অনবধ্য গুণ বাহুল্যের জন্য বুদ্ধগণ ধ্যানপরায়ণ হন। অশেষ আর্যমার্গ হিসাবেও বুদ্ধগণ ইহা সেবন করেন এবং সর্ববুদ্ধগণের দ্বারা ইহা স্তুত, প্রশংসিত, বর্ণিত এবং প্রসংশিত বলিয়াই তথাগতগণ ইহা সেবন করেন।
মহারাজ! এই চারি কারণে তথাগতগণ ধ্যানপরায়ণ হন।
মহারাজ! এই কারণেই তথাগতগণ ধ্যাননিমগ্ন হন, করণীয় অবশিষ্ট আছে বলিয়া নহে, কিংবা যাহা করিয়াছেন তাহার সংস্কারের জন্যও নহে। সমাধির বিশেষ গুণ প্রদর্শনের নিমিত্তই তথাগতগণ ধ্যানপরায়ণ হন।”
আমাদের কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা আপনার কমেন্ট পড়া মাত্র প্রতিক্রিয়া জানাতে চেষ্টা করবো।